Sylhet ০১:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেট ওসমানীতে বিনামূল্যে ব্যয়বহুল চিকিৎসার দ্বার উন্মোচন করলো মুনটাডা এইড চ্যারিটি

 সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালে জন্মগত হার্টে ছিদ্র শিশুদের চিকিৎসায় উন্মোচন হলো নতুন দ্বার। ইউকে ভিত্তিক চ্যারিটি সংগঠন মুনটাডা এইড এর অর্থায়নে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন শিশুরোগীর হার্টে ডিভাইস স্থাপন করে থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু হয়। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সিলেট অঞ্চলের দরিদ্র রোগীদের ব্যয়বহুল এ চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেখছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিনামূল্যে এমন ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা পেয়ে আপ্লুত রোগীর স্বজনরা।

জন্মগত হার্টে ছিদ্র নিয়ে রোগীরা আর দশজনের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। জীবনের প্রতিটি মূহুতই তাদের কাটে অজানা এক আতঙ্কে। যথাযথ চিকিৎসা না পেলে কৈশোরেই ঘটে তাদের পরিসমাপ্তি। থমকে যায় সম্ভাবনাময় একেকটি জীবন। ব্যয়বহুল এ চিকিৎসার খরচ করতে গিয়ে অনেক দরিদ্র পরিবার সর্বস্ব হারান। বিনা চিকিৎসায়ও মারা যান অনেকে। এবার ব্রিটেনভিত্তিক চ্যারিটি সংগঠন মুনটাডা’র অর্থায়নে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দরিদ্র শিশুদের হার্টের ছিদ্র বন্ধ করার কার্যক্রম শুরু করেছে। শনিবার ৩০ নভেম্বর ঢাকা থেকে আসে ১০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ টিম, মুনটাডা চ্যারিটির টিমের উপস্থিতিতে হাসপাতালের ক্যাথল্যাবে শিশুদের ডিভাইস থেরাপি শুরু হয়। প্রথমদিনে ৩ শিশুর হার্টের ছিদ্রে কোনোধরণের কাটাছেড়া ছাড়াই ডিভাইস স্থাপন করে। প্রথম ডিভাইস স্থাপন শেষে রোগীদের অবস্থা আশাব্যঞ্জক বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষণকারী ডাক্তার।অর্থায়নকারী মুনটাডা চ্যারিটির সিইও মি, দাঈফ জানান, ব্যয়বহুল এ চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে আমরা বদ্ধপরিবর। চেষ্টা করছি যাতে সিলেটের দরিদ্র রোগীরা ঢাকা বা দেশের বাইরে যেতে না হয়।

 

চ্যারিটির সমন্বয়ক আশরাফুল ইসলাম জানান সারাবিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এ ধরণের ৫০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে মুনটাডা এইড।সময়মতো শিশুদের হার্টের ছিদ্র বন্ধ করা না গেলে চিকিৎসায় সুফল আসে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মুনটাডা চ্যারিটির অর্থায়নে ঢাকায় ডাক্তাররা প্রশিক্ষিত হয়েছেন, এ ধারাবাহিকতায় সিলেটেও টিম ভিত্তিক সংশ্লিষ্টরা প্রশিক্ষিত হয়ে কাজ চলমান রাখবেন।

চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগির মাতা জানান, গত তিন মাস থেকে যোগাযোগ করে আমি চিকিৎসা নিতে আসছি আলহামদুলিল্লাহ আজ ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে ব্যায় বহুল এই চিকিৎসা ফ্রী নিতে পেরে আমি আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ। আরেক অবিভাবক জানান, বাহিরে এ চিকিৎসা নেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব বিনামূল্যে পেয়ে আমি আনন্দিত। দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম স্থায়ী রূপ পাবে-এমনটাই প্রত্যাশা সিলেটবাসীর।

এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল এর কার্ডিওলজী বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মখলিছুর রহমান বলেন, আমরা বচ্চাদের  হৃদরোগের চিকিৎসার নতুন ডায়মন্ডশনে প্রবেশ করেছি এই চিকিৎসা শুরু করার ক্ষেত্রে সাহায্যে হাত বাড়িয়েছে মুনটাডা এইড চ্যারিটির পাশাপাশি বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ঢাকা, ও ওসমানী মেডিক্যাল এর শিশু বিভাগ এবং শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ। তিনি বলেন আশাকরি আমরা এটা কন্টিনিউ করবো।

 

ঢাকা শিশু হাসপাতাল এর কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. রেজওয়ানা রিমা বলেন, মুনটাডা এইড চ্যারিটি ইউকের একটি সংগঠন এটি একটি এনজিও তবে তাদের মূল সিলেটে। গত বৎসর ও তারা আমাদের মাধ্যমে ৩৬ জন শিশু রুগীকে ঢাকায় এই সেবা দিয়েছে। তখনি তারা এই প্রোগ্রামটি সংগঠনের অর্থায়নে সিলেটে চালু করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সেখান থেকেই উদ্ভুদ্ধ হয়ে সিলেটে টিম ওয়ার্ক করে চিকিৎসা শুরু করা হয়। তিনি বলেন আমরা ১০ জনের একটা টিম সিলেটে আসছি মেডিক্যাল এর সংশ্লিষ্ট বিভাগের টিম কে প্রশিক্ষণ দেবো আশাবাদী আগামীতে সিলেটেও এই চিকিৎসা বেগবান হবে।

হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সোয়াইব আহমদ জানান, সিলেটে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে পরিক্ষা করে শুধু রোগি নির্ণয় করতে পারতাম এমন চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিলোনা তাই রুগীদের নিয়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন দেশে যাওয়া লাগতো। এ চিকিৎসা সিলেটে সরকারি ভাবে দেওয়া গেলে আমাদের দেশকে এগিয়ে নেওয়ায় ভুমিকা রাখতো।

সিলেটে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আশাবাদ জানিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন একটি ক্যাথল্যাব হলে এ কার্যক্রমে আরো গতি আসবে।

 

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল উমর রাশেদ মুনির বলেন, শিশুদের হ্রদ রোগের চিকিৎসাটা যেনো ঢাকায় না যেতে হয় এবং সিলেটেই আমরা যত্নের সাথে চিকিৎসাটা করতে পারি এটাই আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন আমাদের ক্যাথল্যাব মেশিনটা অনেক পুরনো হয়ে গেছে চিকিৎসাতে বিগ্ন ঘটায় ইতিমধ্যে আমরা আবেদন করেছি এবং প্রক্রিয়াধীন আশাকরি শিগগিরই পেয়ে যাবো। নতুন ক্যাথল্যাব মেশিনটা পেয়ে গেলে আমরা আমাদের চিকিৎসা সেবা আরও বেগবান করতে পারবো।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sylhet Vision

জনপ্রিয় সংবাদ

শান্তিগঞ্জে এম এ মান্নান প্রাথমিক মেধা বৃত্তি পরীক্ষার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত

সিলেট ওসমানীতে বিনামূল্যে ব্যয়বহুল চিকিৎসার দ্বার উন্মোচন করলো মুনটাডা এইড চ্যারিটি

প্রকাশের সময় : ০৪:০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪

 সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালে জন্মগত হার্টে ছিদ্র শিশুদের চিকিৎসায় উন্মোচন হলো নতুন দ্বার। ইউকে ভিত্তিক চ্যারিটি সংগঠন মুনটাডা এইড এর অর্থায়নে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন শিশুরোগীর হার্টে ডিভাইস স্থাপন করে থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু হয়। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সিলেট অঞ্চলের দরিদ্র রোগীদের ব্যয়বহুল এ চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেখছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিনামূল্যে এমন ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা পেয়ে আপ্লুত রোগীর স্বজনরা।

জন্মগত হার্টে ছিদ্র নিয়ে রোগীরা আর দশজনের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। জীবনের প্রতিটি মূহুতই তাদের কাটে অজানা এক আতঙ্কে। যথাযথ চিকিৎসা না পেলে কৈশোরেই ঘটে তাদের পরিসমাপ্তি। থমকে যায় সম্ভাবনাময় একেকটি জীবন। ব্যয়বহুল এ চিকিৎসার খরচ করতে গিয়ে অনেক দরিদ্র পরিবার সর্বস্ব হারান। বিনা চিকিৎসায়ও মারা যান অনেকে। এবার ব্রিটেনভিত্তিক চ্যারিটি সংগঠন মুনটাডা’র অর্থায়নে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দরিদ্র শিশুদের হার্টের ছিদ্র বন্ধ করার কার্যক্রম শুরু করেছে। শনিবার ৩০ নভেম্বর ঢাকা থেকে আসে ১০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ টিম, মুনটাডা চ্যারিটির টিমের উপস্থিতিতে হাসপাতালের ক্যাথল্যাবে শিশুদের ডিভাইস থেরাপি শুরু হয়। প্রথমদিনে ৩ শিশুর হার্টের ছিদ্রে কোনোধরণের কাটাছেড়া ছাড়াই ডিভাইস স্থাপন করে। প্রথম ডিভাইস স্থাপন শেষে রোগীদের অবস্থা আশাব্যঞ্জক বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষণকারী ডাক্তার।অর্থায়নকারী মুনটাডা চ্যারিটির সিইও মি, দাঈফ জানান, ব্যয়বহুল এ চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে আমরা বদ্ধপরিবর। চেষ্টা করছি যাতে সিলেটের দরিদ্র রোগীরা ঢাকা বা দেশের বাইরে যেতে না হয়।

 

চ্যারিটির সমন্বয়ক আশরাফুল ইসলাম জানান সারাবিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এ ধরণের ৫০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে মুনটাডা এইড।সময়মতো শিশুদের হার্টের ছিদ্র বন্ধ করা না গেলে চিকিৎসায় সুফল আসে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মুনটাডা চ্যারিটির অর্থায়নে ঢাকায় ডাক্তাররা প্রশিক্ষিত হয়েছেন, এ ধারাবাহিকতায় সিলেটেও টিম ভিত্তিক সংশ্লিষ্টরা প্রশিক্ষিত হয়ে কাজ চলমান রাখবেন।

চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগির মাতা জানান, গত তিন মাস থেকে যোগাযোগ করে আমি চিকিৎসা নিতে আসছি আলহামদুলিল্লাহ আজ ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে ব্যায় বহুল এই চিকিৎসা ফ্রী নিতে পেরে আমি আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ। আরেক অবিভাবক জানান, বাহিরে এ চিকিৎসা নেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব বিনামূল্যে পেয়ে আমি আনন্দিত। দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম স্থায়ী রূপ পাবে-এমনটাই প্রত্যাশা সিলেটবাসীর।

এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল এর কার্ডিওলজী বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মখলিছুর রহমান বলেন, আমরা বচ্চাদের  হৃদরোগের চিকিৎসার নতুন ডায়মন্ডশনে প্রবেশ করেছি এই চিকিৎসা শুরু করার ক্ষেত্রে সাহায্যে হাত বাড়িয়েছে মুনটাডা এইড চ্যারিটির পাশাপাশি বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ঢাকা, ও ওসমানী মেডিক্যাল এর শিশু বিভাগ এবং শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ। তিনি বলেন আশাকরি আমরা এটা কন্টিনিউ করবো।

 

ঢাকা শিশু হাসপাতাল এর কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. রেজওয়ানা রিমা বলেন, মুনটাডা এইড চ্যারিটি ইউকের একটি সংগঠন এটি একটি এনজিও তবে তাদের মূল সিলেটে। গত বৎসর ও তারা আমাদের মাধ্যমে ৩৬ জন শিশু রুগীকে ঢাকায় এই সেবা দিয়েছে। তখনি তারা এই প্রোগ্রামটি সংগঠনের অর্থায়নে সিলেটে চালু করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সেখান থেকেই উদ্ভুদ্ধ হয়ে সিলেটে টিম ওয়ার্ক করে চিকিৎসা শুরু করা হয়। তিনি বলেন আমরা ১০ জনের একটা টিম সিলেটে আসছি মেডিক্যাল এর সংশ্লিষ্ট বিভাগের টিম কে প্রশিক্ষণ দেবো আশাবাদী আগামীতে সিলেটেও এই চিকিৎসা বেগবান হবে।

হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সোয়াইব আহমদ জানান, সিলেটে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে পরিক্ষা করে শুধু রোগি নির্ণয় করতে পারতাম এমন চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিলোনা তাই রুগীদের নিয়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন দেশে যাওয়া লাগতো। এ চিকিৎসা সিলেটে সরকারি ভাবে দেওয়া গেলে আমাদের দেশকে এগিয়ে নেওয়ায় ভুমিকা রাখতো।

সিলেটে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আশাবাদ জানিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন একটি ক্যাথল্যাব হলে এ কার্যক্রমে আরো গতি আসবে।

 

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল উমর রাশেদ মুনির বলেন, শিশুদের হ্রদ রোগের চিকিৎসাটা যেনো ঢাকায় না যেতে হয় এবং সিলেটেই আমরা যত্নের সাথে চিকিৎসাটা করতে পারি এটাই আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন আমাদের ক্যাথল্যাব মেশিনটা অনেক পুরনো হয়ে গেছে চিকিৎসাতে বিগ্ন ঘটায় ইতিমধ্যে আমরা আবেদন করেছি এবং প্রক্রিয়াধীন আশাকরি শিগগিরই পেয়ে যাবো। নতুন ক্যাথল্যাব মেশিনটা পেয়ে গেলে আমরা আমাদের চিকিৎসা সেবা আরও বেগবান করতে পারবো।