জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পুলিশের মধ্যে ব্যাপকভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে যে কে হচ্ছেন পুলিশের নতুন সর্বোচ্চ অভিভাবক। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের দেড় বছরের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ আগামী ১১ জুলাই শেষ হবে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই তার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তখন নির্বাচনকালীন নতুন আইজিপি কে হবেন, তা নিয়ে পুলিশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু সরকার চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের ওপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রেখে তার চাকরির মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে নির্বাচনকালীন আইজিপির দায়িত্ব অর্পণ করে। বিসিএস অষ্টম ব্যাচের পুলিশের সৎ ও চৌকস এই কর্মকর্তা অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের সংঘাত রোধে গঠনমূলক ভূমিকা রেখেছেন।
তিনি নির্বাচনের আগে পুলিশ সদর দপ্তরে একাধিক ম্যারাথন বৈঠক করেন। সেসব বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তিনি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করেন। এতে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল তার ওপর সন্তুষ্ট। তার চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হলেই নতুন আইজিপি নিয়োগ দেবে সরকার। নতুন এ পদ পেতে আগ্রহী কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তারা নিজেদের বায়োডাটা সংশ্লিষ্ট মহলে বিস্তারিত আকারে তুলে ধরছেন। কোনো কোনো কর্মকর্তা পুলিশে তার কী অবদান রয়েছে তা তুলে ধরছেন। আবার পদ পেতে আগ্রহী কোনো কোনো কর্মকর্তা সরকারের হেভিওয়েট ব্যক্তিদের কাছে সংশ্লিষ্ট মহলে সুপারিশের জন্য অনুরোধ করছেন। কয়েক দিন আগে বিসিএস ১২তম ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তেজগাঁও অফিসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন যাতে তাদের ব্যাচ থেকে মূল্যায়ন করা হয়। নিচের ব্যাচ থেকে যেন কাউকে আইজিপি না করা হয়। আবার পুলিশের কিছু কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধে করেছেন যে সিনিয়রদের যাতে মূল্যায়ন করা হয়।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান আইজিপির চুক্তির মেয়াদ না বাড়লে নতুন আইপিজি পাচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তর।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের আইজি হওয়ার ক্ষেত্রে এবার এগিয়ে আছেন অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) কামরুল আহসান ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম।
কামরুল আহসান বিসিএস ১২তম ব্যাচের কর্মকর্তা। পুলিশ সদর দপ্তরে অ্যাডমিন বিভাগে দায়িত্বে আসার আগে তিনি ছিলেন অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটে। সেখানে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
চাঁদপুরের বাসিন্দা কামরুল আহসান ১৯৬৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ঢাকার সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে (এমবিএ) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯১ সালে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে যোগ দেন। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি, চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী সার্কেল এএসপি, এএসপি ডিএসবি ও ফেনী জেলার অ্যাডিশনাল এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শরীয়তপুর, চট্টগ্রাম ও যশোর জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া কামরুল আহসান পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (সংস্থাপন) ও অ্যাডিশনাল ডিআইজি ট্রেনিং এবং রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৬ সালে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম গোপালগঞ্জের বাসিন্দা। পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি জনসাধারণের মাঝে এই চৌকস কর্মকর্তার ব্যাপক পরিচিতি আছে। তিনি মিডিয়ার পরিচিত এক মুখ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে তাকে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে মনিরুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের গতি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ২০০৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সিটিটিসি গঠন হলেও মনিরুল ইসলাম যখন ডিএমপিতে কর্মরত ছিলেন, তখন সিটিটিসির কার্যক্রম গতি পায়। জানা গেছে, মনিরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ১৯৯৫ সালে ১৫তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন।