ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, সারা দেশে ছয়জনকে হত্যা ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে উত্তপ্ত ছিল সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদর ও পাগলা বাজার এলাকা। শান্তিগঞ্জ বাজারে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে তর্কাতর্কি ও ধস্তাধস্তি হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। আন্দোলন মিছিলের সময় শান্তিগঞ্জ বাজার ও পাগলা বাজার এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে পৃথক পৃথকভাবে প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ ছিলো। তখন অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী বহনকারী যানবাহনকে নিজ দায়িত্বে রাস্তাপার করে দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বেলা ১১টায় শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদরে ও উপজেলার পাগলা বাজারে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহা সড়কে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে পৃথক পৃথক ভাবে এই আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী শান্তিগঞ্জ বাজার থেকে বেলা ১১টায় শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে বাজার থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথেঅবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। উপজেলা পরিষদের সামনে উভয়দল মুখোমুখি হলে প্রথমে তর্কাতর্কি ও পরে ধস্তাধস্তি শুরু হয় আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে। সাধারণ মানুষের মধ্যস্তায় সমস্যার সমাধান হলে আবারো কোটা সংস্কারের পক্ষে শ্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাদাত মান্নান অভি এসে সামনের সারির শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তার সাথে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন। এসময় শিক্ষার্থীদের ব্যানার তার হাতে নিয়ে গুছিয়ে ফেললে আবারো উত্তেজনা সৃষ্টি হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে। পরে, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপির নিজ বাস ভবন হিজর বাড়ির আরফান আলী বৈঠকখানায় বসতে চাইলে ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী উপস্থিত না থাকার শর্তে বসতে রাজী হন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় দীর্ঘ একঘন্টা পর রাস্তার অবরোধ প্রত্যাহার করেছে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, একই সময়ে পাগলা বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায়ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় কোটা বিরোধী শ্লোগান দেন তারা। বেলা ১১টায় পাগলা সরকারি মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে মিছিল বের করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে পাগলা বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাসস্ট্যান্ডে এসে সংক্ষিপ্ত সময় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শেষ করেন তারা। এসময় কোটা বিরোধী শ্লোগানে প্রকম্পিত হয় পুরো পাগলা বাজার এলাকা। তবে, পাগলা বাজারে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আন্দোলনকারী একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ঢাকাসহ সারা দেশে আমাদের ভাই-বোনেরা শান্তিপূর্ণভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলন করছেন। আমরাও তাদের সাথে সংহতি জানিয়েছি। কিন্তু কতিপয় ছাত্রলীগের কর্মীরা যৌক্তিক এ আন্দোলনে আমাদের ভাইবোনের উপর হামলা করে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে। আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীকে গুলিকরে হত্যাসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ ছাত্রসমাজ কোটা সংস্কারের পক্ষে রাস্তায় নেমেছে। আমরা এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার ও কোটা সংস্কার চাই।