Sylhet ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের আশুগঞ্জ এলাকা ধুলার রাজ্যে

সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার মহাসড়ক ফোরলেনে উন্নীতকরণ কাজ চলছে। ২০১৭ সালে প্রকল্পটির অনুমোদন পেলেও এর কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

৫১ কিলোমিটার মহাসড়কটি ফোরলেনে উন্নীতকরনে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭’শ ৯১ কোটি টাকা। কিন্তু নির্মাণ কাজের ধীর গতির কারণে মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনের যাত্রীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। পুরো মহাসড়কটি পরিণত হয়েছে ধুলার রাজ্যে। আগামী ঈদ-উল ফিতরকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এতে করে যাত্রীরা পরেছে বিপাকে। যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা চলমান এই অবস্থা থেকে উত্তরনে দ্রæত কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত নির্মাণাধীন সড়কটির দৈর্ঘ্য ৫১ কিলোমিটার। ঈদ-উল ফিতরের আগে ওই সড়কের এক পাশের দুই লেনের ২৭ কিলোমিটার অংশ যান চলাচালের জন্য পুরোপুরি খুলে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই কিছু কিছু অংশ খুলে দেয়া হয়েছে। তবে ২৭ কিলোমিটার খুলে দিলেও এর মধ্যে দুই-তিন কিলোমিটার অংশে যাত্রীদের কিছু ভোগান্তি হবে। তবে সেই ভোগান্তি লাঘবেও পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আশুগঞ্জ নৌবন্দর-বিশ্বরোড-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত হচ্ছে। এর মধ্যে আশুগঞ্জ থেকে ধরখার পর্যন্ত সড়কের বেশিরভাগ অংশে দুই লেনের কাজ শেষ হয়েছে। আর যেসব অংশ শেষ হয়নি সেখানে যান চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে বেতবাড়িয়া, সুহিলপুর, ঘাটুরা, কাউতলী, রামরাইল, রাধিকা, সুলতানপুর, পঞ্চবটি, আহরন্দ, মহিউদ্দিননগর এলাকায় পুরোনো সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উজানিসার থেকে আহরন্দ পর্যন্ত। এছাড়া ওই সড়কের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দের পাশাপাশি ধূলার যন্ত্রনায় চালক ও যাত্রীরা অতিষ্ট। ধূলা উড়ে মহাসড়কে কুয়াশার মতো পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই পথে চলাচলকারী যাত্রীরা ধূলাবালির কারনে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছেন।

সদর উপজেলার সুহিলপুর গ্রামের বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, উন্নয়ন কাজ হবে ভালো কথা, তবে এতো দীর্ঘ সময় ধরে কেন? আমরা এই ধূলাবালিতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। আমাদের এলাকার মানুষ ধূলার কারনে জ্বর, সর্দি এমনি শ্বাস-নিঃশ্বাসের সমস্যায় ভুগছে। আমরা এই ধূলাবালি থেকে পরিত্রাণ চাই।

শহরের পাইকপাড়ার বাসিন্দা ঝটিন সাহা বলেন, তিনি প্রতিদিন অফিসের কাজে মোটর সাইকেলে করে বাসা থেকে বিশ্বরোড যাতায়ত করেন। এই রাস্তাকে মনে হয় এটা কোন রাস্তা নয়, যেনো ধূলার রাজ্য। এই ধূলাবালির কারনে জ্বর, কাশি প্রায় সময়ই লেগে থাকে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই কষ্ট থেকে আমরা মুক্তি চাই।

স্কুলশিক্ষিকা রত্না বেগম বলেন, প্রতিদিন জেলা সদর থেকে তিনি নন্দনপুরে স্কুলে যাতায়ত করেন। রাস্তার কাজের জন্য প্রায় সময় ঘাটুরা ও সুহিলপুর এলাকায় প্রচন্ড জ্যামে আটকে থাকি। অনেক সময় সময় মতো স্কুলে যেতে পারিনা। জ্যামের সাথে ধূলাবালিতে আমরা অতিষ্ঠ।

সিএনজিচালিত অটোরিকসা চালক রাজিব রহমান বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে গত কয়েক বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছি। যেমন সড়ক খারাপ, তেমনি ধূলার জন্য কষ্ট গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়। যাত্রীরা যেমন ভোগান্তিতে পড়েন, তেমনিভাবে সড়কের আশেপাশের বাসিন্দাদেরও ভোগান্তির শেষ নাই।

সিলেটগামী বিআরটিসি বাসচালক মো. কবির হোসেন বলেন, এই রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। ফোরলেন কাজের জন্য রাস্তায় ধূলা উড়ে। ভাঙ্গা রাস্তা ও ধূলার জন্য গাড়ির ক্ষতি হচ্ছে। সময়ও লাগে অনেক বেশি।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ,ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়কটি এখন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের আওতায়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা ভালো বলতে পারবেন।

এ ব্যাপারে চার লেন সড়কের উপ-প্রকল্প পরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, যে সমস্ত জায়গা কার্পেটিং করা হয়েছে সে সব জায়গায় ধূলা নেই। যে সমস্ত জায়গা এখনো কার্পেটিং হয়নি সে সমস্ত জায়গায় নিয়মিত পানি দিয়ে ধূলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ঠিকাদারকে বলে দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে আমাদের কিছু পরিকল্পনা আছে। রামরাইল এলাকায় পুরোনো সড়কে যেখানে বেশি ভাঙা সেটির একপাশে নতুন সড়কের এক অংশ হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে সেটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। বিশ্বরোডের কাছে নতুন সড়কের একাংশের যেটুকু বাকি আছে সেটিরও পিচ ঢালাই কাজ দু’একদিনের মধ্যে শুরু করলে ঈদের আগে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে। তবে আহরন্দ এলাকায় যে এক দুই কিলোমিটার অংশ খারাপ অবস্থায় আছে সেটিতে কিছু ভোগান্তি হবে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জগন্নাথপুর যুব জমিয়তের নবনির্বাচিত কমিটির পরিচিতি শপথ অনুষ্ঠিত

সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের আশুগঞ্জ এলাকা ধুলার রাজ্যে

প্রকাশের সময় : ০১:৪৭:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার মহাসড়ক ফোরলেনে উন্নীতকরণ কাজ চলছে। ২০১৭ সালে প্রকল্পটির অনুমোদন পেলেও এর কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

৫১ কিলোমিটার মহাসড়কটি ফোরলেনে উন্নীতকরনে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭’শ ৯১ কোটি টাকা। কিন্তু নির্মাণ কাজের ধীর গতির কারণে মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনের যাত্রীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। পুরো মহাসড়কটি পরিণত হয়েছে ধুলার রাজ্যে। আগামী ঈদ-উল ফিতরকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এতে করে যাত্রীরা পরেছে বিপাকে। যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা চলমান এই অবস্থা থেকে উত্তরনে দ্রæত কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত নির্মাণাধীন সড়কটির দৈর্ঘ্য ৫১ কিলোমিটার। ঈদ-উল ফিতরের আগে ওই সড়কের এক পাশের দুই লেনের ২৭ কিলোমিটার অংশ যান চলাচালের জন্য পুরোপুরি খুলে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই কিছু কিছু অংশ খুলে দেয়া হয়েছে। তবে ২৭ কিলোমিটার খুলে দিলেও এর মধ্যে দুই-তিন কিলোমিটার অংশে যাত্রীদের কিছু ভোগান্তি হবে। তবে সেই ভোগান্তি লাঘবেও পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আশুগঞ্জ নৌবন্দর-বিশ্বরোড-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত হচ্ছে। এর মধ্যে আশুগঞ্জ থেকে ধরখার পর্যন্ত সড়কের বেশিরভাগ অংশে দুই লেনের কাজ শেষ হয়েছে। আর যেসব অংশ শেষ হয়নি সেখানে যান চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে বেতবাড়িয়া, সুহিলপুর, ঘাটুরা, কাউতলী, রামরাইল, রাধিকা, সুলতানপুর, পঞ্চবটি, আহরন্দ, মহিউদ্দিননগর এলাকায় পুরোনো সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উজানিসার থেকে আহরন্দ পর্যন্ত। এছাড়া ওই সড়কের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দের পাশাপাশি ধূলার যন্ত্রনায় চালক ও যাত্রীরা অতিষ্ট। ধূলা উড়ে মহাসড়কে কুয়াশার মতো পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই পথে চলাচলকারী যাত্রীরা ধূলাবালির কারনে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছেন।

সদর উপজেলার সুহিলপুর গ্রামের বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, উন্নয়ন কাজ হবে ভালো কথা, তবে এতো দীর্ঘ সময় ধরে কেন? আমরা এই ধূলাবালিতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। আমাদের এলাকার মানুষ ধূলার কারনে জ্বর, সর্দি এমনি শ্বাস-নিঃশ্বাসের সমস্যায় ভুগছে। আমরা এই ধূলাবালি থেকে পরিত্রাণ চাই।

শহরের পাইকপাড়ার বাসিন্দা ঝটিন সাহা বলেন, তিনি প্রতিদিন অফিসের কাজে মোটর সাইকেলে করে বাসা থেকে বিশ্বরোড যাতায়ত করেন। এই রাস্তাকে মনে হয় এটা কোন রাস্তা নয়, যেনো ধূলার রাজ্য। এই ধূলাবালির কারনে জ্বর, কাশি প্রায় সময়ই লেগে থাকে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই কষ্ট থেকে আমরা মুক্তি চাই।

স্কুলশিক্ষিকা রত্না বেগম বলেন, প্রতিদিন জেলা সদর থেকে তিনি নন্দনপুরে স্কুলে যাতায়ত করেন। রাস্তার কাজের জন্য প্রায় সময় ঘাটুরা ও সুহিলপুর এলাকায় প্রচন্ড জ্যামে আটকে থাকি। অনেক সময় সময় মতো স্কুলে যেতে পারিনা। জ্যামের সাথে ধূলাবালিতে আমরা অতিষ্ঠ।

সিএনজিচালিত অটোরিকসা চালক রাজিব রহমান বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে গত কয়েক বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছি। যেমন সড়ক খারাপ, তেমনি ধূলার জন্য কষ্ট গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়। যাত্রীরা যেমন ভোগান্তিতে পড়েন, তেমনিভাবে সড়কের আশেপাশের বাসিন্দাদেরও ভোগান্তির শেষ নাই।

সিলেটগামী বিআরটিসি বাসচালক মো. কবির হোসেন বলেন, এই রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। ফোরলেন কাজের জন্য রাস্তায় ধূলা উড়ে। ভাঙ্গা রাস্তা ও ধূলার জন্য গাড়ির ক্ষতি হচ্ছে। সময়ও লাগে অনেক বেশি।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ,ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়কটি এখন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের আওতায়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা ভালো বলতে পারবেন।

এ ব্যাপারে চার লেন সড়কের উপ-প্রকল্প পরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, যে সমস্ত জায়গা কার্পেটিং করা হয়েছে সে সব জায়গায় ধূলা নেই। যে সমস্ত জায়গা এখনো কার্পেটিং হয়নি সে সমস্ত জায়গায় নিয়মিত পানি দিয়ে ধূলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ঠিকাদারকে বলে দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে আমাদের কিছু পরিকল্পনা আছে। রামরাইল এলাকায় পুরোনো সড়কে যেখানে বেশি ভাঙা সেটির একপাশে নতুন সড়কের এক অংশ হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে সেটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। বিশ্বরোডের কাছে নতুন সড়কের একাংশের যেটুকু বাকি আছে সেটিরও পিচ ঢালাই কাজ দু’একদিনের মধ্যে শুরু করলে ঈদের আগে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে। তবে আহরন্দ এলাকায় যে এক দুই কিলোমিটার অংশ খারাপ অবস্থায় আছে সেটিতে কিছু ভোগান্তি হবে।