Sylhet ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দোয়ারাবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ ঠিকাদারের খামখেয়ালীপনায় ছয় বছরেও শেষ হয়নি!

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষার প্রথম এবং একমাত্র বিদ্যাপীঠ দোয়ারাবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ। ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সাইডিং ঘাট সংলগ্ন হিজলতলায় ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার নির্ধারিত সময়সীমা ছিলো (৫৪০ দিন) দেড় বছর। কিন্তু কাজ শুরুর ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনোব্দি নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। ধীর গতিতে নির্মাণ কাজের ফলে পাঠদান কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটছে। এতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তর ও ঠিকাদারের টালবাহানায় দেড় বছরের কাজ ছয় বছরেও শেষ হয়নি। কবে নাগাদ এই কাজ শেষ হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
জানা যায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ১৫ কোটি ৪৭ লাখ ৪৬ হাজার ৬২৮ টাকা বরাদ্দে দোয়ারাবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের পাঁচতলা একাডেমিক কাম চারতলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের সাথে ওয়ার্কশপ ও একতলা সার্ভিস এড়িয়াসহ পয়ঃনিষ্কাসন, বিদ্যুতায়ন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের ব্যবস্থাকরণ, বাউন্ডারি ওয়াল, অভ্যন্তরীন রাস্তা এবং গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ যৌথভাবে পায় ময়মনসিংহের মেসার্স ভাওয়াল কন্সট্রাকশন ওয়েস্টার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং (প্রা. লি.) এবং ঢাকার গুলশান নিকেতন এলাকার এম. এম. বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই দুইটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চুক্তিতে লাইসেন্স এনে কাজ করছেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা , জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ঠিকাদার মাহতাবুল হাসান সমুজ।
দোয়ারা সদর ইউনিয়নের লামাসানিয়া গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী বলেন, ‘সময়মতো কাজ সম্পন্ন হলে আরো চার বছর আগে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা যেতো। কাজের ধীর গতি হওয়ায় আমাদের উপজেলার শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানাই।’
সুরমা ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মানের কাজ করতেই যদি ছয় বছর লাগে তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম কিভাবে শুরু হবে? এখানে ঠিকাদারের গাফিলতি আছে। প্রশাসনেরও তদারকির অভাব আছে।’
দোয়ারাবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী এ. এস. এম. নাঈম বলেন, ‘আমি যোগদানের পর গত জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয় একাডেমিক কার্যক্রম। নির্মাণ কাজ আরো আগে শেষ করা গেলে আরো আগেই একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা যেতো। কাজ শেষ না হওয়ায় আমাদের শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে। অফিস রুমও স্থানান্তর করা যাচ্ছেনা। কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি।’
নির্মাণ কাজের ধীরগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদার মাহতাবুল হাসান সমুজ বলেন, ‘জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কাজ পিছিয়ে গেছে। এখন কাজ প্রায় শেষের পথে। একমাসের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি সুনামগঞ্জে যোগদান পর থেকে দেড় বছর ধরে দোয়ারাবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের কাজে গতি পেয়েছে। এর আগে শুনেছি বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। আমি যোগদান করেই এই কাজটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ দিয়েছি। আমি আশাবাদী দুয়েক মাসের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে।’

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sylhet Vision

জনপ্রিয় সংবাদ

দোয়ারাবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ ঠিকাদারের খামখেয়ালীপনায় ছয় বছরেও শেষ হয়নি!

প্রকাশের সময় : ০৬:৪২:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষার প্রথম এবং একমাত্র বিদ্যাপীঠ দোয়ারাবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ। ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সাইডিং ঘাট সংলগ্ন হিজলতলায় ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার নির্ধারিত সময়সীমা ছিলো (৫৪০ দিন) দেড় বছর। কিন্তু কাজ শুরুর ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনোব্দি নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। ধীর গতিতে নির্মাণ কাজের ফলে পাঠদান কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটছে। এতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তর ও ঠিকাদারের টালবাহানায় দেড় বছরের কাজ ছয় বছরেও শেষ হয়নি। কবে নাগাদ এই কাজ শেষ হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
জানা যায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ১৫ কোটি ৪৭ লাখ ৪৬ হাজার ৬২৮ টাকা বরাদ্দে দোয়ারাবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের পাঁচতলা একাডেমিক কাম চারতলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের সাথে ওয়ার্কশপ ও একতলা সার্ভিস এড়িয়াসহ পয়ঃনিষ্কাসন, বিদ্যুতায়ন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের ব্যবস্থাকরণ, বাউন্ডারি ওয়াল, অভ্যন্তরীন রাস্তা এবং গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ যৌথভাবে পায় ময়মনসিংহের মেসার্স ভাওয়াল কন্সট্রাকশন ওয়েস্টার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং (প্রা. লি.) এবং ঢাকার গুলশান নিকেতন এলাকার এম. এম. বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই দুইটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চুক্তিতে লাইসেন্স এনে কাজ করছেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা , জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ঠিকাদার মাহতাবুল হাসান সমুজ।
দোয়ারা সদর ইউনিয়নের লামাসানিয়া গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী বলেন, ‘সময়মতো কাজ সম্পন্ন হলে আরো চার বছর আগে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা যেতো। কাজের ধীর গতি হওয়ায় আমাদের উপজেলার শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানাই।’
সুরমা ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মানের কাজ করতেই যদি ছয় বছর লাগে তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম কিভাবে শুরু হবে? এখানে ঠিকাদারের গাফিলতি আছে। প্রশাসনেরও তদারকির অভাব আছে।’
দোয়ারাবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী এ. এস. এম. নাঈম বলেন, ‘আমি যোগদানের পর গত জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয় একাডেমিক কার্যক্রম। নির্মাণ কাজ আরো আগে শেষ করা গেলে আরো আগেই একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা যেতো। কাজ শেষ না হওয়ায় আমাদের শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে। অফিস রুমও স্থানান্তর করা যাচ্ছেনা। কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি।’
নির্মাণ কাজের ধীরগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদার মাহতাবুল হাসান সমুজ বলেন, ‘জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কাজ পিছিয়ে গেছে। এখন কাজ প্রায় শেষের পথে। একমাসের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি সুনামগঞ্জে যোগদান পর থেকে দেড় বছর ধরে দোয়ারাবাজার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের কাজে গতি পেয়েছে। এর আগে শুনেছি বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। আমি যোগদান করেই এই কাজটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ দিয়েছি। আমি আশাবাদী দুয়েক মাসের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে।’