বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পরিচালক মো. এয়াকুব আলী ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে শাস্তি হিসেবে এক বছরের জন্য বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়। এরপর দিনই তাকে পদায়ন করা হয় বিটিআরসির অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগে। এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বিটিআরসির অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী জারিকৃত আদেশটি বাতিল করার জন্য বিটিআরসির চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছেন।
জানা যায়, ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ বিটিআরসির অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী একই বিভাগের পরিচালক এয়াকুব আলী ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় মামলা (১৯/২০২৩) ও পরে তদন্ত হয়। তদন্তে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ফলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা-২০২২ এর বিধি ৪৯ (১) এর ‘ক’ ধারার (আ) অনুযায়ী, পরবর্তী এক বছরের জন্য তার বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিতের আদেশ দেওয়া হয়। গত ৫ মার্চ এয়াকুবের লঘুদণ্ডের অফিস আদেশ জারি করে বিটিআরসি। কিন্তু পরদিন ৬ মার্চ তাকে পূর্বের বিভাগে স্বপদে বহালেরও অফিস আদেশ জারি করে কমিশন। এমন সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এদিকে, অফিস আদেশ জারির পর গত ১০ মার্চ অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের পরিবর্তে সরাসরি বিটিআরসি চেয়ারম্যান বরাবর নিজের যোগদান পত্র জমা দেন এয়াকুব। অন্যদিকে একই দিন এয়াকুবের যোগদানের আদেশ বাতিলের জন্য চিঠি দেন কমিশনার ড. মুশফিক। বিষয়টি বিটিআরসি চেয়ারম্যানকেও লিখিতভাবে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিআরসির একটি সূত্র বলছে, কমিশনারকে নিজের ক্ষমতা দেখাতে একই পদে পদায়ন নিয়েছেন পরিচালক এয়াকুব আলী। যদিও দ্বন্দ্বের বিষয়টি নাকচ করেছে বিটিআরসি।
কমিশনের মুখপাত্র ও সচিব মো. নূরুল হাফিজ বলেন, কমিশনে লোকবলের সংকট আছে। আর সেই পরিচালক দীর্ঘদিন অর্থ বিভাগে কাজ করেছেন। এজন্যই তাকে আবারও ওই পদ দেওয়া হয়েছে। তিনি যদি ফের কোনো অসদাচরণ বা অনিয়ম করেন, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।
এ বিষয়ে কমিশনার ড. মুশফিক মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পদায়ন সু-প্রশাসনে বাধা হতে পারে। কর্ম পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া বলেন, ঘটনাক্রম বলছে আগে থেকেই এখানে তিক্ততা ছিল। ফলে স্বাভাবিক দাপ্তরিক কার্যক্রমও ব্যাহত হতে পারে। আইনগতভাবে এমন পদায়নে বাধা না থাকলেও, জনস্বার্থে এবং নৈতিকতার দিক থেকে এমন অনুশীলনা করা উচিত নয়।