প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জেলায় নির্দিষ্ট হারের চেয়ে অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের চাহিদার কথা জানিয়ে আসছে স্থানীয় প্রশাসন। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নির্বাচনি এলাকার পরিধি, ভোটার সংখ্যা এবং ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় বাড়তি এ চাহিদা নির্বাচন কমিশনে পাঠাচ্ছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। ইসির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, অন্তত ৩০ উপজেলায় বাড়তি ফোর্স মোতায়েনের চাহিদা রয়েছে। প্রতিনিয়ত এ চাহিদা বাড়ছে। ভোটগ্রহণের দিন পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা এবং ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তায় এসব চাহিদা দিচ্ছেন তারা। নির্বাচন কমিশন সার্বিক বিষয় বিবেচনায় বাড়তি চাহিদা মেটাতে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে আসছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে আগামীকাল প্রথম ধাপে সিলেটসহ দেশের ১৪১ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২২টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবং বাকি উপজেলাগুলোতে কাগজের ব্যালটে ভোট হবে। সোমবার এসব উপজেলায় নির্বাচনি প্রচার শেষ হয়েছে। শেষ দিনে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার নির্বাচনি প্রচারে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগের রাতে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এদিকে ভোটগ্রহণ উপলক্ষ্যে সোমবার মাঠে নেমেছেন পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। এদিকে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে দেড় লাখের বেশি আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভোটকেন্দ্র ও ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ভোটদানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ১০ মে পর্যন্ত মোতায়েন থাকবেন তারা।
প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলায় ভোটের তফশিল ঘোষণা করা হয়। হাতিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর, বাগেরহাট সদর, পরশুরাম ও শিবচর-এই পাঁচ উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এসব উপজেলায় ভোটগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। এছাড়া নানা কারণে আরও ছয়টি উপজেলায় এ ধাপে ভোট হচ্ছে না। সবমিলিয়ে এ ধাপে ১৪১ উপজেলায় ভোট হবে। এতে মোট ১ হাজার ৬৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন প্রার্থী রয়েছেন। প্রার্থীদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির স্বজনও রয়েছেন। এছাড়া বিএনপির অন্তত ৮০ জন বহিষ্কৃত নেতাকর্মীও রয়েছে এ নির্বাচনে। তবে সার্বিক দিক বিবেচনায় উপজেলা নির্বাচনের পরিস্থিতি ভালো রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। সোমবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক আকারে সংশয় নেই। কিছু কিছু জায়গায় সমস্যার কথা আসছে। সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য চাওয়া হচ্ছে সেখানে প্রয়োজন অনুসারে দেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, ভোটার উপস্থিতি ভালো হবে। নির্বাচনি এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার আয়তন, ভোটার সংখ্যা ও ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতি উপজেলায় ২ থেকে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ইসি আগেই দিয়েছে। উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে রয়েছে কোস্ট গার্ড। সোমবার থেকে এসব বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় বেশ কয়েকটি জেলা থেকে বাড়তি সদস্য মোতায়েনের চাহিদা ইসিতে আসছে।
আগামীকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও সরাইল উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে। এ দুই উপজেলায় ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করে জেলার কোর কমিটি। ওই কমিটির আশঙ্কার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে বাড়তি ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিজিবি মোতায়েনে নির্বাচন কমিশনে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। চিঠিতে সরাইলে ৪ প্লাটুন ও নাসিরনগরে ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের জন্য বলা হয়। গতকাল এই দুই উপজেলায় তিন প্লাটুন করে বিজিবি মাঠে নেমেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনে ইসিকে অনুরোধ করার কথা যুগান্তরের কাছে স্বীকার করেন মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, আপাতত তিন প্লাটুন বিজিবি মাঠে রয়েছে। ইসি বাড়তি ফোর্স দিলে তারাও যুক্ত হবেন। তিনি জানান, নাসিরনগর উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়নে ১৪ জন ও সারাইলে ৯টি ইউনিয়নে ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন।
একইভাবে বাড়তি ফোর্স চেয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক। মতলব উত্তর উপজেলায় ৬ প্লাটুন বিজিবি ও র্যাবের ২টি টিম এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ৪ প্লাটুন বিজিবি ও র্যাবের দুটি টিম চেয়েছেন তিনি। কক্সবাজারের সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, রামু ও টেকনাফ উপজেলার জন্য বাড়তি ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছেন ওই জেলার ডিসি। লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার জন্যও বাড়তি বিজিবি চেয়েছেন ওই জেলার প্রশাসক। একইভাবে আরও অনেক উপজেলায় বাড়তি ফোর্স চেয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।