জামালপুরের বকশীগঞ্জে এক নারীকে স্ত্রী দাবি করেছেন দুইজন। দুই জনই দাবি করছেন তারা বৈধ স্বামী। আজ রবিবার (১৭ মার্চ) এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধ্বস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটেছে। গ্রাম্য মাতব্বরদের সামনে সেই আলোচিত মহিলা কথিত দ্বিতীয় স্বামী দাবিদার শামীম তার নিজ হেফাজতে নিয়ে যান।
তবে গ্রাম্য মাতব্বরদের সামনে নিজ হেফাজতে নেওয়ার পরই শামীম ও তার পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছেন।জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার নান্দাইল সদর ইউনিয়নের ভাটিচারিয়া গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে হৃদয় মিয়া দেড় বছর আগে ইশ্বরগঞ্জ থানার সরিষা ইউনিয়নের সরিষা গ্রামের বাচ্চু মিয়ার মেয়ে ছালমা আক্তার মীম (২৫)-কে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক অভিভাবকদের উপস্থিতিতে বিয়ে করেন। দেড় বছরের সংসার জীবন তাদের শান্তিতেই চলছিল। গত ৫ মার্চ ছালমা আক্তার মীম স্বামীর বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন।
নিখোঁজের পর থেকেই স্বামী হৃদয় মিয়া স্ত্রী মীমকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন।গত ১৫ মার্চ মীম তার স্বামী হৃদয়ের মোবাইলে কল দিয়ে জানান, তিনি জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের আওয়ালপাড়া গ্রামে সাহা মিয়ার ছেলে শামীম মিয়ার কাছে অবরুদ্ধ আছেন। খবর পেয়ে হৃদয় তাকে উদ্ধারের জন্য আজ রবিবার বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের আওয়ালপাড়া গ্রামে ছুটে যান। সেই গ্রামের সাহা মিয়ার ছেলে শামীম মিয়ার বাড়ি থেকে মীমকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ শহরে নিয়ে আসেন।
পরে এ নিয়ে বিপুল সংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে একটি সালিশ বসে। সালিশে ছালমা আক্তার মীম তার স্বামী হৃদয় মিয়ার সঙ্গে চলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। ওই সময় শামীম মিয়া উপস্থিত লোকজনকে একটি কাবিননামা দেখিয়ে জানান, মীম তার পূর্বের স্বামী হৃদয় মিয়াকে তালাক দিয়েছেন। তালাকের তিনদিন পর মীমকে তিনি বিয়ে করেছেন। শামীম দাবি করেন, মীম তার বিবাহিত স্ত্রী।
তবে মীম কর্তৃক দেওয়া তালাকনামার কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি।বিচার শালিসের এক পর্যায়ে শামীম মিয়া উপস্থিত বিপুল সংখ্যক লোকজনের সামনেই প্রকাশ্যে মীম ও তার স্বামী হৃদয় মিয়াকে মারপিটের হুমকি দেন। পরে উপস্থিত মাতব্বরগণের সামনেই সালিশ থেকে মীমকে নিজবাড়ি আওয়ালপাড়া গ্রামে নিয়ে যান শামীম মিয়া।
ঘটনার খবর পেয়ে গণমাধ্যমের লোকজন শামীমের বাড়িতে গেলে গ্রামের উপস্থিত লোকজন জানায় শামীম ও তার পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছে। বাড়ি-ঘর জনশূন্য। মীম কোথায় কী অবস্থায় আছে কেউ জানে না।
এ ব্যাপারে মীমের স্বামী হৃদয় মিয়া জানান, নান্দাইল থেকে বকশীগঞ্জ উপজেলার আওয়ালপাড়া গ্রামে যাওয়ার পর আমি স্ত্রীর সন্ধান পাই এবং উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা অফিসের সামনে আসার পর কিছু লোকজন আমাদের গতিরোধ করে। পরে সালিশ বসিয়ে সালিশে উপস্থিত লোকজন আমার স্ত্রী মীমকে শামীমের হাতে তুলে দেন। পরে প্রকাশ্যে শামীম উপস্থিত লোকজনের সামনেই আমার স্ত্রী মীমকে নিয়ে নিজবাড়িতে চলে যান। এখন আমার স্ত্রী মীম কোথায় কী অবস্থায় আছে তা আমি জানি না। তারা যেকোনো সময় আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলতে পারে। আমি আমার স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নেব।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমি ভালো কিছু জানি না। কেউ আমার কাছে বিচার নিয়ে আসলে আমি ন্যায় বিচার করতে বাধ্য। বিষয়টি মীমাংসা করতে না পারলে, থানা পুলিশের মাধ্যমে আইনগত সহায়তা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করব।