প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা আন্দোলনের ছদ্মবেশে জাতি জঙ্গিবাদের বর্বরতা প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান হবে না। তিনি জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে তাদের প্রধান শক্তি হিসাবে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী আবারও জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশের কাছে তাদের দক্ষতার মাধ্যমে সম্প্রতি দেশব্যাপী তা-বের প্রতিটি ঘটনার তদন্তে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য সহযোগিতা চান।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ
হোসেন হুমায়ুন, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুর নাহার লাইলী প্রমুখ বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেন, জামায়াত ও শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে এবং নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালিয়ে যাবে। তিনি এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে উল্লেখ করে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার জীবন নাশের প্রচেষ্টা আগের ঘটনার মতো বারবার আসতে পারে। কিন্তু আমি পাত্তা দিই না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন এবং তিনি তা নিয়েও নেবেন। জনগণের কল্যাণে যা যা করা দরকার, আমি সবই করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বস্ব হারিয়ে কাছের এবং প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা তিনি জানেন। তিনি বলেন, ‘সুতরাং আমি প্রত্যেকটি জিনিসের (হত্যাযজ্ঞের) তদন্ত চাই যে, এর পেছনে কারা রয়েছে এবং কীভাবে ও কী কী ঘটনা ঘটেছে। সরকার সাম্প্রতিক সহিংসতায় ছয়জনের মৃত্যুর তদন্তের জন্য এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। পরে কমিশন গঠনের পর বিপুলসংখ্যক ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় এর পরিধি সম্প্রসারণ করে তিনজন সদস্য করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলন ধ্বংসযজ্ঞে রূপ নেওয়ার আগে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করেছে। তারা মিছিল করে যেখানে যেতে চেয়েছে, তাদের সেখানে যেতে দিয়েছে। তিনি নিজেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বলেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় যেভাবে মেরে ধরে, শিক্ষকদের রাস্তার ওপর ফেলে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে হার্ড লাইনে গিয়ে আন্দোলন দমন করেছিল, সরকার সে পথে যায়নি এবং শক্তিও প্রয়োগ করেনি। বরং তাদের দাবি মেনে নিয়েছে।’ এ সময় তিনি হাইকোর্ট বিভাগের রায় স্থগিত করে আপিল বিভাগে সরকারের কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহাল করার পরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।
অপপ্রচার ও সহিংসতা চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটার বিচার আমি জনগণের কাছেই দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি শিক্ষক ও অভিভাবকদের বলেছিলাম যে, আপনাদের সন্তানদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে, আপনারা সন্তানদের বের হতে দিয়েন না। কারণ আমি তো জানি এ দেশে জঙ্গিবাদী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কতদূর কী করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারপরও আজকে বাংলাদেশে এতগুলো প্রাণ যে ঝরে গেল- এর দায়দায়িত্ব কার? একটা জিনিস গেলে আবার গড়ে তোলা যায়, কিন্তু জীবন গেলে তো আর ফিরে পাওয়া যায় না।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদ ও সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
ইতালির রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো সাক্ষাৎ করেন। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, জামায়াত-শিবির ও বিএনপি তাদের সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। সাক্ষাৎকালে ইতালীয় রাষ্ট্রদূত বিক্ষোভ বা ক্র্যাকডাউন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আগামী দিনে এ বিষয়ে আরও আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব নুর এলাহি মিনা সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎকালে ইতালির রাষ্ট্রদূত বলেন, সহিংসতাকারীরা বাংলাদেশের আধুনিকায়নের প্রতীকগুলোকে টার্গেট করে হামলা করেছে। জনগণের সম্পদ ধ্বংস এবং জীবনহানির ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রদূত হলি আর্টিজানে হামলার পর সন্ত্রাসবাদ দমনে সরকারের পদক্ষেপ ও সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, ‘সাম্প্রতিক এ ঘটনার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারের সন্ত্রাস দমন কার্যক্রম এগিয়ে যাবে। সাম্প্রতিক সহিংসতা প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সামাল দিয়েছেন, ইতালির রাষ্ট্রদূত তারও প্রশংসা করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। প্রায় দুই লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি এই সম্পর্কের সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছে। তিনি বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।