অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ পরিচালনায় সুবিধার জন্য দেশের সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) পদে পরিবর্তনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে জনপ্রশাসন যে সিদ্ধান্তই নিক, অন্তর্বর্তী সরকারের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে সব। বৃহস্পতিবার নোবেলজিয়ী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেবে। সরকারের নির্দেশনা পেলে এ বিষয়টি চূড়ান্ত করবে জনপ্রশাসন। বিদ্যমান নতুন তালিকা অথবা নতুন করে তালিকা তৈরি- যে নির্দেশনাই আসুক, প্রস্তুত তারা। জানিয়েছেন একজন কর্মকর্তা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন পেরিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পতন হলো শেখ হাসিনা সরকারের। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সরকার দলীয় প্রয়োজনে ব্যবহার করেছে মাঠ প্রশাসনকে। তাই তাদের কর্মকাণ্ডে বীতশ্রদ্ধ মানুষ।
জানা গেছে, বর্তমান ডিসি-এসপিদের প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে। এ জন্য যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেওয়ার পর নতুন ডিসি-এসপি পদায়ন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
এর আগে প্রশাসনের উচ্চ স্তরেও বেশ কিছু রদবদল করা হবে বলে জানা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
ডিসি
দেশের ৬৪ জেলায় ডিসি পদে বর্তমানে তিনটি ব্যাচের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচ। সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুলাই মাসে তিন ধাপে ২৮ জেলায় ডিসি পদে পদায়ন ও রদবদল করে সরকার।
তবে শেখ হাসিনার সরকার দেশের অন্তত ১৫টি জেলায় ডিসি পদে নতুন নিয়োগ দেওয়ার একটা প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে এনেছিল। ২৪তম ব্যাচের ডিসিদের অনেকের দুই বছর সময় শেষ হচ্ছে। তাদের অনেকের বর্তমান কর্মস্থল পরিবর্তন করার কথা। তাদের জায়গায় নতুন নিয়োগ হবে। ২৭তম ব্যাচ থেকে সেখানে পদায়নের একটা তালিকা করা হয়েছিল। এটি নিয়েও ভাবছে মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, অন্তর্বতী সরকার অরাজনৈতিক। মাঠ পর্যায়ে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে ডিসিদের। তাই অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন ও দক্ষ কর্মকর্তাদের বাছাই করা হচ্ছে নতুন ডিসি হিসেবে।
এসপি
জুলাই থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরে ছাত্র-জনতার সরকারবিরোধী আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ধকল গেছে পুলিশ প্রশাসনের ওপর। একরকম তছনছ হয়ে গেছে এই বাহিনী। হাসিনা সরকারের পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এই পুলিশ মানুষের ক্ষোভ ও ঘৃণার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। তা থেকে উত্তরণে পুনর্গঠনের কাজ করতে হবে পুলিশ প্রশাসনে- এমনটাই মনে করছেন শীর্ষ কর্মকর্তারা।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, পুলিশের মনোবল বৃদ্ধি এবং মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের জন্য সব জেলায় নতুন এসপি নিয়োগ করা হতে পারে।
এর আগে গত ২৩ জুন বাংলাদেশ পুলিশের ৪০ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পদে রদবদল হয়। একজন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি), ৯ জন উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), ১৫ জন অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) ও ১৫ জন পুলিশ সুপার পর্যায়ের কর্মকর্তার রদবদল হয় তখন। সেবার রংপুর, কুমিল্লা, সিলেট, কুষ্টিয়া, পটুয়াখালী, বরগুনা, বগুড়া, ফেনী, পাবনা, টাঙ্গাইল, নীলফামারী, যশোর, মাদারীপুর ও সুনামগঞ্জেরর পুলিশ সুপার বদল করা হয়েছিল।