জেলার দুর্গম হাওর এলাকার একটি টিউবওয়েল থেকে দুই বছর ধরে গ্যাস উদগীরণ হচ্ছে। এর পাশে (এক হাজার ফুট দূরে) সম্প্রতি একটি ডিপ টিউবওয়েল বসানোর সময়ও একইভাবে গ্যাস উদগীরণ হতে থাকে। দুইটি টিউবওয়েল থেকেই গ্যাসের চাপে আপনা আপনি বের হচ্ছে পানি। অথচ বিষয়টি এখনো জানানো হয় নি বাপেক্সকে। বাপেক্স কতৃর্পক্ষ রবিবার এই প্রতিবেদককে বলেছেন, অফিসিয়েলি জানানো হলে, তারা সেখানে বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
হালির হাওরে শুকনো মৌসুমে জিরাতিরা (ছয় মাসের অস্থায়ী কাঁচা ঘর তৈরি করে হাওরে বসবাস) এসে বসবাস করেন। এই জিরাতিদের জন্যই দুই বছর আগে হাওরের গুদারকান্দায় সরকারি উদ্যোগে টিউবওয়েল বসানো হয়। প্রায় তিনশ ফুট বসানোর পরেই পাইপ দিয়ে গ্যাস নির্গত হতে থাকে। নলকূপ কর্মীরা কোনভাবে গ্যাস নির্গমন কমতেই পাইপ বসিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে আসে। সেই থেকে গ্যাসের চাপে ওই টিউবওয়েল দিয়ে আপনা আপনি পানি উঠতে থাকে। এই পানিই পান করছেন জিরাতিসহ হাওরে কাজ করতে যাওয়া কৃষকরা।
হাওরপাড়ের মুখলেছ মিয়া নামের আরেক বড় কৃষক ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে একই এলাকায় (আগের টিউবওয়েল থেকে এক হাজার ফুট দূরে) একটি ডিপ টিউবওয়েল বসানোর কাজ করেন। প্রায় তিনশ ফুট নীচে পাইপ যাওয়ার পর এই ডিপ টিউবওয়েল থেকেও গ্যাস নির্গমন হতে থাকে। কৃষক মুখলেছ মিয়া ভয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। এখন আপনা আপনি পানি ওঠেছে এই ডিপ টিউবওয়েল থেকেও। শনিবার একজন কৃষক এই বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলায় অনেকের নজরে আসে সেটি।
মুখলেছ মিয়া রবিবার এই প্রতিবেদককে বললেন, দুর্গম হাওর এলাকায় হওয়ায় অনেকেই ঘটনাটি জানেন না। আজ—কালের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাবো আমরা।
হাওরের গুদারকান্দার পাশের উলুকান্দি গ্রামের বাসিন্দা লিটন দাস বললেন, গুদারকান্দার একটি টিউবওয়েল থেকে দুই বছর হয় আপনা আপনি পানি বের হচ্ছে। এই টিউবওয়েলের মুখে কাপড় বেঁধে উপরের অংশে ম্যাচ দিয়ে টুকা দিলেই আগুন জ্বলে ওঠে। এই টিউবওয়েলের পানি—ই দুই বছর হয় পান করছে হাওরে কাজ করতে আসা জিরাতিসহ অন্য কৃষকেরা। আরেকটি ডিপ টিউবওয়েল ২০—২৫ দিন আগে কাজ শুরু হয়েছিল। এটি দিয়েও গ্যাস নির্গত হতে থাকে। কয়েকদিন যাবার পর গ্যাসের আগুন নিভলেও আপনা আপনি পানি বের হচ্ছে। কেউ আগুন দিলে, এই ডিপ টিউবওয়েলেও আগুন জ¦লে ওঠে।
স্থানীয় বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুব্রত সামন্ত সরকার বললেন, শনিবারই প্রথম বিষয়টি শুনেছি, এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবো। আমি এলাকায় নেই, এসে সরেজমিনে গুদারকান্দায় যাব।
জামালগঞ্জ উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মাসুদ রানা বললেন, ফেসবুকে বিষয়টি দেখেছি। সোমবার সরেজমিনে দেখার জন্য দুইজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হবে।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কাশেম বললেন, এলাকাটিকে সংরক্ষিত এলাকা করা জরুরি। না হয় যে কোন সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বাপেক্স এর ভূতাত্ত্বিক বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার আলমগীর হোসেন বললেন, সুনামগঞ্জে এর আগেও গ্যাস উদগীরণ জনিত কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্থানীয় কতৃর্পক্ষ অফিসিয়েলি আমাদের জানালে, আমরা বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেব। এর আগে পর্যন্ত লাল কাপড় দিয়ে জায়গাটিকে ব্যারিকেড করে রাখলে দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে।
পরীক্ষা না করে পানি পান করলে ক্ষতি হবে
গ্যাসের চাপে বের হওয়া পানি পান করলে বিপদ হতে পারে বললেন সিভিল সার্জন আহমেদ হোসেন। তিনি বললেন, হালির হাওরের ওই টিউবওয়েলগুলোর পানি পরীক্ষা করা জরুরি। বিষাক্ত ধাতু থাকলে পানি খাওয়া যাবে না। ওই পানির মধ্যে পেট্রোলিয়াম জাতীয় কিছু অবশ্যই থাকবে, সুতরাং পানি পরীক্ষা না করে খেলে বিপদ হতে পারে। যারা পানি পান করবেন, তারা এখনই সেটি হয়তো বুঝবেন না, এটি বিলম্বে হলেও শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।