Sylhet ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীর সনদ বাণিজ্য নিয়ে আমি কিছুই জানি না

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ বাণিজ্যের সঙ্গে স্ত্রীর জড়িত থাকার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন বোর্ডের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান।

মঙ্গলবার বিকালে ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা সনদ বাণিজ্যের ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি।

আলী আকবর খান বলেন, আমার স্ত্রী সেহেলা পারভীনের সার্টিফিকেট বাণিজ্যের ঘটনায় আমি কিছুই জানি না। গোয়েন্দা সংস্থা কী তথ্য পেয়েছে, তাও জানি না। আমি মনে করি আমার স্ত্রী বিনা অপরাধেই জেল খাটছে।

তবে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের প্রধান হিসেবে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের দায় অবশ্যই আমি এড়াতে পারি না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বোর্ডের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, একটি ঘটনা ঘটেছে, এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। এক্ষেত্রে আমরা লজ্জিত ও দুঃখিত।

সনদ বাণিজ্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা বের করেছে, এর বেশি কিছু জানি না। সার্টিফিকেটের কাগজ ওয়েবসাইটে পাইনি।

২০ লাখ টাকা ঘুসের বিষয়ে আলী আকবর খান বলেন, এটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এটির তদন্ত চলছে।

কী পরিমাণ সার্টিফিকেট বাণিজ্য হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিডিয়ায় শুনতে পেয়েছি পাঁচ কি সাড়ে পাঁচ হাজার। তবে এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের প্রধান হিসেবে আপনার দায় আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই এর দায় আমি এড়াতে পারি না।

সনদ বাণিজ্য চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে স্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পর গতকাল সোমবার কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আকবর খানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

গত শনিবার উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আকবর খানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে দুদিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সনদ, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র তৈরিতে জড়িত একটি চক্রের সঙ্গে সেহেলা পারভীনের টাকা-পয়সা লেনদেনের ‘প্রমাণ’ পাওয়া গেছে। ওই চক্রটি গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি জাল সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বানিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করেছে।

সেহেলা ছাড়াও এ অভিযোগে আগে আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ টি এম শামসুজ্জামান, একই প্রতিষ্ঠানের চাকরিচ্যুত কর্মচারী ফয়সাল হোসেন, ‘গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটে’ পরিচালক সানজিদা আক্তার কলি, কামরাঙ্গীরচরের হিলফুল ফুযুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা ওরফে মোস্তাফিজুর রহমান এবং যাত্রাবাড়ী এলাকার ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের (মেডিকেল) পরিচালক মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুন (৪০)।

এই পাঁচজনের মধ্যে পুলিশ সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামান ও ফয়সাল হোসেনকে গ্রেফতার করে গত ১ এপ্রিল। তাদের দেওয়া তথ্যে কলিকে কুষ্টিয়া সদর এলাকা থেকে ধরা হয় গত ৫ এপ্রিল। পরে এই তিনজন  আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আর কলির জবানবন্দিতে জাল সনদ জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে সেহেলার জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসে।

গোয়েন্দা পুলিশের ভাষ্য, চেয়ারম্যানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনের সঙ্গে শামসুজ্জামান ও সানজিদা আক্তার কলির ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্ক রয়েছে।

এ চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

নিরীহ কারও নামে মামলা হলে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রত্যাহার: আইজিপি

স্ত্রীর সনদ বাণিজ্য নিয়ে আমি কিছুই জানি না

প্রকাশের সময় : ০২:২৫:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ বাণিজ্যের সঙ্গে স্ত্রীর জড়িত থাকার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন বোর্ডের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান।

মঙ্গলবার বিকালে ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা সনদ বাণিজ্যের ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি।

আলী আকবর খান বলেন, আমার স্ত্রী সেহেলা পারভীনের সার্টিফিকেট বাণিজ্যের ঘটনায় আমি কিছুই জানি না। গোয়েন্দা সংস্থা কী তথ্য পেয়েছে, তাও জানি না। আমি মনে করি আমার স্ত্রী বিনা অপরাধেই জেল খাটছে।

তবে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের প্রধান হিসেবে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের দায় অবশ্যই আমি এড়াতে পারি না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বোর্ডের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, একটি ঘটনা ঘটেছে, এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। এক্ষেত্রে আমরা লজ্জিত ও দুঃখিত।

সনদ বাণিজ্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা বের করেছে, এর বেশি কিছু জানি না। সার্টিফিকেটের কাগজ ওয়েবসাইটে পাইনি।

২০ লাখ টাকা ঘুসের বিষয়ে আলী আকবর খান বলেন, এটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এটির তদন্ত চলছে।

কী পরিমাণ সার্টিফিকেট বাণিজ্য হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিডিয়ায় শুনতে পেয়েছি পাঁচ কি সাড়ে পাঁচ হাজার। তবে এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের প্রধান হিসেবে আপনার দায় আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই এর দায় আমি এড়াতে পারি না।

সনদ বাণিজ্য চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে স্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পর গতকাল সোমবার কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আকবর খানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

গত শনিবার উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আকবর খানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে দুদিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সনদ, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র তৈরিতে জড়িত একটি চক্রের সঙ্গে সেহেলা পারভীনের টাকা-পয়সা লেনদেনের ‘প্রমাণ’ পাওয়া গেছে। ওই চক্রটি গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি জাল সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বানিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করেছে।

সেহেলা ছাড়াও এ অভিযোগে আগে আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ টি এম শামসুজ্জামান, একই প্রতিষ্ঠানের চাকরিচ্যুত কর্মচারী ফয়সাল হোসেন, ‘গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটে’ পরিচালক সানজিদা আক্তার কলি, কামরাঙ্গীরচরের হিলফুল ফুযুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা ওরফে মোস্তাফিজুর রহমান এবং যাত্রাবাড়ী এলাকার ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের (মেডিকেল) পরিচালক মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুন (৪০)।

এই পাঁচজনের মধ্যে পুলিশ সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামান ও ফয়সাল হোসেনকে গ্রেফতার করে গত ১ এপ্রিল। তাদের দেওয়া তথ্যে কলিকে কুষ্টিয়া সদর এলাকা থেকে ধরা হয় গত ৫ এপ্রিল। পরে এই তিনজন  আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আর কলির জবানবন্দিতে জাল সনদ জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে সেহেলার জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসে।

গোয়েন্দা পুলিশের ভাষ্য, চেয়ারম্যানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনের সঙ্গে শামসুজ্জামান ও সানজিদা আক্তার কলির ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্ক রয়েছে।

এ চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।