বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এবং ILO কনভেনশন লঙ্ঘন করে গত ৩১ মাস যাবত শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন দেয়নি বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাইনোভিয়া ফার্মা পিএলসি। এই দীর্ঘ সময় ধরে কোম্পানিটি ৩৮০ জন শ্রমিক কর্মচারীর বেতন বন্ধ রেখেছে বলে দাবি করেছে সাইনোভিয়ার ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন।
সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুরে বেতন-ভাতা বন্ধের প্রতিবাদে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সাইনোভিয়া ফার্মার কার্যালয়ের সামনে গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে কোম্পানিটির শ্রমিক কর্মচারীরা। গত কয়েকদিন ধরে সেখানে বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষাভ করছেন।
এসময় কোম্পানিটির ওয়ার্কার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহমুদ হাসান জানান, বিভিন্ন ছলচাতুরী মূলক আশা দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বেতন দেয়ার নামে কর্মচারীদের সাথে প্রতারণা করছে কোম্পানিটি। কোম্পানিটির সাবেক এমডি এবং বর্তমান চিফ অপারেটিং অফিসার মইনুদ্দিন মজুমদার বার বার আশ্বাস দিলেও পরে তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমাদের অফিসের ভেতর ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, সর্বদা ক্ষমতার দাপটে দেখিয়ে তারা আমাদেরকে দমিয়ে রাখতে চেয়েছে। দিনের পর দিন আমারা এখানে দাঁড়িয়ে থেকেও কোন ফল পাইনি। আমরা আমাদের ৩১ মাসের বকেয়া বেতন চাই। আমাদের সকলের পরিবার আছে। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। দেশে নতুন সরকার এসেছে। আমরা আশা করি, তারা আমাদের প্রতি যে অবিচার করা হচ্ছে তার একটি প্রতিকার করবেন।
তিনি জানান, তারা আগামীকাল দুপুর ১২ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতির সামনে বিষয়টি তুলে ধরবেন।
অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব চক্রবর্তী অর্থসূচককে বলেন, বেক্সিমকো ফার্মা সানোফিকে কিনে নেওয়ার পর থেকে আমাদেরকে অফিসে ঢুকতে দিচ্ছে না। তারা আমাদেরকে টার্মিনেটও (চাকরিচ্যুত) করেনি। কিন্তু বেতনও দিচ্ছে না। সুপ্রিমকোর্ট একটি মামলায় সাবেক সানোফির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারিকে বরখাস্ত না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশনাও মানছেন না।
অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য আতাউর রহমান বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে আমাদের বেতন বাকী। এ নিয়ে আমরা অনেক আন্দোলন করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার কোনো পরোয়া করছে না। গত বছর আমরা অফিসে প্রবেশ করে অবস্থান ধর্মঘটে গিয়েছিলাম। কিন্তু রাতে স্থানীয় থানার পুলিশ সঙ্গে নিয়ে এসে বেক্সিমকোর একজন কর্মকর্তা আমাদেরকে আধা ঘণ্টার মধ্যে বের হয়ে যেতে বলেন; নইলে সবার বিরুদ্ধে অফিসে হামলার অভিযোগ এনে পুলিশে দেওয়া হবে বলে হুমকী দেন। ভয়ে আমরা কর্মসূচি বাতিল করে ফিরে যেতে বাধ্য হই।
আজ অবস্থান কর্মসূচির ফাঁকে কয়েকবার বিক্ষুব্দ ব্যক্তিরা সাইনোভিয়ার অফিসে প্রবেশের জন্য প্রধান ফটকে ধাক্কাধাক্কি করেন। তারা ফটকের সামনে থেমে থেমে শ্লোগান দেন। খবর পেয়ে শিল্পকলা একাডেমি অবস্থান করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে আসেন। তারা আন্দোলনকারীদেরকে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না করার বিষয়ে সতর্ক করে দেন। সন্ধ্যার কিছু আগে আন্দোলনকারীরা ফিরে যায়।
এ বিষয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের কারো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন সাম্প্রতিক সরকার পরিবর্তনের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন।
উল্লেখ, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড প্রায় ৪১১ কোটি টাকায় সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডের ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। সানোফি হচ্ছে ফ্রান্সভিত্তিক একটি বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি। কোম্পানিটি ১৯৫৮ সালে মে অ্যান্ড বেকার নামে এ দেশে ব্যবসা শুরু করে। দীর্ঘ ছয় দশকের এ পথচলায় বেশ কয়েকবার নাম বদল করেছে বাংলাদেশে সানোফির এই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। ২০০৪ সালে তিনটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান অ্যাভেন্টিস বাংলাদেশ লিমিটেড, ফাইসন্স (বাংলাদেশ) লিমিটেড এবং হোয়েকস্ট বাংলাদেশ ম্যারিয়ন রোজেল লিমিটেড একীভূত হয়ে সানোফি-অ্যাভেন্টিস বাংলাদেশ নাম নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ২০১৩ সালে কোম্পানিটির নাম বদলে সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড রাখা হয়।
অন্যদিকে বেক্সিমকো ফার্মা কোম্পানিটি কিনে নেওয়ার পর ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে সাইনোভিয়া ফার্মা পিএলসি নাম রাখে।