ডিসকাউন্টে এয়ার টিকিট বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগে একটি চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন- চক্রের মূলহোতা লিটন মিয়া, সহযোগী বিল্লাল হোসেন ও রিয়াজ শেখ।
বৃহস্পতিবার যাত্রাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ডিসকাউন্টে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে জাল টিকিট বিক্রি করতে এরা। আগ্রহীরা টিকিট কিনে বিমানবন্দরে গিয়ে দেখতেন সেগুলো জাল টিকিট। এভাবে গত কয়েকমাসে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বহু টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
শুক্রবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন উর রশিদ এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, কুয়েত প্রবাসী মো. মজনু মিয়া (৪৫) গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মো. হুমায়ুন কবিরকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জানান- তিনি মে মাসে বাংলাদেশে ছুটিতে আসবেন। কুয়েত থেকে বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার টিকিটের মূল্য বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে টিকিট কিনতে বলেন। বাংলাদেশে হুমায়ুন কবিরের কোনো পরিচিত ট্রাভেলস না থাকায় অনলাইনে সান ফ্লাওয়ার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের খোঁজ পান, যেখানে ১৫ পারসেন্ট ডিসকাউন্টে (কুয়েত-ঢাকা-কুয়েত) টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ফেসবুকে দেওয়া সানফ্লাওয়ার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয়, ৯ মে বাংলাদেশে আসার এবং ২৩ জুন কুয়েতে যাওয়ার টিকিট দিতে পারবে তারা। ফোনের অপর প্রান্তের লোকটির নাম জানতে চাইলে সে তার নাম লিটন মিয়া বলে জানায় এবং গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দেখা করতে বলে। লিটনের কথামতো ওইদিন বিকাল সাড়ে ৫টায় ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে লিটন মিয়ার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করলে লিটন মিয়াসহ আরও দুইজন অজ্ঞাতনামা হুমায়ুন কবিরকে জানায়- ১৫ পারসেন্ট ডিসকাউন্টে কুয়েত থেকে বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার জন্য আল-জাজিরা বিমানের টিকিট দিতে পারবে। তত্ক্ষণাত্ হুমায়ুন কবির মজনু মিয়ার সঙ্গে কথা বলে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও পাসপোর্টের ফটোকপি দেন। বাকি ৪৭০০০ টাকা লিটনের দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে পরিশোধ করেন। টাকা পাওয়ার পর চক্রটি মজনু মিয়ার হোয়াটসঅ্যাপে আল জাজিরা বিমানের টিকিটের কপি পাঠায়। পরবর্তীতে যাচাইকালে দেখা যায়, টিকিটটি জাল। এরপর লিটনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে সে হোয়াটসঅ্যাপে মজনু মিয়াকে ব্লক করে দেয়।
ডিবির হারুন আরও বলেন, চতুর্থ শ্রেণি পাশ সাবেক পোশাক শ্রমিক লিটন মিয়া ২০১২ সালে কুয়েতে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিল। বাংলাদেশে এসে ভিসার কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে একজন লিটনের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশ চলে গেলে সে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে প্রতারণায় জড়ায়। এর প্রেক্ষিতে লিটন প্রাথমিকভাবে ফেসবুকে সানফ্লাওয়ার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি পেজ খুলে ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে টিকিট বিক্রির কথা বলে পোস্ট দেয়। বিভিন্ন বুস্টিং এজেন্সি দ্বারা তার এই পোস্টকে বুস্ট করায়। তার চটকদার বিজ্ঞাপনে বিদেশে কর্মরত শ্রমজীবী লোকজন আকৃষ্ট হয়ে ফেসবুকে দেওয়া ফোন নম্বরে, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে। তাদের মধ্য থেকে লিটন টার্গেট বাছাই করে ডিসকাউন্ট প্রাইজে টিকিট বিক্রির টোপ ফেলে।
হারুন অর রশীদ জানান, লিটন কাস্টমারদেরকে তার অফিস সিটি সেন্টারে লিফটের ১১তে বলে জানায় এবং কাস্টমারের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দেয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দেখে লোকজন আকৃষ্ট হয়ে ফাঁদে পা দেয়। অ্যাকাউন্ট নম্বর খোলার জন্য তার নিজ ভগ্নিপতি বিল্লালকে ব্যবহার করে। লিটনের অবর্তমানে কাস্টমারদের সঙ্গে রিয়াজ কথা বলে। ক্রেতাদের টাকা পেয়ে তাদেরকে হোয়াটসঅ্যাপে ব্লক করে দেয়।
ডিবির হারুনের দাবি, তদন্তে জানা গেছে- গত কয়েক মাসে লিটন চক্র আনুমানিক চার লাখ লোকের সঙ্গে বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রতারণার টোপ ফেলেছে। প্রতি মাসে তার আনুমানিক আয় তিন লাখ টাকা বলে সে ডিবিকে জানিয়েছে। লিটনের নামে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানায় তিনটি প্রতারণার মামলা ও বরগুনায় একটি নারী নির্যাতনের মামলা রয়েছে।