Sylhet ০১:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪ বাকস্বাধীনতা খর্ব করবে : টিআইবি

উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদিত ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪’ বাক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে নিয়ন্ত্রণমূলক বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ায় অধিকারের কোন প্রতিফল নেই। বরং এসংক্রান্ত আগের বিতর্কিত দুটি আইনের প্রতিফলন ঘটেছে। যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতাকে খর্ব করার হাতিয়ার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ নিয়ে টিআইবির পর্যালোচনা ও সুপারিশ জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঢেলে সাজানোর আগে এখন যে অবস্থায় সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪ উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক অধ্যাদেশটি অনুমোদিত হয়েছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। এটা জনস্বার্থের প্রতিফলন করবে না। বরং মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

আমরা মনে করি, আইনটি ঢেলে সাজানো দরকার। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে একদিকে অংশীজনকে সম্পৃক্ত করতে হবে, অন্যদিকে আইনটির মধ্যে এমন সেফটি থাকতে হবে যার মাধ্যমে আমাদের সংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণা রয়েছে তার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকতে হবে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভিন্নমত দমন ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া বহুল বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত সব নাগরিকের মনে স্বস্তির সঞ্চার করে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত খসড়া বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার সুযোগ রয়ে গেছে।

পূর্ববর্তী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো নাগরিকের বাক ও মত প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করার আশঙ্কা এ অধ্যাদেশে রয়ে গেছে। অংশীজনকর্তৃক পর্যাপ্ত বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্তিমূলক পর্যালোচনা ছাড়া জারি করা হলে আইনের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করার ঝুঁকি থাকবে।টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যথাযথ গবেষণা ও অংশীজনদের অন্তর্ভুক্ত না করে খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আইনে অনেক জটিল বাক্য ও শব্দের ব্যবহার হয়েছে। এটি আইনের শাসনের বিরুদ্ধ।

কারণ যাদের জন্য আইন তাদের জন্য আইন সহজ হওয়া কাঙ্খিত। জটিল ও বোধগম্য নয়, এমন শব্দের সংজ্ঞা যুক্ত করা দরকার। আইনটি হওয়া উচিত সাইবার সুরক্ষা নয়, কম্পিউটার বা সাইবার অপরাধ অধ্যাদেশ। কিছু শব্দের সংজ্ঞা ‘সাইবার নিরাপত্তা’, ‘সাইবার হামলা’, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’সহ অনেক কারিগরি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আইনে মহাপরিচালকের ক্ষমতা ও যোগ্যতা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েছে। কিছু কিছু অপরাধের অসম্পূর্ণ সংজ্ঞা সংযুক্ত রয়েছে। জুয়ার সংজ্ঞা নেই। কিছু নতুন সুরক্ষা বিধান যোগ করা হলেও বিনা বিচারে আটক ও তল্লাশি নিয়ে যে ধারা রয়েছে, তা নিয়ে টিআইবি উদ্বিগ্ন।সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে পর্যালোচনা ও সুপারিশ তুলে ধরেন মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার আইন ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ এরশাদুল করিম। তিনি অনুমোদিত অধ্যাদেশের ধারাগুলো ধরে ধরে বিশ্লেষণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sylhet Vision

জনপ্রিয় সংবাদ

ছাতকে সিবিএ সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস গ্রেফতার

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪ বাকস্বাধীনতা খর্ব করবে : টিআইবি

প্রকাশের সময় : ১২:৫৩:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদিত ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪’ বাক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে নিয়ন্ত্রণমূলক বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ায় অধিকারের কোন প্রতিফল নেই। বরং এসংক্রান্ত আগের বিতর্কিত দুটি আইনের প্রতিফলন ঘটেছে। যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতাকে খর্ব করার হাতিয়ার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ নিয়ে টিআইবির পর্যালোচনা ও সুপারিশ জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঢেলে সাজানোর আগে এখন যে অবস্থায় সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪ উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক অধ্যাদেশটি অনুমোদিত হয়েছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। এটা জনস্বার্থের প্রতিফলন করবে না। বরং মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

আমরা মনে করি, আইনটি ঢেলে সাজানো দরকার। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে একদিকে অংশীজনকে সম্পৃক্ত করতে হবে, অন্যদিকে আইনটির মধ্যে এমন সেফটি থাকতে হবে যার মাধ্যমে আমাদের সংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণা রয়েছে তার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকতে হবে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভিন্নমত দমন ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া বহুল বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত সব নাগরিকের মনে স্বস্তির সঞ্চার করে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত খসড়া বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার সুযোগ রয়ে গেছে।

পূর্ববর্তী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো নাগরিকের বাক ও মত প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করার আশঙ্কা এ অধ্যাদেশে রয়ে গেছে। অংশীজনকর্তৃক পর্যাপ্ত বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্তিমূলক পর্যালোচনা ছাড়া জারি করা হলে আইনের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করার ঝুঁকি থাকবে।টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যথাযথ গবেষণা ও অংশীজনদের অন্তর্ভুক্ত না করে খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আইনে অনেক জটিল বাক্য ও শব্দের ব্যবহার হয়েছে। এটি আইনের শাসনের বিরুদ্ধ।

কারণ যাদের জন্য আইন তাদের জন্য আইন সহজ হওয়া কাঙ্খিত। জটিল ও বোধগম্য নয়, এমন শব্দের সংজ্ঞা যুক্ত করা দরকার। আইনটি হওয়া উচিত সাইবার সুরক্ষা নয়, কম্পিউটার বা সাইবার অপরাধ অধ্যাদেশ। কিছু শব্দের সংজ্ঞা ‘সাইবার নিরাপত্তা’, ‘সাইবার হামলা’, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’সহ অনেক কারিগরি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আইনে মহাপরিচালকের ক্ষমতা ও যোগ্যতা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েছে। কিছু কিছু অপরাধের অসম্পূর্ণ সংজ্ঞা সংযুক্ত রয়েছে। জুয়ার সংজ্ঞা নেই। কিছু নতুন সুরক্ষা বিধান যোগ করা হলেও বিনা বিচারে আটক ও তল্লাশি নিয়ে যে ধারা রয়েছে, তা নিয়ে টিআইবি উদ্বিগ্ন।সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে পর্যালোচনা ও সুপারিশ তুলে ধরেন মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার আইন ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ এরশাদুল করিম। তিনি অনুমোদিত অধ্যাদেশের ধারাগুলো ধরে ধরে বিশ্লেষণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের।