এ বিষয়ে সিলেট খাদ্যনিরাপদ কর্তৃপক্ষ বলছে, সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত তাপমাত্রায় মাংস রাখা যাবে। মাংস পচে গেলেই তবেই দুর্গন্ধ আসবে। এ বিষয়ে যাচাই–বাছাই করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরের দাঁড়িয়াপাড়া এলাকার ইমন হাউজিং এলাকার সংগ্রহশালায় দুর্গন্ধ পেয়ে অভিযান চালান স্থানীয় কিছু যুবক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরের দাঁড়িয়াপাড়া এলাকার ইমন হাউজিং এলাকার একটা বাসা থেকে কয়েক দিন ধরে দুর্গন্ধ আসছিল। এতে চরম বিরক্ত ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল বিকেলে কয়েকজন স্থানীয় যুবক সেখানে যান এবং দেখতে পান ওই বাসায় খাসির মাংস মজুত করে রাখা আছে। পরে জানা যায় এগুলো সুলতানস ডাইনের খাসির মাংস।
এ সময় তাঁরা পচা মাংসের অভিযোগ তুললে, তাঁদের তোপের মুখে সেখানকার দায়িত্বরত ব্যক্তিরা বলেন, এখানে কিছু গন্ধ হবে। কারণ, মাংসগুলো সিলেটে জবাই করা মাংস না। এগুলো ঢাকায় জবাই করা মাংস। সেখানে জবাই করার পর সিলেটে আনা হয়। এ সময় যুবকেরা স্থানীয় মুরব্বিদের শরণাপন্ন হলে তাঁরা সুলতানস ডাইনের ম্যানেজারকে অবহিত করলে তাঁরা এসে স্থানীয় এক ব্যক্তির বাসায় বসে বিষয়টি মিটমাটের চেষ্টা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাংস সরবরাহের কাজে নিয়োজিত থাকা মোহাম্মদ সুমন বলেন, ‘আমাদের দোকান আছে ঢাকার কাপ্তান বাজারে। খাসিগুলো সেখানে জবাই করা হয়। পরে সেখান থেকে মাংসগুলো কার্টনে ভরে বাসে করে সিলেটের কদমতলীতে আনা হয়। সেখান থেকে আমরা কয়েকজন কার্টনগুলো এনে দাঁড়িয়াপাড়ার এই বাসায় আনি। পরে এখানে মাংসের সাইজ করে সুলতান ডাইনে সাপ্লাই দিই।’
সংগ্রহশালার পাশে থাকা একটি বাসার ভাড়াটিয়া মো. শিমুল বলেন, ‘আমার পাশের ঘর থেকে সিলেট সুলতানস ডাইনে মাংস দেওয়া হয়। প্রথমে তারা আমার পার্শ্ববর্তী ঘরে মাংস কোপাত। আমরা অভিযোগ দেওয়াতে এখন আর ঘরে না করে বাসার পাশের বাউন্ডারিসংলগ্ন জায়গায় মাংস ধোয়া ও কাটাকাটির কাজ করে। এখানে প্রচুর দুর্গন্ধ হয়; যার কারণে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।’
দুর্গন্ধযুক্ত মাংসের বিষয়ে সুলতানস ডাইন সিলেটের ম্যানেজার অপারেশন জুলকার আহমদের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা কি কোনো প্রমাণ পাইছেন যে এই মাংস আমরা ওদের কাছ থেকে সংগ্রহ করি?’ পরে সেখানে থাকা সাংবাদিকেরা প্রমাণ আছে বললে, তিনি মাংস সংগ্রহের কথা স্বীকার করেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনকার মাংস প্রতিদিনই কাজে লাগাই, কোনো ফ্রোজেন মাংস আমরা ব্যবহার করি না।’
পরে উপস্থিত সাংবাদিকেরা ঢাকার কাপ্তানবাজারে জবাই করা মাংস কীভাবে সিলেটে এনে ব্যবহার করেন, এই প্রশ্ন করল কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেটের খাদ্যনিরাপদ অফিসার সৈয়দ সারফরাজ হোসেন বলেন, ‘তাপমাত্রা মাইনাস ১২-১৮–এর মধ্যে থাকে তাহলে উনারা মাংস রাখতে পারবে। ডিপেন্ড করতেছে ওখানে উনারা টেম্পারেচার কন্ট্রোল করছেন কি না। ঢাকা থেকে আনার সময় ফ্রিজিং ভ্যান ব্যবহার করছেন কি না। সংরক্ষণের জায়গায় ফ্রিজিং ব্যবস্থা কেমন? যদি কোল্ড চেইন মেনটেইন হয়, তাহলে এ রকম দুর্গন্ধ হওয়ার কথা নয়। পচন ধরতেই দুর্গন্ধ হয়।’
তিনি বলেন, ‘সুলতানস ডাইনের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, এখন ঢাকায় আছি। সিলেটে ফিরে আমরা বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করব। সত্যতা পেলে অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’