Sylhet ১০:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসে স্বাস্থ্য সহকারী পদ নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ

সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসে স্বাস্থ্য সহকারী পদ নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অর্ধশতাধিক পরীক্ষার্থী সিভিল সার্জনের কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন করেছেন। সকাল ১০টা থেকেই চাকুরি প্রার্থীরা অফিসের বারান্দার ভিড় করছিলেন। আবেদনকারীরা এসব অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যম অফিসে অফিসেও গিয়ে ভিড় করেছেন। বঞ্চিত চাকুরি প্রার্থীরা জানান, স্বাস্থ্য সহকারী পরীক্ষার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর পর থেকেই নানা বিষয়ে সন্দেহ হচ্ছিল তাদের। নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর সকলেরই এই সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। এ কারণে পুরো প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসে ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর ও ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট দুটি পৃথক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ২৩৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে স্বাস্থ্য সহকারী পদে ১৯৩ জন, সাট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর এক জন, অফিস সহকারী ১৬ জন, পরিসংখ্যানবিদ আট জন, কীটতত্ত্বীয় টেকনেশিয়ান দুই জন, স্টোরকিপার আটজন ও ড্রাইভার আট জন।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সব কয়টি পদে ৩৮ হাজার ৩১৪ জন নিয়োগ প্রার্থী আবেদন করে। এরমধ্যে কেবল স্বাস্থ্য সহকারী পদে আবেদন করে ১২ হাজার ৫৯ জন। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয় ১০ হাজার ২৬৮ জন। উত্তীর্ণ হয় এক হাজার ৫২ জন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে গেল সাত মে ১৯৩ জনকে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ জানিয়ে দেওয়া হয় ।

চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর নিয়োগ বঞ্চিত অর্ধশতাধিক চাকুরী প্রার্থী পরীক্ষায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা হয়েছে দাবি করে লিখিত অভিযোগে জানায়, পরীক্ষার্থীরা জানায়, লিখিত পরীক্ষার ফলাফল গেল ২৫ এপ্রিল প্রকাশের পর ২৬ এপ্রিল ও ২৯ এপ্রিল দুই দফায় সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করায় সন্দেহ তৈরি হয় তাদের। পরে চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেছে নানা অনিয়ম ও ভুলে ভরা রয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ভিত্তিক হলেও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে বহু ওয়ার্ডে। এই অবস্থায় পুরো বিষয়টির পুনঃ নিরীক্ষণ দাবি করেছেন নিয়োগ প্রার্থীরা।

জেলার মধ্যনগরের বংশিকুণ্ডা ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা খোকন মিয়া সিলেট এমসি কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন। বললেন, আমি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। আমাদের ওয়ার্ডের চারজন নিয়োগ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। কিন্তু নিয়োগ হয়েছে তিন নম্বর ওয়ার্ডের আরেকজনের। অথচ, এটাই আমার শেষ পরীক্ষা ছিল। আমার বয়স সীমা শেষ, আমি আর সরকারি চাকুরিতে আবেদন করতে পারবো না।

শান্তিগঞ্জের পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা একজন নিয়োগ প্রার্থী (নাম প্রকাশ করতে আপত্তি রয়েছে) জানান, তিনি সিলেটের এসসি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন দুই বছর আগে। তার চাকুরির বয়সসীমা শেষ। তার ওয়ার্ড থেকে চারজন পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এরমধ্যে ফলাফলের সময় অন্য আরেকজনকে এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেখিয়ে উত্তীর্ণ দেখানো হয় এবং তাকেই মৌখিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে।

আরেকজন নিয়োগ প্রত্যাশী বললেন, লিখিত পরীক্ষার ফল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় ২৫ এপ্রিল। ২৬ এপ্রিল আবার সংশোধিত ফলাফল দেখিয়ে জগন্নাথপুরের দুইজনের নম্বর দিয়ে উত্তীর্ণ দেখানো হয়। ২৯ এপ্রিল আবার দিরাইয়ের কয়েকজনকে উত্তীর্ণ দেখিয়ে সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। দুটি সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। এই দুই তালিকা থেকেই দুইজন মৌখিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছে। এই পরীক্ষার্থী বললেন, আমরা মনে করছি দুইজনকে চাকুরি দেবার জন্যই এভাবে সংশোধনী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই সময় দুইজনের বাইরে অন্যদের রোল দেওয়া হয়, প্রক্রিয়াটিকে বিশ^াসযোগ্য করার জন্য।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ড থেকে চারজন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। কিন্তু নিয়োগ হয়েছে পাঁচ কিলোমিটার দূরের অন্য ওয়ার্ডের একজনের জানিয়ে লিখিক অভিযোগ দিয়েছেন চাকরী প্রার্থী এই ওয়ার্ডের মনিকা তালুকদার ও বাবলু দাস। এরা দুজনেই বললেন, এখানে অনিয়ম হয়েছে। আমরা বিষয়টির সংশোধন চাই।

বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের সুজলা আক্তার ও একই ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের সালমা আক্তারও একই ধরণের অনিয়মের অভিযোগ করে পরীক্ষাসহ সকল কাগজপত্র পূনঃ নিরীক্ষার দাবি করেছেন।

বৃহস্পতিবার ছাতকের নোয়ারাই ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের একজন চাকুরী প্রার্থী সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, নোয়ারাই ইউনিয়নের পুরাতন দুই নম্বর ওয়ার্ড (বর্তমানে ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড) এর বাসিন্দা দেখিয়ে ছাতক পৌরসভার বাসিন্দা মৃগাংক নাগ মিঠু চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার এই নির্বাচনেও নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে অভিযোগকারী দাবি করেছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জেলা সদরে অনুষ্ঠিত বড় এই নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজক কমিটির সভাপতি ছিলেন, সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক এবং সদস্য সচিব ছিলেন সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন। অন্য আরও তিনজন সদস্য ছিলেন।

সিভিল সার্জন অফিসের একজন কর্মচারী জানালেন, বৃহস্পতিবারই ২৫ জন চাকুরি প্রার্থী স্বাস্থ্য সহকারী পদে নিয়োগে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে উল্লেখ করে অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে বুধবারও আরও কয়েকজন অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন।

সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন বললেন, আমরা দক্ষতার সঙ্গে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। ভুলত্রুটি থাকলে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ হলেও পরে তা সংশোধন হবে। কেউ ভুল তথ্য দিলে গোয়েন্দা রিপোর্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে। লিখিত পরীক্ষার সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি জগন্নাথপুর ও দিরাইয়ের দুইবার প্রকাশ এবং ওই নম্বর থেকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এর নম্বরে ডিজিট ব্যবধান ছিলো, শূন্য কম বেশি ছিল। এসব কারণে সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। আমাদের কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না।

এতো ভুল কেন হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন এটিও বলেন, আমাদের লোকজন নিয়োগ পরীক্ষায় এতোটা দক্ষ ছিল না। তাছাড়া আমাদের অনেক স্টাফদের সন্তান পরীক্ষা দিচ্ছিল। এজন্য তাদের নিয়োগ কার্যক্রম থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছিল।

  1. সুত্র-সুনামগঞ্জের খবর

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জগন্নাথপুর যুব জমিয়তের নবনির্বাচিত কমিটির পরিচিতি শপথ অনুষ্ঠিত

সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসে স্বাস্থ্য সহকারী পদ নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ০৫:২৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪

সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসে স্বাস্থ্য সহকারী পদ নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অর্ধশতাধিক পরীক্ষার্থী সিভিল সার্জনের কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন করেছেন। সকাল ১০টা থেকেই চাকুরি প্রার্থীরা অফিসের বারান্দার ভিড় করছিলেন। আবেদনকারীরা এসব অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যম অফিসে অফিসেও গিয়ে ভিড় করেছেন। বঞ্চিত চাকুরি প্রার্থীরা জানান, স্বাস্থ্য সহকারী পরীক্ষার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর পর থেকেই নানা বিষয়ে সন্দেহ হচ্ছিল তাদের। নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর সকলেরই এই সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। এ কারণে পুরো প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসে ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর ও ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট দুটি পৃথক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ২৩৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে স্বাস্থ্য সহকারী পদে ১৯৩ জন, সাট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর এক জন, অফিস সহকারী ১৬ জন, পরিসংখ্যানবিদ আট জন, কীটতত্ত্বীয় টেকনেশিয়ান দুই জন, স্টোরকিপার আটজন ও ড্রাইভার আট জন।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সব কয়টি পদে ৩৮ হাজার ৩১৪ জন নিয়োগ প্রার্থী আবেদন করে। এরমধ্যে কেবল স্বাস্থ্য সহকারী পদে আবেদন করে ১২ হাজার ৫৯ জন। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয় ১০ হাজার ২৬৮ জন। উত্তীর্ণ হয় এক হাজার ৫২ জন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে গেল সাত মে ১৯৩ জনকে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ জানিয়ে দেওয়া হয় ।

চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর নিয়োগ বঞ্চিত অর্ধশতাধিক চাকুরী প্রার্থী পরীক্ষায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা হয়েছে দাবি করে লিখিত অভিযোগে জানায়, পরীক্ষার্থীরা জানায়, লিখিত পরীক্ষার ফলাফল গেল ২৫ এপ্রিল প্রকাশের পর ২৬ এপ্রিল ও ২৯ এপ্রিল দুই দফায় সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করায় সন্দেহ তৈরি হয় তাদের। পরে চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেছে নানা অনিয়ম ও ভুলে ভরা রয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ভিত্তিক হলেও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে বহু ওয়ার্ডে। এই অবস্থায় পুরো বিষয়টির পুনঃ নিরীক্ষণ দাবি করেছেন নিয়োগ প্রার্থীরা।

জেলার মধ্যনগরের বংশিকুণ্ডা ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা খোকন মিয়া সিলেট এমসি কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন। বললেন, আমি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। আমাদের ওয়ার্ডের চারজন নিয়োগ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। কিন্তু নিয়োগ হয়েছে তিন নম্বর ওয়ার্ডের আরেকজনের। অথচ, এটাই আমার শেষ পরীক্ষা ছিল। আমার বয়স সীমা শেষ, আমি আর সরকারি চাকুরিতে আবেদন করতে পারবো না।

শান্তিগঞ্জের পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা একজন নিয়োগ প্রার্থী (নাম প্রকাশ করতে আপত্তি রয়েছে) জানান, তিনি সিলেটের এসসি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন দুই বছর আগে। তার চাকুরির বয়সসীমা শেষ। তার ওয়ার্ড থেকে চারজন পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এরমধ্যে ফলাফলের সময় অন্য আরেকজনকে এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেখিয়ে উত্তীর্ণ দেখানো হয় এবং তাকেই মৌখিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে।

আরেকজন নিয়োগ প্রত্যাশী বললেন, লিখিত পরীক্ষার ফল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় ২৫ এপ্রিল। ২৬ এপ্রিল আবার সংশোধিত ফলাফল দেখিয়ে জগন্নাথপুরের দুইজনের নম্বর দিয়ে উত্তীর্ণ দেখানো হয়। ২৯ এপ্রিল আবার দিরাইয়ের কয়েকজনকে উত্তীর্ণ দেখিয়ে সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। দুটি সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। এই দুই তালিকা থেকেই দুইজন মৌখিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছে। এই পরীক্ষার্থী বললেন, আমরা মনে করছি দুইজনকে চাকুরি দেবার জন্যই এভাবে সংশোধনী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই সময় দুইজনের বাইরে অন্যদের রোল দেওয়া হয়, প্রক্রিয়াটিকে বিশ^াসযোগ্য করার জন্য।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ড থেকে চারজন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। কিন্তু নিয়োগ হয়েছে পাঁচ কিলোমিটার দূরের অন্য ওয়ার্ডের একজনের জানিয়ে লিখিক অভিযোগ দিয়েছেন চাকরী প্রার্থী এই ওয়ার্ডের মনিকা তালুকদার ও বাবলু দাস। এরা দুজনেই বললেন, এখানে অনিয়ম হয়েছে। আমরা বিষয়টির সংশোধন চাই।

বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের সুজলা আক্তার ও একই ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের সালমা আক্তারও একই ধরণের অনিয়মের অভিযোগ করে পরীক্ষাসহ সকল কাগজপত্র পূনঃ নিরীক্ষার দাবি করেছেন।

বৃহস্পতিবার ছাতকের নোয়ারাই ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের একজন চাকুরী প্রার্থী সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, নোয়ারাই ইউনিয়নের পুরাতন দুই নম্বর ওয়ার্ড (বর্তমানে ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড) এর বাসিন্দা দেখিয়ে ছাতক পৌরসভার বাসিন্দা মৃগাংক নাগ মিঠু চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার এই নির্বাচনেও নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে অভিযোগকারী দাবি করেছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জেলা সদরে অনুষ্ঠিত বড় এই নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজক কমিটির সভাপতি ছিলেন, সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক এবং সদস্য সচিব ছিলেন সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন। অন্য আরও তিনজন সদস্য ছিলেন।

সিভিল সার্জন অফিসের একজন কর্মচারী জানালেন, বৃহস্পতিবারই ২৫ জন চাকুরি প্রার্থী স্বাস্থ্য সহকারী পদে নিয়োগে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে উল্লেখ করে অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে বুধবারও আরও কয়েকজন অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন।

সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন বললেন, আমরা দক্ষতার সঙ্গে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। ভুলত্রুটি থাকলে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ হলেও পরে তা সংশোধন হবে। কেউ ভুল তথ্য দিলে গোয়েন্দা রিপোর্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে। লিখিত পরীক্ষার সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি জগন্নাথপুর ও দিরাইয়ের দুইবার প্রকাশ এবং ওই নম্বর থেকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এর নম্বরে ডিজিট ব্যবধান ছিলো, শূন্য কম বেশি ছিল। এসব কারণে সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। আমাদের কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না।

এতো ভুল কেন হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন এটিও বলেন, আমাদের লোকজন নিয়োগ পরীক্ষায় এতোটা দক্ষ ছিল না। তাছাড়া আমাদের অনেক স্টাফদের সন্তান পরীক্ষা দিচ্ছিল। এজন্য তাদের নিয়োগ কার্যক্রম থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছিল।

  1. সুত্র-সুনামগঞ্জের খবর