রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা সবাই কম-বেশি জানি। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সমাজের প্রাপ্ত বয়স্ক সব মুসলমানের জন্য রোজা রাখা ফরজ।
তারপরও এমন অনেকেই আছেন যাদের এ মাসে রোজা না রাখলেও চলে। এটা কাদের জন্য এবং কোন কোন অবস্থায় রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে- সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন আলোচিত ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী।
কাদেরকে আল্লাহ তায়াল রোজার ব্যাপারে ছাড় দিয়েছেন সেই বিষয়ে সম্প্রতি নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন জনপ্রিয় এই ইসলামিক বক্তা।
মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, রমজান মাসে রোজা রাখা সবার জন্য ফরজ হলেও প্রথমত শিশুরা রোজা রাখা থেকে ছাড় পেয়েছেন। ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ওপর রোজা ফরজ নয়, যতক্ষণ তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি। তবে শিশুরা রোজা রাখতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া যাবে না।
দ্বিতীয়ত, পাগলদের ওপর রোজা ফরজ নয়। যতক্ষণ না তিনি সুস্থ মস্তিষ্কে ফিরবেন।
তৃতীয়ত, মুসাফির। শরীয় সফর, অর্থাৎ ৪৮ মাইল তথা ৭৭ কিলোমিটার ভ্রমণ করেছেন যিনি তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি আছে। তবে মুসাফিরের জন্য উত্তম হচ্ছে যদি কষ্ট কম হয়, তাহলে রোজা পালন করা।
চতুর্থত, অসুস্থ ব্যক্তি। রোজা রাখার কারণে কোনো জটিল রোগ সৃষ্টি বা পুরাতন রোগ বৃদ্ধির প্রবল ধারণা হলে, তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি আছে। সুস্থ হওয়ার পর কাজা করে নেবেন।
পঞ্চমত, দুর্বল ব্যক্তি। অতিশয় বার্ধক্যের কারণে রোজা রাখতে অক্ষম হলে। যে ব্যক্তি বার্ধক্যজনিত কারণে কিংবা কোনো স্থায়ী জটিল রোগের কারণে রোজা রাখতে অক্ষম, ভবিষ্যতেও সুস্থতা লাভের সম্ভাবনা নেই তাহলে তিনি ফিদিয়া আদায় করবেন; কিন্তু যদি পরবর্তীকালে কখনো সুস্থ হয়ে যান, তাহলে এ রোজাগুলোর কাজা করে নেওয়া জরুরি।
ষষ্ঠত, গর্ভবতী নারী। রোজা রাখার কারণে গর্ভবতী মহিলা নিজের কিংবা সন্তানের প্রাণহানি বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির প্রবল আশঙ্কা হলে তার জন্য রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ। পরে এ রোজা কাজা করে নেবে।
সপ্তম, দুগ্ধদানকারী মা। রোজার কারণে সন্তান দুধ না পেয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে এমন আশঙ্কা হলে দুগ্ধদানকারিণীও আপাতত রোজা ভাঙতে পারবে এবং পরে কাজা করে নেবে।
অষ্টম, ঋতুবর্তী মহিলা। মাসিক ঋতুস্রাব তথা পিরিয়ডের (হায়েজ) সময় এবং সন্তান জন্মদানের পরবর্তী ৪০ দিন (নেফাস) মহিলাদের ওয়াজিব হলো রোজা বর্জন করা। এ অবস্থায় নামাজ ও রোজা কোনোটাই আদায় করা জায়েজ হবে না। সুস্থতার পর তাদের রোজার কাজা আদায় করতে হবে। তবে নামাজের কাজা আদায় করতে হবে না।
নবম, যারা কঠিন কাজ করে। রোজ রাখতে গিয়ে যদি জ্ঞান হারানোর ভয় থাকে তাহলে রোজা না রাখলেও চলবে। তবে অন্য সময়ে সেগুলো পূরণ করে নিতে হবে।
সর্বশেষ বয়োবৃদ্ধরা রোজা পালনে ছাড় পেয়েছেন। বয়স বেশি হলে অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত হয় এবং রোগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে রোজা না রাখলেও চলবে।