কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার আস্থার প্রতীক সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সর্বশেষ দুই দফা বন্যায় তিনবার প্লাবিত হয়েছে পুরো হাসপাতাল কমপ্লেক্স। এর আগে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায়ও প্লাবিত হয় হাসপাতালটি। ফলে বানের পানিতে বারবার স্বাস্থ্যসেবায় বিঘ্ন ঘটে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে স্থায়ী সমাধান না আসায় আতঙ্ক কাটছে না। বন্যায় অন্তত ৭৫ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে হাসপাতালে। কোটি কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
প্রায় ২৭ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ হাসপাতাল কমপ্লেক্সে রয়েছে মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, ডাক্তার হোস্টেল, নার্স হোস্টেলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সিলেট বিভাগের স্বাস্থ্যসেবার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে আলাদা মর্যাদা রয়েছে এখানকার। এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট বিশাল এ হাসপাতাল নগরীর কাজলশাহ এলাকায় অবস্থিত।
প্রতিদিনই এ হাসপাতালে বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের কয়েক হাজার রোগী ইনডোর ও আউটডোরে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। ৫ তলাবিশিষ্ট হাসপাতালের পুরোনো ভবনের নিচ তলায় রয়েছে জরুরি বিভাগ, রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগসহ ৪টি ওয়ার্ড এবং প্রশাসনিক ব্লক। সর্বশেষ চলতি মাসের বন্যায় হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজের নিচ তলা প্লাবিত হয়। এ ছাড়া বিশাল হাসপাতাল কমপ্লেক্সের প্রবেশপথসহ পুরোটাই হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এ বছরের দুই দফা বন্যায় প্লাবিত হয় হাসপাতাল। এর আগে বাইশের বন্যায়ও প্লাবিত হয় হাসপাতালটি। ফলে ভেঙে পড়ে পুরো হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা। প্রথম দফায় পানি প্রবেশ করলে হাসপাতালে অন্তত ৭৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। পানি নামার পরবর্তীতে যন্ত্রপাতি বাঁচাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিচ তলার সব মেশিনারি কাঠের বিশেষ টুল দিয়ে তিন ফুট করে উঁচুতে তুলে রাখে।
সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানি মূলত হাসপাতালের পেছনে বাইরের ছড়া থেকে প্রবেশ করে। সাগরদীঘিরপার-বাগবাড়ি সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ছড়াটি ঢলের পানিতে ফুলেফেঁপে ওঠে। যতবারই বন্যার পানি হাসপাতালে প্রবেশ করেছে, ততবারই ছিল অতিবৃষ্টি। পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টিতে ছড়া উপচে হাসপাতালের সীমানা দেয়ালের নিচ দিয়ে, কখনো ড্রেন, নালা বেয়ে উল্টোপথে হাসপাতাল কমপ্লেক্সে ঢুকে। এতে প্লাবিত হয়ে পড়ে গোটা হাসপাতাল কমপ্লেক্স। এ ছাড়া হাসপাতাল ভবনের পানি নিষ্কাশনের পথ বেয়েও উল্টোপথে আসা বানের পানি তলিয়ে দেয় হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজসহ গোটা কমপ্লেক্স। হাঁটুপানিতে ভাসতে থাকে হাসপাতালটি।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব জানান, বন্যার পানিতে কয়েক দফা ডুবেছে ওসমানী হাসপাতালের নিচ তলা। পানিতে প্লাবিত হওয়ার কারণে চিকিৎসাসেবায় বিঘ্ন হয়েছে। এ ছাড়া নিচ তলার বিভিন্ন যন্ত্রপাতিও পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রথম দফা বন্যার পর হাসপাতালের নিচ তলার প্রতিটি যন্ত্রপাতি বিশেষ কাঠের টুল নির্মাণ করে ৩ ফুট উঁচুতে তোলা হয়েছে।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, দফায় দফায় বন্যার পানি হাসপাতালে প্রবেশ করেছে। এ অবস্থায় কয়েকবার চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হলেও আমরা রোগীদের চিকিৎসাসেবায় কাজ করে গেছি। বন্যার পানিতে হাসপাতাল কমপ্লেক্স প্লাবিত হলে ডাক্তার, নার্স ও ইন্টার্ন হোস্টেল থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় পানি ডিঙিয়ে হাসপাতালে আনা হয়েছে।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতালের নিচ তলা বন্যার পানিতে প্লাবিত হলে ডাক্তাররা যেমন আসতে পারেন না, তেমনি যন্ত্রপাতি বাঁচাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও বেগ পেতে হয়। বানের পানি ঢোকা শুরু করলে এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে তলিয়ে যায় পুরো হাসপাতাল কমপ্লেক্স। ভেঙে পড়ে চিকিৎসাব্যবস্থা। বানের পানি মূলত সাগরদীঘিরপারের ছড়া দিয়ে হাসপাতালের সীমানায় প্রবেশ করে। পানি হাসপাতালের পেছনের অংশ দিয়ে প্রবেশ করে সামনের দিকে নামতে থাকে। তিন দফা বন্যার পানিতে হাসপাতালের প্রায় ৭৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা পানি প্রবেশের সব রাস্তা বন্ধ করার চেষ্টা করছি। সব ছিদ্র বন্ধ করার পাশাপাশি দেয়াল তুলে দিয়েছি। এ ছাড়া যন্ত্রপাতি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। বন্যা থেকে হাসপাতালকে রক্ষায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে বিষয়টি জানিয়েছি।