সুনামগঞ্জে বন্যায় প্রায় আট হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখ পড়েছেন মাছচাষিরা। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা দাবি করেছেন তারা।
মাছ চাষি সুনুর আলীর বাড়ি সদর উপজেলার কালিপুর গ্রামে। তার দুইটা পুকুরের প্রায় দশ লাখ টাকার মাছ ভেসে যাওয়ায় এখন চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন তিনি।
কান্নাজড়িত গলায় তিনি বলেন, “আমার এখন পথে বসার অবস্থা। দুইটা পুকুরের সব মাছ ভেসে গেছে। প্রায় দশ লাখ টাকার ক্ষতি হইছে। এই ক্ষতি আমি পোষাবো কি দিয়া।?”
একই উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের মাছের খামারি মুসলিম উদ্দিন বলছিলেন, “আমার তিনটা পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ২০২২ সালের বন্যায় আমার প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হইছিল। তাই এবার পাহাড়ি ঢল দেখে কয়েকটি পুকুরের মাছ আগেই তুলে ফেলছিলাম।
“দুইটা পুরেরর মাছ তুলতে পারি নাই। ওই দুই পুকুরের প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।”
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৯৫০ পুকুর, দিরাইয়ের ১০টি ইউনিয়নের ২২০টি পুকুর, ছাতকের ১০টি ইউনিয়নের ৯৮০টি পুকুর, ধর্মপাশার ৬টি ইউনিয়নের ৩৪৬টি পুকুর, জগন্নাথপুরের ৯টি ইউনিয়নের ৯০০টি পুকুর, বিশ্বম্ভরপুরের ৫টি ইউনিয়নের ৮৬০টি পুকুর, তাহিরপুরের ৭টি ইউনিয়নের ৩৪০টি পুকুর, দোয়ারাবাজারের ৯টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৬০০ পুকুর, শাল্লার ৪টি ইউনিয়নের ১৫০ পুকুর, জামালগঞ্জের ৬টি ইউনিয়নের ৫৮০ পুকুর এবং শান্তিগঞ্জের ৮টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৯৫টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামসুল করিম বলেন, “গত ১৬ জুন থেকে ২০ জুনের মধ্যে সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে ৮৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১ হাজার ২২৫ হেক্টর আয়তনের প্রায় ৮ হাজার পুকুর ডুবে যায়। ভেসে যায় বিভিন্ন ধরনের মাছ।
এসব পুকুরে ভেসে যাওয়া মাছ ও পোনার আনুমানিক বাজারমূল্য ৭২ কোটি ১২ লাখ টাকা বলে জানান শামসুল।
বন্যায় মাছ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি পুকুর ও খামারের অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার হাসাননগর এলাকার চাষি রফিকুল ইসলাম কালা ব্যাংক থেকে সুদে ঋণ নিয়ে দুইটি পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন। ঈদের পরদিনই দুটি পুকুরের ডুবে মাছ ভেসে যাওয়ায় কিস্তি পরিশোধের দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে তার।
রফিকুল বলেন, “এখন কিভাবে কিস্তি পরিশোধ করবো আর কিভাবে পুকুর মালিকের ভাড়া পরিশোধ করবো, ভেবে কূল পাচ্ছিনা।”
এ প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ও চাষিদের তালিকা করছি। সরকারি সহায়তা পেলে তাদের বিতরণ করা হবে।”
#বিডিনিউজ