হিট স্ট্রোক মানে হলো অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা ১০৪ -১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর উপরে উঠে যাওয়া যা সাধারণত প্রচন্ড জ্বর হলে হয়। তীব্র গরম এ শরীরের কোলিং সিস্টেম অকেজো হয়ে এমন হয়। আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ সেলসিয়াস বা ৯৮’৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
হিট স্ট্রোকের ফলে যে সমস্ত লক্ষন দেখা যায় তা হলো, অস্বাভাবিক মানসিক আচরণ যেমন কনফিউশান, বিড় বিড় করা, অসংলগ্ন কথাবার্তা বলা, হ্যালুসিনেশন, মাথাব্যথা, মাথা ঝিম ঝিম করা, মাথা ঘোরানো, হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলা।
হিট স্ট্রোকে মুলত শরীরের কুলিং সিস্টেম ফেইল করে। এতে ঘাম কমে গিয়ে শরীর শুষ্ক হয়ে যায়, তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। আক্রান্তের বমি বমি ভাব হয়, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, হার্ট বিট বা হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, ডিহাইড্রেশন এর ফলে ইলেকট্রলাইটস ইম ব্যালেন্স হয়, ডেলিরিয়াম হয়। অজ্ঞান হয়ে যায় যান এমন কি শুরু হতে পারে খিচুনি। মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ফলমূল কি হিট স্ট্রোকের জন্যে উপকারী?
রসালো ফল খাওয়া হিট স্ট্রোকের জন্যে উপকারী হলেও কিছু কিছু ফল হিট স্ট্রোকে বিপদ ডেকে আনতে পারে। হিট স্ট্রোকের জন্যে কোন ফল উপকারী এবং কোন ফল অপকারী এটা না জেনে ফল খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
হিট স্ট্রোকে এড়াতে উপকারী ফল কোন গুলো?
সাধারণত কম ক্যালরি যুক্ত, বা কম ক্যালরি উৎপাদনকারো এবং কম চিনিযুক্ত রসালো ফল হিট স্ট্রোকের জন্যে উপকারী। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে শসা, জাম্বুরা, আনারস, তরমুজ। এছাড়া নাশপাতি, কাঁচা আম (সবুজ আম), কাচা পেপে (সবুজ পেপে), আপেল, স্ট্রবেরি, জাম্বুরা, লেবু অত্যন্ত উপকারী। এসব ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা শরীরের জন্যে খুবই উপকারী। তাৎক্ষণিক লেবুর শরবত, বা ডাবের পানি ইলেকট্রোলাইটস ইমব্যালেন্স কারেকশন করতে পারে দ্রুত।
হিট স্ট্রোকের জন্যে অপকারী বা ক্ষতিকর ফল কোন গুলো?
সাধারণত প্রচুর চিনিযুক্ত ফল এবং উচ্চ ক্যালরি উৎপন্নকারী ফল যেমন পাকা কাঠাল, পেয়ারা, পাকা আম, আঙ্গুর, লংগান, লিচু, পাকা কলা, পাকা পেঁপে (হলুদ পেপে), লাল ডালিম, মিষ্টি তেঁতুল, পেয়ারা হিট স্ট্রোকের সময় বা প্রচন্ড গরমে খাওয়া ক্ষতিকর।
মনে রাখবেন পাঁকা পেপে ও পাঁকা কাঠাল হিট স্ট্রোকের বিপত্তি বাড়িয়ে দিবে এবং এ সময় গরম পানীয় যেমন চা বা কফি পান ডেকে আনতে পারে বিপদ।
হিট স্ট্রোকে করণীয়?
যেহেতু হিট স্ট্রোক মানে হলো শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছে, শরীর নিজে থেকে তার তাপমাত্রা কমাতে পারছেনা তাই এ সময়ে শরীর কে ঠান্ডা করা প্রথম কাজ। এজন্যে দ্রুত ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া, ঠান্ডা, ছায়া ও বাতাস যুক্ত স্থানে বিশ্রাম নেয়া, ঠান্ডা পানি দিয়ে তোয়ালে বা গামছাকে ভিজিয়ে ঘাড়, মাথা, উরু স্পঞ্জিং করা।
ঘাড়ে ঠান্ডা পানিতে ভিজানো রুমাল রাখা উপকারী। ডিহাইড্রেশন, ইলেকট্রলাইটস এবং পিপাসা কমাতে নরমাল ঠান্ডা পানি, লেবুর শরবত এবং খাবার স্যালাইন খুবই উপকারী। তবে খাবার স্যালাইন নিয়ম মতো বানাতে হবে।
লেখক:
ডা. মো. সাঈদ এনাম
এম বি বি এস (ডিএমসি) এমফিল (সাইকিয়াট্রি)
সহকারী অধ্যাপক সাইকিয়াট্রি
ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন