সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে থাকা সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মান্নানের ‘শারীরিক ও মানসিক সমস্যা’ দেখা দেওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এম এ মান্নানকে ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে শান্তিগঞ্জ উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাঁকে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় দ্রুত বিচার আইনে করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এর পর থেকে তিনি সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে ছিলেন। ২৩ সেপ্টেম্বর আদালতে তাঁর জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু জামিন মঞ্জুর হয়নি। আগামীকাল রোববার মামলার নির্ধারিত তারিখ আছে।
জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, এম এ মান্নান আজ সকাল থেকে অসুস্থতা বোধ করছিলেন। এ জন্য তাঁকে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, এম এ মান্নান বয়স্ক মানুষ। শারীরিক নানা জটিলতা আছে। বহুদিন থেকে তিনি বুকে ও পেটে ব্যথার ওষুধ সেবন করেন। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুঝেছেন শারীরিক সমস্যার চেয়ে মানসিক সমস্যা বেশি। একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার। এ ছাড়া এখানে বক্ষব্যাধির কোনো বিশেষজ্ঞ নেই। তাই সিলেটে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, এম এ মান্নানকে হাসপাতালে আনার পর তাঁকে বিধ্বস্ত মনে হয়েছে। তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলছিলেন। অনেক কিছু ভুলে যান। একপর্যায়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় এই সমস্যা আরও বেশি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ কারাগারের কারাধ্যক্ষ (জেলার) হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমরা উনাকে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন সিলেটে নেওয়ার। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিলেটে পাঠানো হয়েছে। বেলা আড়াইটার দিকে তাঁকে সিলেট নেওয়া হয়।’
যে ঘটনায় করা মামলায় এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই ঘটনার সঙ্গে তিনি যুক্ত নন বলে জানান এম এ মান্নানের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জ পৌর শহরে। এম এ মান্নান বসবাস করেন শান্তিগঞ্জে। ঘটনার সময় তিনি সুনামগঞ্জ শহরে ছিলেন না। এ ছাড়া তিনি একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ। আমরা তাঁর বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় জামিনের আবেদন করেছিলাম। আগামীকাল রোববার মামলার ধার্য তারিখ। আমরা আদালতে জামিনের প্রার্থনা করব।’
এম এ মান্নানকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে শান্তিগঞ্জ উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাঁকে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়।
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী, সজ্জন রাজনীতিবিদ এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে একাধিক বার শান্তিগঞ্জের সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরে গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী জহুর আহমদের ভাই জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে ২ সেপ্টেম্বর সদর মডেল থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় এম এ মান্নানসহ ৯৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি আছেন আরও ১৫০ থেকে ২০০ জন। তবে এখন পর্যন্ত এম এম মান্নান ছাড়া এই মামলার এজাহারনামীয় আর কোনো আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এম এ মান্নান সরকারের যুগ্ম সচিব হিসেবে চাকরি জীবন শেষ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে ২০০৮ সাল থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এবার তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও তাঁকে মন্ত্রী করা হয়নি।