Sylhet ১০:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে ঝড় ও বজ্রাপাতের অঞ্চল

আবুল কাশেম রুমন,সিলেট::

গত কয়েক দিনে সিলেট জুড়ে ঝড় ও বজ্রপাত বেশি হচ্ছে। দিন কিংবা রাতেই বজ্রপাত হতে দেখা যায়, বৃষ্টির পরিমানও মাত্রারিক্ত।

দ্য অ্যাটমোস্ফিয়ার সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘রিসেন্ট ক্লাইমেটোলজি অব থান্ডারস্টর্ম ডেজ ওভার বাংলাদেশ’ নামের গবেষণায় গেছে, সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে বজ্রঝড়ের বার্ষিক দিনের সংখ্যা সবচেয়ে  বেশি। সিলেটে সংখ্যা যথাক্রমে ১৩৬ ও ১১৬ জন ধরা হয়।
শুধু সিলেট নয় দেশেও বেড়েছে বজ্রপাত ও বজ্রঝড়। এ বছরের মে মাসে দেশে বজ্রপাতে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের দুই বছরে এ মাসে বজ্রপাতে এত মৃত্যু হয়নি। দেশে এ বছর (১০ জুন পর্যন্ত) ১২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এ দুর্যোগে। বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা সাধারণত নভেম্বর মাস পর্যন্ত ঘটে। গত বছর মৃত্যু হয়েছিল ২৮০ জনের। মে মাস ছাড়াও এখন জুন মাসে মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। দেখা গেছে, বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে কৃষকের সংখ্যাই বেশি।
বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে সরকারি নানা উদ্যোগ আছে। এরই মধ্যে একে দুর্যোগও ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও মৃত্যু কমছে না। ভুল প্রকল্প, বড় গাছ কাটা বন্ধ না হওয়া এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরির চেষ্টা না থাকায় মৃত্যু রোধ হচ্ছে না-বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করেন।
দেশের বজ্রপাত পরিস্থিতি এবং এতে হতাহতের ঘটনা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরাম। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে, ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৮৭০ জনের। অর্থাৎ প্রতি বছর ২৭৬ জনের বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন ২০২১ সালে, ৩৮১ জন। ওই বছরের মে মাসে বজ্রপাতে সর্বোচ্চ ১২০ জনের মৃত্যু হয়।
এর আগে মে মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় ১৫৮ জনের, ২০১৮ সালে। দেশে কোনো একটি মাসে বজ্রপাতে এত মৃত্যুর ঘটনা আর ঘটেনি। গত বছরের মে মাসে (২০২৩) ৬৮ জন এবং এর আগের বছর (২০২২) মে মাসে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়।
খোলা প্রান্তরে বড় গাছ কেটে উজাড় করে ফেলা এবং নতুন কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা না রাখার কারণেই দিন-দিন বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করেন দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ আবদুল লতিফ খান। তিনি বলেন, আমরা পুরোনো গাছ রক্ষা করছি না। গাছ উজাড় হলেও এর বিরুদ্ধে কোনো তৎপরতা নেই। তাহলে সুরক্ষাটা থাকবে কোথায়?
দ্য অ্যাটমোস্ফিয়ার সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘রিসেন্ট ক্লাইমেটোলজি অব থান্ডারস্টর্ম ডেজ ওভার বাংলাদেশ’ নামের গবেষণায় বাংলাদেশে বজ্রঝড়ের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এতে ১৯৮১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের বজ্রঝড়ের উপাত্ত তুলে ধরে বলা হয়েছে, এ সময়ে দেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রঝড় হয়েছে মে মাসে। এর গড় সংখ্যা ১৩। এরপরই আছে জুন মাস, সংখ্যা ১২। বজ্রঝড় নভেম্বর পর্যন্ত থাকছে।
ডিজাস্টার ফোরামের ২০২৩ সালের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত হিসাবে দেখা গৈছে, এ সময় ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়। জেলার হিসাবে সবচেয়ে বেশি ১১ জন সুনামগঞ্জ জেলায় মারা গিয়েছিল সে সময়। আর এপ্রিল মাসে ৩১ জন ও মে মাসে ৩২ জন কৃষক বজ্রপাতে মারা যান। দেখা গেছে, এ বছরের মে মাসে যে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের ২০ জনই কৃষক। সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে বজ্রঝড়ের বজ্রপাতে পূর্ব থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত এ সংখ্যা যথাক্রমে ১৩৬ ও ১১৬ জন মরা গেছেন বলে প্রতিবেদন তুলে ধরা হয় গবেষণায়।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sylhet Vision

সুনামগঞ্জ সীমান্তে ‌পুলিশের হাতে দুই চিনি চোরাকারবারি গ্রেফতার

সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে ঝড় ও বজ্রাপাতের অঞ্চল

প্রকাশের সময় : ১০:২২:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪

আবুল কাশেম রুমন,সিলেট::

গত কয়েক দিনে সিলেট জুড়ে ঝড় ও বজ্রপাত বেশি হচ্ছে। দিন কিংবা রাতেই বজ্রপাত হতে দেখা যায়, বৃষ্টির পরিমানও মাত্রারিক্ত।

দ্য অ্যাটমোস্ফিয়ার সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘রিসেন্ট ক্লাইমেটোলজি অব থান্ডারস্টর্ম ডেজ ওভার বাংলাদেশ’ নামের গবেষণায় গেছে, সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে বজ্রঝড়ের বার্ষিক দিনের সংখ্যা সবচেয়ে  বেশি। সিলেটে সংখ্যা যথাক্রমে ১৩৬ ও ১১৬ জন ধরা হয়।
শুধু সিলেট নয় দেশেও বেড়েছে বজ্রপাত ও বজ্রঝড়। এ বছরের মে মাসে দেশে বজ্রপাতে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের দুই বছরে এ মাসে বজ্রপাতে এত মৃত্যু হয়নি। দেশে এ বছর (১০ জুন পর্যন্ত) ১২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এ দুর্যোগে। বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা সাধারণত নভেম্বর মাস পর্যন্ত ঘটে। গত বছর মৃত্যু হয়েছিল ২৮০ জনের। মে মাস ছাড়াও এখন জুন মাসে মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। দেখা গেছে, বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে কৃষকের সংখ্যাই বেশি।
বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে সরকারি নানা উদ্যোগ আছে। এরই মধ্যে একে দুর্যোগও ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও মৃত্যু কমছে না। ভুল প্রকল্প, বড় গাছ কাটা বন্ধ না হওয়া এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরির চেষ্টা না থাকায় মৃত্যু রোধ হচ্ছে না-বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করেন।
দেশের বজ্রপাত পরিস্থিতি এবং এতে হতাহতের ঘটনা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরাম। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে, ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৮৭০ জনের। অর্থাৎ প্রতি বছর ২৭৬ জনের বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন ২০২১ সালে, ৩৮১ জন। ওই বছরের মে মাসে বজ্রপাতে সর্বোচ্চ ১২০ জনের মৃত্যু হয়।
এর আগে মে মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় ১৫৮ জনের, ২০১৮ সালে। দেশে কোনো একটি মাসে বজ্রপাতে এত মৃত্যুর ঘটনা আর ঘটেনি। গত বছরের মে মাসে (২০২৩) ৬৮ জন এবং এর আগের বছর (২০২২) মে মাসে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়।
খোলা প্রান্তরে বড় গাছ কেটে উজাড় করে ফেলা এবং নতুন কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা না রাখার কারণেই দিন-দিন বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করেন দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ আবদুল লতিফ খান। তিনি বলেন, আমরা পুরোনো গাছ রক্ষা করছি না। গাছ উজাড় হলেও এর বিরুদ্ধে কোনো তৎপরতা নেই। তাহলে সুরক্ষাটা থাকবে কোথায়?
দ্য অ্যাটমোস্ফিয়ার সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘রিসেন্ট ক্লাইমেটোলজি অব থান্ডারস্টর্ম ডেজ ওভার বাংলাদেশ’ নামের গবেষণায় বাংলাদেশে বজ্রঝড়ের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এতে ১৯৮১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের বজ্রঝড়ের উপাত্ত তুলে ধরে বলা হয়েছে, এ সময়ে দেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রঝড় হয়েছে মে মাসে। এর গড় সংখ্যা ১৩। এরপরই আছে জুন মাস, সংখ্যা ১২। বজ্রঝড় নভেম্বর পর্যন্ত থাকছে।
ডিজাস্টার ফোরামের ২০২৩ সালের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত হিসাবে দেখা গৈছে, এ সময় ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়। জেলার হিসাবে সবচেয়ে বেশি ১১ জন সুনামগঞ্জ জেলায় মারা গিয়েছিল সে সময়। আর এপ্রিল মাসে ৩১ জন ও মে মাসে ৩২ জন কৃষক বজ্রপাতে মারা যান। দেখা গেছে, এ বছরের মে মাসে যে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের ২০ জনই কৃষক। সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে বজ্রঝড়ের বজ্রপাতে পূর্ব থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত এ সংখ্যা যথাক্রমে ১৩৬ ও ১১৬ জন মরা গেছেন বলে প্রতিবেদন তুলে ধরা হয় গবেষণায়।