Sylhet ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিন কোটি টাকার চেক নিয়ে ডিসি নিয়োগ

  • ভিশন ডেস্ক ::
  • প্রকাশের সময় : ০৫:২৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৩৪

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে কেলেঙ্কারি শেষ হয়নি। সম্প্রতি বিতর্কিত ডিসি নিয়োগকাণ্ডের অন্যতম হোতা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবের (এপিডি) কক্ষ থেকে ৩ কোটি টাকার একটি চেক উদ্ধার করা হয়েছে। পদায়ন হওয়া এক জেলা প্রশাসকের পক্ষে ওই যুগ্ম সচিবকে চেকটি দেন এক ব্যবসায়ী। তবে কাঙ্ক্ষিত জেলায় পদায়ন না হওয়ায় চেকের বিপরীতে টাকা জমা দেননি ডিসি। অন্যদিকে, সব কিছু ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চেকদাতা ওই ব্যবসায়ী। বিষয়টি নিয়ে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। সচিবালয় ও গোয়েন্দা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

 

 

সূত্র জানায়, এবারের ডিসি নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ডিসি ফিটলিস্ট তৈরির আগেই এসব অর্থের লেনদেন হয়। এতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুজন যুগ্ম সচিবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এর অংশ হিসেবে তিন দিন আগে মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ এপিডি অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব ড. জিয়া উদ্দিন আহমেদের কক্ষ থেকে ৩ কোটি টাকার চেক উদ্ধার করে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। সঙ্গে চেকদাতার এনআইডির ফটোকপিসহ ডিসি নিয়োগ-সংশ্লিষ্ট কিছু কাগজপত্র এবং চিরকুটও উদ্ধার করা হয়। যেখানে ডিসি নিয়োগ সম্পর্কিত ইঙ্গিতপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে।

 

 

গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, ডিসি নিয়োগ নিয়ে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের নানা আলামত পেয়েছেন তারা। সচিবালয়ে ড. জিয়ার কক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত কিছু চিরকুটও উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একটি চিরকুটে পাঁচজন কর্মকর্তার নাম এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত জেলাগুলোর নামও লেখা রয়েছে। মূলত বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের অংশ হিসেবেই তাদের নাম চিরকুটে লেখা হয়। যে নামগুলো ডিসির জন্য তৈরি করা ফিটলিস্টে রয়েছে। তাদের মধ্য থেকে কয়েকজন ডিসি হিসেবে পদায়নও পান। আর পদায়ন পাওয়া উত্তরাঞ্চলের একজন ডিসির কাছ থেকেই ৩ কোটি টাকার চেক নেওয়া হয়। যিনি আবার দুর্নীতি দমন কমিশনেই (দুদক) কর্মরত ছিলেন। তবে ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ওই কর্মকর্তার পক্ষে মো. মীর্জা সবেদ আলী নামের এক ব্যবসায়ী এই চেকটি প্রদান করেন। পদ্মা ব্যাংকের লক্ষ্মীবাজার উপশাখা থেকে দেওয়া এই চেকের গ্রাহক কুড়িগ্রাম জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। তবে নিয়োগ পাওয়ার পর ৩ কোটি টাকা নগদায়ন না করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ডিসি নিয়োগ নিয়ে বিতর্কের পর প্রত্যাহার হওয়ার আশঙ্কায় বাকি টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি।

 

 

সূত্রগুলো আরও জানায়, শুধু আর্থিক লেনদেনের চুক্তি হওয়া ডিসি প্রার্থী পাঁচ কর্মকর্তার কাছ থেকেই এভাবে অন্তত ১৫ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। চুক্তির আগে শুধু পদায়ন পর্যন্তই দায়িত্ব নেন জনপ্রশাসনের প্রভাবশালী ওই দুই কর্মকর্তা। এরপর কোনো কারণে মেয়াদ সংক্ষিপ্ত হওয়া অথবা প্রত্যাহার হয়ে গেলে তার দায় নিতে রাজি নন বলে তারা প্রার্থীদের জানিয়ে দেন।

 

 

উদ্ধার করা আরেকটি চিরকুটে ডিসি নিয়োগের ভাইভা দেওয়া প্রার্থীর সংখ্যা উল্লেখ রয়েছে। এ তথ্য অনুযায়ী, ডিসির ফিটলিস্ট তৈরি করতে মোট ৫৮২ প্রার্থীকে এসএসবির কাছে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। তাদের মধ্যে ৪৭০ জন কর্মকর্তা উপস্থিত হন। সেখান থেকে নিয়োগের জন্য ২৪তম বিসিএস থেকে ৩৯ জন, ২৫তম বিসিএস থেকে ৩২ এবং ২৭তম বিসিএস থেকে ৩৫ জনকে চূড়ান্ত করা হয়। বাকি ৫২ জন কর্মকর্তা ডিসি হওয়ার জন্য ভাইভা দিতে আসেননি।

 

 

উদ্ধার হওয়া চেকদাতা মীর্জা সবেদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কালবেলা। তিনি পুরো ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলে বাড়ি হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক পরিচালক মো. আব্দুল আউয়াল খুব ঘনিষ্ঠ। যিনি ডিসি হওয়ার জন্য খুব চেষ্টা করছিলেন।’

 

 

তিনি বলেন, ‘জনৈক বড় ভাইয়ের সূত্র ধরে জনপ্রশাসনের যুগ্মসচিব ড. জিয়া উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে পরিচয়। সেজন্য আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ আউয়ালকে ডিসি নিয়োগের জন্য ড. জিয়ার কাছে তদবির করা হলে ৩ কোটি টাকার চুক্তি হয়। সেজন্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মুন্সীগঞ্জের ডিসি নিয়োগের শর্ত দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী, আউয়ালের পক্ষে এই ৩ কোটি টাকার চেক দেওয়া হয়। এরপর নওগাঁর ডিসি হিসেবে নিয়োগ পান আউয়াল। এখন আউয়ালের কাছে চেক নগদায়নের জন্য টাকা চাওয়া হলে তিনি নানা টালবাহানা করেন। তার দাবি, কাঙ্ক্ষিত জেলায় পোস্টিং হয়নি। এ ছাড়া নিজের চেষ্টায় নওগাঁ জেলায় পোস্টিং নিয়েছেন তিনি। সেজন্য এই চেকের বিপরীতে টাকা দেওয়া হবে না।’

 

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘আমি মো. মীর্জা সবেদ আলী নামে কাউকে চিনি না। ড. জিয়া উদ্দিন স্যারের নাম শুনেছি। স্যারকে কখনো সামনাসামনি দেখিনি।’

জনপ্রশাসনের যুগ্ম সচিব ড. জিয়া উদ্দিনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পওয়া যায়।

#কালবেলা

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sylhet Vision

নিরীহ কারও নামে মামলা হলে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রত্যাহার: আইজিপি

তিন কোটি টাকার চেক নিয়ে ডিসি নিয়োগ

প্রকাশের সময় : ০৫:২৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে কেলেঙ্কারি শেষ হয়নি। সম্প্রতি বিতর্কিত ডিসি নিয়োগকাণ্ডের অন্যতম হোতা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবের (এপিডি) কক্ষ থেকে ৩ কোটি টাকার একটি চেক উদ্ধার করা হয়েছে। পদায়ন হওয়া এক জেলা প্রশাসকের পক্ষে ওই যুগ্ম সচিবকে চেকটি দেন এক ব্যবসায়ী। তবে কাঙ্ক্ষিত জেলায় পদায়ন না হওয়ায় চেকের বিপরীতে টাকা জমা দেননি ডিসি। অন্যদিকে, সব কিছু ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চেকদাতা ওই ব্যবসায়ী। বিষয়টি নিয়ে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। সচিবালয় ও গোয়েন্দা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

 

 

সূত্র জানায়, এবারের ডিসি নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ডিসি ফিটলিস্ট তৈরির আগেই এসব অর্থের লেনদেন হয়। এতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুজন যুগ্ম সচিবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এর অংশ হিসেবে তিন দিন আগে মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ এপিডি অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব ড. জিয়া উদ্দিন আহমেদের কক্ষ থেকে ৩ কোটি টাকার চেক উদ্ধার করে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। সঙ্গে চেকদাতার এনআইডির ফটোকপিসহ ডিসি নিয়োগ-সংশ্লিষ্ট কিছু কাগজপত্র এবং চিরকুটও উদ্ধার করা হয়। যেখানে ডিসি নিয়োগ সম্পর্কিত ইঙ্গিতপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে।

 

 

গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, ডিসি নিয়োগ নিয়ে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের নানা আলামত পেয়েছেন তারা। সচিবালয়ে ড. জিয়ার কক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত কিছু চিরকুটও উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একটি চিরকুটে পাঁচজন কর্মকর্তার নাম এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত জেলাগুলোর নামও লেখা রয়েছে। মূলত বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের অংশ হিসেবেই তাদের নাম চিরকুটে লেখা হয়। যে নামগুলো ডিসির জন্য তৈরি করা ফিটলিস্টে রয়েছে। তাদের মধ্য থেকে কয়েকজন ডিসি হিসেবে পদায়নও পান। আর পদায়ন পাওয়া উত্তরাঞ্চলের একজন ডিসির কাছ থেকেই ৩ কোটি টাকার চেক নেওয়া হয়। যিনি আবার দুর্নীতি দমন কমিশনেই (দুদক) কর্মরত ছিলেন। তবে ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ওই কর্মকর্তার পক্ষে মো. মীর্জা সবেদ আলী নামের এক ব্যবসায়ী এই চেকটি প্রদান করেন। পদ্মা ব্যাংকের লক্ষ্মীবাজার উপশাখা থেকে দেওয়া এই চেকের গ্রাহক কুড়িগ্রাম জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। তবে নিয়োগ পাওয়ার পর ৩ কোটি টাকা নগদায়ন না করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ডিসি নিয়োগ নিয়ে বিতর্কের পর প্রত্যাহার হওয়ার আশঙ্কায় বাকি টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি।

 

 

সূত্রগুলো আরও জানায়, শুধু আর্থিক লেনদেনের চুক্তি হওয়া ডিসি প্রার্থী পাঁচ কর্মকর্তার কাছ থেকেই এভাবে অন্তত ১৫ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। চুক্তির আগে শুধু পদায়ন পর্যন্তই দায়িত্ব নেন জনপ্রশাসনের প্রভাবশালী ওই দুই কর্মকর্তা। এরপর কোনো কারণে মেয়াদ সংক্ষিপ্ত হওয়া অথবা প্রত্যাহার হয়ে গেলে তার দায় নিতে রাজি নন বলে তারা প্রার্থীদের জানিয়ে দেন।

 

 

উদ্ধার করা আরেকটি চিরকুটে ডিসি নিয়োগের ভাইভা দেওয়া প্রার্থীর সংখ্যা উল্লেখ রয়েছে। এ তথ্য অনুযায়ী, ডিসির ফিটলিস্ট তৈরি করতে মোট ৫৮২ প্রার্থীকে এসএসবির কাছে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। তাদের মধ্যে ৪৭০ জন কর্মকর্তা উপস্থিত হন। সেখান থেকে নিয়োগের জন্য ২৪তম বিসিএস থেকে ৩৯ জন, ২৫তম বিসিএস থেকে ৩২ এবং ২৭তম বিসিএস থেকে ৩৫ জনকে চূড়ান্ত করা হয়। বাকি ৫২ জন কর্মকর্তা ডিসি হওয়ার জন্য ভাইভা দিতে আসেননি।

 

 

উদ্ধার হওয়া চেকদাতা মীর্জা সবেদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কালবেলা। তিনি পুরো ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলে বাড়ি হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক পরিচালক মো. আব্দুল আউয়াল খুব ঘনিষ্ঠ। যিনি ডিসি হওয়ার জন্য খুব চেষ্টা করছিলেন।’

 

 

তিনি বলেন, ‘জনৈক বড় ভাইয়ের সূত্র ধরে জনপ্রশাসনের যুগ্মসচিব ড. জিয়া উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে পরিচয়। সেজন্য আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ আউয়ালকে ডিসি নিয়োগের জন্য ড. জিয়ার কাছে তদবির করা হলে ৩ কোটি টাকার চুক্তি হয়। সেজন্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মুন্সীগঞ্জের ডিসি নিয়োগের শর্ত দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী, আউয়ালের পক্ষে এই ৩ কোটি টাকার চেক দেওয়া হয়। এরপর নওগাঁর ডিসি হিসেবে নিয়োগ পান আউয়াল। এখন আউয়ালের কাছে চেক নগদায়নের জন্য টাকা চাওয়া হলে তিনি নানা টালবাহানা করেন। তার দাবি, কাঙ্ক্ষিত জেলায় পোস্টিং হয়নি। এ ছাড়া নিজের চেষ্টায় নওগাঁ জেলায় পোস্টিং নিয়েছেন তিনি। সেজন্য এই চেকের বিপরীতে টাকা দেওয়া হবে না।’

 

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘আমি মো. মীর্জা সবেদ আলী নামে কাউকে চিনি না। ড. জিয়া উদ্দিন স্যারের নাম শুনেছি। স্যারকে কখনো সামনাসামনি দেখিনি।’

জনপ্রশাসনের যুগ্ম সচিব ড. জিয়া উদ্দিনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পওয়া যায়।

#কালবেলা