সিলেটে সৎপূত্রদের অপতৎপরতা ও অত্যাচারে স্বামীর সম্পদ থেকে বঞ্চিত এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মিথ্যা অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা ও হামলায় তিনি এবং তার পক্ষের লোকজনের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন নগীরর সুবিদবাজারের বনকলাপাড়াস্থ ৭৮ নূরানী আবাসিক এলাকার বীরমুক্তিযোদ্ধা ও সরকারি চাকরিজীবী মরহুম সৈয়দ তছির আহমদের (তস্তই) তৃতীয় স্ত্রী সমছুন্নেহার সমছুন।
সংবাদ সম্মেলনে তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার সৎপূত্র আবু নাঈম আজাদ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার আরও দু’জন সতিন ও তাদের সন্তান আছে। এরমধ্যে বড় সতিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রুনি বেগম ও তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আবুল হাসনাত আজাদ ও লাকি এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী এনামুল আজাদ জাকির ও আব্দুস সামাদ আজাদ, আমি ও আমার সন্তানকে স্বামীর সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমার মেজো সতিনের ছোটো ছেলে আবু নাঈম আজাদ আমার পক্ষে থাকায় তারা তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে মেজো সতিন, তার ছোটো ছেলে নাঈম ও মেজো ছেলে ফাহিমকে আসামি করে জালিয়াতির মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলটি তদন্ত শেষে আদালত খারিজ করে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পিবিআই প্রতিবেদনে আমার স্বামীর উত্তরাধিকারী হিসাবে আমি ও আমার মেয়েসহ ১৫ জন বলে উল্লেখ করে। ২০১৭ সালে সমাজসেবা অফিসে অসত্য তথ্য দিয়ে আমার পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা স্থগিত করায় তারা। তবে তদন্ত শেষে ৩ সতিনের মধ্যে সমানভাবে ভাতার টাকা বন্টন করে হয়। কিন্তু আমার স্বামীর পেনশনের টাকা ও বাড়ির ন্যায্য অংশ থেকে আমরা বঞ্চিত। মেজো সতিনের বড় ছেলে শাহীন আজাদ খোকনকে তারা অর্থ দিয়ে আমাদের বিপক্ষে লেলিয়ে দিয়েছে। সে বাদী হয়ে ২০২৩ সালে আমি ও আমার মেয়েকে আসামি করে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে (বিয়ানীবাজার) একটি মামলা (নং ৮৮/২৩) দায়ের করে। মামলাটি তদন্ত শেষে আদালত খারিজ করে দেন। সে তার সহোদর নাঈমের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলাও (নং ৪/২৩) দায়ের করে। এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। তদন্ত কর্মকর্তা অতীতের সব কাগজপত্র প্রমাণাদি দেখেও আমাদের বঞ্চিত করে নাঈমের বিপক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, টাকার কাছে ওই তদন্ত কর্মকর্তা তার বিবেক বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। নইলে দু’দুটি পিবিআই’র প্রতিবেদন ও সমাজসেবা অফিসের তদন্তে প্রমানিত সত্যে বিরুদ্ধে তিনি কীভাবে এমন প্রতিবেদন দেন? এই মামলায় নাঈম গ্রেপ্তার হয় এবং ১ মাস ১৮ দিন পর সে জামিনে বের হয় ১ ফেব্রুয়ারি। সেদিন নাঈমের মা ও বোন রুজিনার উপর ৫ নং বারের সামনে খোকন চড়াও হয়। তার সঙ্গে ছিলেন জাহেদুল আজাদ জুয়েল, মাহেবুল আজাদ লিটন ও শাহিন আহমদ। তারা ৩ মাসের গর্ভবতী রুজিনার পেটে লত্থি ও কিল ঘুষি মারে। রুজিনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ডাক্তাররা জানান, তার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে গত ৫ ফেব্রুয়ারি খোকনের মা সাহেনা বেগম (৬০) নিজে বাদি হয়ে সিলেট মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে একটি মামলা (নং কোতোয়ালি সিআর, ১১৬/২০২৪) দায়ের করেছেন। এতেও ক্ষান্ত হয়নি খোকন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি অপর একটি মামলায় হাজিরা দিতে এলে ৫ নং বার হলের সামনে আবারও নাঈমের উপর চড়াও হয়। এ ব্যাপারেও জিডি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এর বাইরেও আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগে অন্তত ১৯/২০টা মামলা দিয়ে অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের হত্যার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। আমার মেয়ে রুজিনার নামে মিথ্যা ফেসবুক আইডি খুলে নানা অসম্মানজনক পোস্টও দিচ্ছে তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সমছুন্নেহার সমছুন ন্যায়বিচার প্রার্থনা করার পাশাপাশি রুনি বেগম ও তার দুই ছেলে এবং খোকনকে ভাইয়ে-ভাইয়ে হানাহানি, মামলা দিয়ে হয়রানি থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তার মেয়ে এবং ভাগ্না ময়না মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বুধবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাব থেকে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক ইমেইলে সংবাদ সম্মেলনের এই তথ্য জানানো হয়।ফলে উল্লিখিত বিষয়ে কোন পক্ষ থেকে স্বতন্ত্রভাবে অনুসন্ধান এবং কারো কোন বক্তব্য নেওয়া হয়নি।