Sylhet ১২:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনার সব শেষ মন্ত্রীসভায় কেন ঠাঁই হয়নি এম এ মান্নানের?

 

বিএনপি আমলে দীর্ঘ সময়ের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সিলেট অঞ্চলের উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রেখেছিলেন—দল মত নির্বিশেষে মানুষ আজও শ্রদ্ধাভরে সে কথা স্মরণ করে। সিলেট অঞ্চলের উন্নয়নে তিনি কিরকম ভূমিকা রেখেছিলেন এরকম একটা গল্প শুনেছিলাম বেশ আগে। তখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আলাদা ছিল না। অর্থমন্ত্রণালয়েরই অন্তর্ভুক্ত। বড় কোন কাজ বা প্রকল্প পাশ হতে হলে প্রথমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি লাগত। একবার বগুড়ার এক এমপি নিজ এলাকায় একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের ফাইল নিয়ে এসে সাইফুর রহমানকে বললেন, স্যার, ভাইয়া (তারেক জিয়াকে এই নামেই ডাকতেন অনেকে) বিশেষভাবে এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের ফাইলটির জন্য সুপারিশ করেছেন। সাইফুর রহমান সেই এমপিকে বললেন, এরকম আরেকটা ফাইল রেডি করে নিয়ে আসেন। আমি এটা দেখছি। কয়েকদিন পর সেই এমপি এরকম আরেকটি ফাইল, পরিকল্পনা-ডিটেইলস রেডি করে নিয়ে আসলে তিনি সেটা দেখে হাসতে হাসতে বললেন শোনেন, এসব কি শুধু বগুড়ায় হয়, উত্তরবঙ্গের দিকেই সব নিয়ে যাবেন আপনারা? সিলেটে হয় না?

গল্পের সত্যমিথ্যা জানি না কিন্তু সাইফুর রহমান এলাকার উন্নয়নে এরকম আন্তরিক এবং নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। সবাই জানে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন হয়েছিল। শুনেছি অনেক ব্যয়বহুল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এখন অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে। অথচ আওয়ামী লীগের আমলে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হতে পারতো। বিএনপি আমলে সিলেটসহ সারাদেশে দুর্নীতি, জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদ মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছিল। জঙ্গীবাদ নির্মূল করলেও আওয়ামীলীগ সরকার দুর্নীতি ও মৌলবাদ তোষণে বিএনপির লিগ্যাসি ধরে রেখেছিল। এবং বিএনপিকে ছাড়িয়ে যাবার প্রাণপণ চেষ্টায় নেমেছিল যেন। অভূতপূর্ব অনেক উন্নয়নের সঙ্গে লাগামহীন দুর্নীতি-কেচ্ছা রোধে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিল দলটি। রাজনীতিবিদ, সিভিল, মিলিটারি সব প্রশাসনেই রাঘব-বোয়ালেরা সব গিলে খাচ্ছিল। সুযোগে শত্রুরা সংক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে পরিচয় গোপন করে মিশে যায় এবং প্লট তৈরি করতে থাকে। সরকারকে কেউ বুঝাতে পারেনি ব্রিজ, ভবন, রাস্তা, কালভার্ট নয়, আগে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি ছিল। সেটা আওয়ামীলীগ প্রায় ভুলে যায়।

বলা হয়, যে সাইফুর রহমান সিলেট শহরের টিলাগড়-সংলগ্ন এলাকায় এক কিলোমিটারে যে উন্নয়ন করেছিলেন তা আর কোনও আমলে হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের পনেরো বছরেও না! অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিতের মতো সৎ, নিষ্ঠাবান, কর্মদক্ষ, সুপণ্ডিত একজন অর্থমন্ত্রী পাওয়ার পরও আওয়ামী লীগের উন্নয়ন দশকেও পুরো সিলেট অঞ্চল বেশ বঞ্চিত ছিল। ফরিদপুরের ভাঙ্গা সিঙ্গাপুর হয়ে গেলেও দেশের উন্নয়ন সমতায় সিলেট পিছিয়ে ছিল, বঞ্চিত ছিল। রুটিন উন্নয়ন যেমন জেলখানা, হাইটেক পার্ক (শুনেই সেটিও বন্ধ) ছাড়া দৃশ্যমান বড় কোনো উন্নয়ন অগ্রগতি নেই বললেই চলে। এমনকি ঢাকা-সিলেট হাইওয়েটিও চার লেনে উন্নীত হয়নি। বেহাল দশা। ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগও তাই। প্রায়ই ঘটতো দুর্ঘটনা। সরকারের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত দশ মেগা প্রজক্টের একটিও সিলেট অঞ্চলে নাই।

সাইফুর রহমানকে ঘিরে উপরের প্রাসঙ্গিক গল্পটি বললাম বিশেষ কারণে। প্রধানমন্ত্রীর প্রায় একক সিদ্ধান্তে মন্ত্রীসভায় ভাগ্যবানেরা আনুষ্ঠানিক ডাক পান মন্ত্রীপরিষদ সচিবের ফোনে। সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে এম এ মান্নান নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় দফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের সংসদ সদস্য হয়ে অর্থপ্রতিমন্ত্রী হন। ক্যাবিনেটে ডাক পাওয়ার সে খবর সচিবালয় বিট করেন এমন এক সাংবাদিক সহকর্মীর মাধ্যমে জেনে পূর্বপরিচয় ও একটা আন্তরিক সম্পর্ক থাকায় খবরটি জানানোর জন্য উনাকে ফোন করলাম। উনি প্রথম বিশ্বাস করলেন না। বললেন, আমি না রে ভাই। হয়তো বগুড়ার এমপি কালা মান্নান (প্রয়াত)। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট অন্য এক বিশ্বস্ত সূত্রে অধিকতর নিশ্চিত হয়ে উনাকে জানালাম যে উনিই ক্যাবিনেটে ডাক পেতে যাচ্ছেন। বুঝলাম এমন ডাকে সহসা বেশ চমকে গেলেন। অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিতের সঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ও পরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন শেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয় বারের মতো বিজয়ী তিনি পরিকল্পনামন্ত্রীর পূর্ণ দায়িত্ব পান।

নির্বাচিত হয়ে পশ্চাৎপদ নিজ জেলা সুনামগঞ্জের উন্নয়নে মনযোগ দেন। সুনামগঞ্জ দেশের সপ্তম বৃহত্তম জেলা। পাথর, মাছ, ধান সুনামগঞ্জের প্রাণ– হিসেবে পরিচিত জেলাটি খাদ্যশস্যের বড় যোগানদার। অনাদিকাল থেকে অবহেলিত। অকাল বন্যা, ঝড় ঝাপ্টা আর ফসলহানিতে এখানকার প্রান্তিক কৃষকের জীবন চিরকালই বিপর্যস্ত। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষায়ও পিছিয়ে। হাওরাঞ্চলের উন্নয়নের অংশ হিসেবে সেখানে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনে উদ্যোগ নেন। কলেজের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকা আন্তঃজেলা সড়ক সিলেট টু সুনামগঞ্জের রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ করেছেন। প্রায় অপ্রতিরোধ্য পরিবহন-মালিক শ্রমিক স্বার্থান্বেষী মহলের তীব্র বাঁধা উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষের জন্য সুনামগঞ্জ টু সিলেট সাশ্রয়ীমূল্যের আরামদায়ক বিআরটিসি বাস চালু করেছিলেন। সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তারই একটি বড় কৃতিত্ব। এ বিশ্ববিদ্যালয় নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জসহ বৃহত্তর হাওরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়নে প্রভূত ভূমিকা রাখবে।

হাওরের অনেক জাতীয় নেতা জন্মেছিলেন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের বাইরে হাওর পারের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য তারা তেমন কিছু করেছেন বলে মনে করতে পারছি না। তাদের যেমন শ্রদ্ধায় স্মরণ করি তেমনি একথা বলতেও দ্বিধা নেই তারা চিরকালের বঞ্চিত অবহেলিত হাওরের মানুষের ভোটে নির্বাচিত হলেও তাদের উন্নয়নে তেমন কিছু করেননি কিংবা দেশের নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থায় সে সুযোগ পাননি। কিন্তু কোন্দলের রাজনীতি আর স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভক্তির স্থায়ী ক্ষত রেখে গেছেন। একজন এম এ মান্নান পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ না হলেও এখানে তাদের চাইতে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। শত হাজার কোটি টাকা পাচারের বদনামের কালে ব্যক্তিগত জীবনে এম এ মান্নান একজন নির্লোভ পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ছিলেন দলাদলির উর্ধ্বে। শুনেছি মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তাঁর আসনে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের বিএনপির একজন নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসাবে বিএনপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ক্ষমতা থাকার পর কেন দলের লোককে জেতালেন না এ নিয়েও সমালোচনা করতে দেখেছি অন্ধ দলীয় সমর্থকদের। কিন্তু এম এ মান্নান ছিলেন নীতিতে অটল ও দলমতের উর্ধে।

সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত এক গ্রাম ডুংরিয়া থেকে নিজ পরিচয়ে বড় হওয়া, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া– একমাত্র জীবিত যাত্রী এম এ মান্নান বড় ভাগ্যবান এক জীবনের অধিকারী। আজ থেকে ৫৩ বছর আগে ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখ বুধবার। আমেরিকান সাহায্য সংস্থা কেয়ারের তৎকালীন ঢাকা অফিসে চাকরী করতেন এম এ মান্নান। অফিসের কাজে দেশের নানা জায়গায় যেতে হত তাকে। সেদিন তাঁর কুষ্টিয়া যাওয়ার কথা। পিআইএ তখন দেশের নানা জায়গায় সীমিত আকারে হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু করেছে। ঢাকা থেকে দুপুরে ফরিদপুর হয়ে তাঁর কুষ্টিয়া যাওয়ার কথা। হেলিকপ্টারে ছিলেন যাত্রী মোট ২৪ জন। ফরিদপুরের কাছাকাছি যেয়ে হঠাৎ হেলিকপ্টারটি সেদিন বিধ্বস্ত হয়। আগুন ধরে ধানক্ষেতে বিধ্বস্ত কপ্টার থেকে প্রাণপণ চেষ্টায় বেরিয়ে আসেন এম এ মান্নান। ধান খেতে থাকা কৃষকেরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। বাকি ২৩ জন ঘটনাস্থলেও মারা গেলেও একমাত্র তিনি সেদিন বেঁচে ছিলেন। দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ভাগ্যবান সেই মানুষটি পরে আমলা থেকে রাজনীতিতে নাম লেখান। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তাঁর ভিশনারি নেতৃত্বের জন্য সুনামগঞ্জের মানুষ তাকে ভালোবেসে শ্রদ্ধায় স্মরণে রাখবে। যদিও অভিযোগ আছে তাঁর উন্নয়ন-রাজধানী পুরো জেলা জুড়ে নয় যতোটা ছিল নিজ এলাকা শান্তিগঞ্জ-কেন্দ্রিক।

তাঁর সঙ্গে আমার সর্বশেষ দেখা হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি গবেষণা কাজের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে। আলোচনাকালে স্বাধীনতার পর পিছিয়ে পড়া একটি জনপদের জন্য কাজ করায় ধন্যবাদ জানালে বেশ আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন। জেলার এমপিদের সঙ্গে দূরত্ব, মনোমালিন্য ও ভুল বোঝাবুঝি নিয়েও গণমাধ্যমকে অনুরোধ করে অফ দ্য রেকর্ড বেশ কিছু কথাও বলেন। বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না, সব ভালো মানুষের পাশেই কিছু দুর্বৃত্ত থাকে। বিশেষ করে আমাদের সমাজে কেউ ভালো কোনো পদ ও পজিশনে গেলে তাঁকে ঘিরে কখনো তাঁর অজান্তেই একটা দুর্বৃত্ত চক্র গড়ে ওঠে। যারা তাঁকে ব্যবহার করে, বিক্রি করে। সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে ভূমিদস্যু একটি সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে বড্ড বিপাকে পড়েন এম এ মান্নান। রাজনীতির দুর্বৃত্তদের সঙ্গও তাঁকে সমালোচিত করে। বিতর্কিত হন জেলার রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুদার আঞ্চলিক রাজনীতির কাদায় পা ফেলেও।

অনেক অথর্ব বাকসর্বস্ব মন্ত্রীর চেয়ে সফলভাবে মন্ত্রণালয় চালালেও এম এ মান্নানের গত মন্ত্রীসভায় ঠাঁই হয়নি। কেন হয়নি? দুর্বৃত্তদের সমাবেশে ভালো মানুষেরা চিরকালই অসহায়। ব্যক্তিজীবনে একজন সৎ আমলা ও সাদামাটা, সজ্জন রাজনীতিবিদ এম এ মান্নান প্রথম কোনো ব্যক্তি ৫ আগস্টের পর যার মুক্তির জন্য নিজ নির্বাচনী এলাকায় (ব্যতিক্রম গোপালগঞ্জ বাদে) ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ করছে। যেখানে নোয়াখালীর একরামুল করিম চৌধুরীরা নিজ বাড়িতে হ্যালিপ্যাড করেছেন, ভূমিমন্ত্রী জাবেদ কয়েক শ বাড়ির মালিক হয়েছেন, বদিরা সীমাহীন সম্পদের মালিক বনেছেন– সেখানে একজন মান্নান গ্রামে তাঁর পৈত্রিকভিটাটুকু পর্যন্ত এলাকার মানুষের শিক্ষা-সামাজিক উন্নয়নে ট্রাস্ট করে দান করে “হিজল” নামে টিনের চালের একটি বাংলো বাড়িতে থাকতেন। এলাকার মানুষকে ভালোবাসার ফলও পেয়েছেন। সর্বশেষ নির্বাচনে জমিয়তে উলামা থেকে তৃণমূল বিএনপিতে হিজরত করা মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরীকে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে হারান এম এ মান্নান। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৫। জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া তাঁর প্রতিদ্বন্দী মাওলানা পান সোনালী আঁশ প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৫টি। গত পনেরো বছরে বেপরোয়া দুর্বৃত্তদের কবলে পড়া জনগণের আন্দোলন সংগ্রামে জন্ম নেওয়া আওয়ামী লীগ গণবিমুখী রাজনীতিবিদদের সাংগঠনিক ও আর্থিক দুর্বৃত্তায়নে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর আবার তাঁর পরিচ্ছন্ন, গণমুখী চরিত্র নিয়ে, আদর্শিক ধারার রাজনীতির চর্চা করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপব্যবহার করে নয়, সত্যিকার অর্থে ধারণ করে, সাম্য ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে হয়ত ঘুরে দাঁড়াবে একদিন। একজন এম এ মান্নান সেখানে পাঠ হবেন আশা করি।

লেখক-কবি, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sylhet Vision

জগন্নাথপুর যুব জমিয়তের নবনির্বাচিত কমিটির পরিচিতি শপথ অনুষ্ঠিত

শেখ হাসিনার সব শেষ মন্ত্রীসভায় কেন ঠাঁই হয়নি এম এ মান্নানের?

প্রকাশের সময় : ০৪:০০:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

বিএনপি আমলে দীর্ঘ সময়ের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সিলেট অঞ্চলের উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রেখেছিলেন—দল মত নির্বিশেষে মানুষ আজও শ্রদ্ধাভরে সে কথা স্মরণ করে। সিলেট অঞ্চলের উন্নয়নে তিনি কিরকম ভূমিকা রেখেছিলেন এরকম একটা গল্প শুনেছিলাম বেশ আগে। তখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আলাদা ছিল না। অর্থমন্ত্রণালয়েরই অন্তর্ভুক্ত। বড় কোন কাজ বা প্রকল্প পাশ হতে হলে প্রথমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি লাগত। একবার বগুড়ার এক এমপি নিজ এলাকায় একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের ফাইল নিয়ে এসে সাইফুর রহমানকে বললেন, স্যার, ভাইয়া (তারেক জিয়াকে এই নামেই ডাকতেন অনেকে) বিশেষভাবে এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের ফাইলটির জন্য সুপারিশ করেছেন। সাইফুর রহমান সেই এমপিকে বললেন, এরকম আরেকটা ফাইল রেডি করে নিয়ে আসেন। আমি এটা দেখছি। কয়েকদিন পর সেই এমপি এরকম আরেকটি ফাইল, পরিকল্পনা-ডিটেইলস রেডি করে নিয়ে আসলে তিনি সেটা দেখে হাসতে হাসতে বললেন শোনেন, এসব কি শুধু বগুড়ায় হয়, উত্তরবঙ্গের দিকেই সব নিয়ে যাবেন আপনারা? সিলেটে হয় না?

গল্পের সত্যমিথ্যা জানি না কিন্তু সাইফুর রহমান এলাকার উন্নয়নে এরকম আন্তরিক এবং নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। সবাই জানে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন হয়েছিল। শুনেছি অনেক ব্যয়বহুল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এখন অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে। অথচ আওয়ামী লীগের আমলে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হতে পারতো। বিএনপি আমলে সিলেটসহ সারাদেশে দুর্নীতি, জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদ মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছিল। জঙ্গীবাদ নির্মূল করলেও আওয়ামীলীগ সরকার দুর্নীতি ও মৌলবাদ তোষণে বিএনপির লিগ্যাসি ধরে রেখেছিল। এবং বিএনপিকে ছাড়িয়ে যাবার প্রাণপণ চেষ্টায় নেমেছিল যেন। অভূতপূর্ব অনেক উন্নয়নের সঙ্গে লাগামহীন দুর্নীতি-কেচ্ছা রোধে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিল দলটি। রাজনীতিবিদ, সিভিল, মিলিটারি সব প্রশাসনেই রাঘব-বোয়ালেরা সব গিলে খাচ্ছিল। সুযোগে শত্রুরা সংক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে পরিচয় গোপন করে মিশে যায় এবং প্লট তৈরি করতে থাকে। সরকারকে কেউ বুঝাতে পারেনি ব্রিজ, ভবন, রাস্তা, কালভার্ট নয়, আগে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি ছিল। সেটা আওয়ামীলীগ প্রায় ভুলে যায়।

বলা হয়, যে সাইফুর রহমান সিলেট শহরের টিলাগড়-সংলগ্ন এলাকায় এক কিলোমিটারে যে উন্নয়ন করেছিলেন তা আর কোনও আমলে হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের পনেরো বছরেও না! অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিতের মতো সৎ, নিষ্ঠাবান, কর্মদক্ষ, সুপণ্ডিত একজন অর্থমন্ত্রী পাওয়ার পরও আওয়ামী লীগের উন্নয়ন দশকেও পুরো সিলেট অঞ্চল বেশ বঞ্চিত ছিল। ফরিদপুরের ভাঙ্গা সিঙ্গাপুর হয়ে গেলেও দেশের উন্নয়ন সমতায় সিলেট পিছিয়ে ছিল, বঞ্চিত ছিল। রুটিন উন্নয়ন যেমন জেলখানা, হাইটেক পার্ক (শুনেই সেটিও বন্ধ) ছাড়া দৃশ্যমান বড় কোনো উন্নয়ন অগ্রগতি নেই বললেই চলে। এমনকি ঢাকা-সিলেট হাইওয়েটিও চার লেনে উন্নীত হয়নি। বেহাল দশা। ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগও তাই। প্রায়ই ঘটতো দুর্ঘটনা। সরকারের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত দশ মেগা প্রজক্টের একটিও সিলেট অঞ্চলে নাই।

সাইফুর রহমানকে ঘিরে উপরের প্রাসঙ্গিক গল্পটি বললাম বিশেষ কারণে। প্রধানমন্ত্রীর প্রায় একক সিদ্ধান্তে মন্ত্রীসভায় ভাগ্যবানেরা আনুষ্ঠানিক ডাক পান মন্ত্রীপরিষদ সচিবের ফোনে। সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে এম এ মান্নান নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় দফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের সংসদ সদস্য হয়ে অর্থপ্রতিমন্ত্রী হন। ক্যাবিনেটে ডাক পাওয়ার সে খবর সচিবালয় বিট করেন এমন এক সাংবাদিক সহকর্মীর মাধ্যমে জেনে পূর্বপরিচয় ও একটা আন্তরিক সম্পর্ক থাকায় খবরটি জানানোর জন্য উনাকে ফোন করলাম। উনি প্রথম বিশ্বাস করলেন না। বললেন, আমি না রে ভাই। হয়তো বগুড়ার এমপি কালা মান্নান (প্রয়াত)। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট অন্য এক বিশ্বস্ত সূত্রে অধিকতর নিশ্চিত হয়ে উনাকে জানালাম যে উনিই ক্যাবিনেটে ডাক পেতে যাচ্ছেন। বুঝলাম এমন ডাকে সহসা বেশ চমকে গেলেন। অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিতের সঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ও পরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন শেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয় বারের মতো বিজয়ী তিনি পরিকল্পনামন্ত্রীর পূর্ণ দায়িত্ব পান।

নির্বাচিত হয়ে পশ্চাৎপদ নিজ জেলা সুনামগঞ্জের উন্নয়নে মনযোগ দেন। সুনামগঞ্জ দেশের সপ্তম বৃহত্তম জেলা। পাথর, মাছ, ধান সুনামগঞ্জের প্রাণ– হিসেবে পরিচিত জেলাটি খাদ্যশস্যের বড় যোগানদার। অনাদিকাল থেকে অবহেলিত। অকাল বন্যা, ঝড় ঝাপ্টা আর ফসলহানিতে এখানকার প্রান্তিক কৃষকের জীবন চিরকালই বিপর্যস্ত। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষায়ও পিছিয়ে। হাওরাঞ্চলের উন্নয়নের অংশ হিসেবে সেখানে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনে উদ্যোগ নেন। কলেজের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকা আন্তঃজেলা সড়ক সিলেট টু সুনামগঞ্জের রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ করেছেন। প্রায় অপ্রতিরোধ্য পরিবহন-মালিক শ্রমিক স্বার্থান্বেষী মহলের তীব্র বাঁধা উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষের জন্য সুনামগঞ্জ টু সিলেট সাশ্রয়ীমূল্যের আরামদায়ক বিআরটিসি বাস চালু করেছিলেন। সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তারই একটি বড় কৃতিত্ব। এ বিশ্ববিদ্যালয় নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জসহ বৃহত্তর হাওরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়নে প্রভূত ভূমিকা রাখবে।

হাওরের অনেক জাতীয় নেতা জন্মেছিলেন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের বাইরে হাওর পারের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য তারা তেমন কিছু করেছেন বলে মনে করতে পারছি না। তাদের যেমন শ্রদ্ধায় স্মরণ করি তেমনি একথা বলতেও দ্বিধা নেই তারা চিরকালের বঞ্চিত অবহেলিত হাওরের মানুষের ভোটে নির্বাচিত হলেও তাদের উন্নয়নে তেমন কিছু করেননি কিংবা দেশের নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থায় সে সুযোগ পাননি। কিন্তু কোন্দলের রাজনীতি আর স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভক্তির স্থায়ী ক্ষত রেখে গেছেন। একজন এম এ মান্নান পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ না হলেও এখানে তাদের চাইতে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। শত হাজার কোটি টাকা পাচারের বদনামের কালে ব্যক্তিগত জীবনে এম এ মান্নান একজন নির্লোভ পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ছিলেন দলাদলির উর্ধ্বে। শুনেছি মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তাঁর আসনে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের বিএনপির একজন নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসাবে বিএনপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ক্ষমতা থাকার পর কেন দলের লোককে জেতালেন না এ নিয়েও সমালোচনা করতে দেখেছি অন্ধ দলীয় সমর্থকদের। কিন্তু এম এ মান্নান ছিলেন নীতিতে অটল ও দলমতের উর্ধে।

সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত এক গ্রাম ডুংরিয়া থেকে নিজ পরিচয়ে বড় হওয়া, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া– একমাত্র জীবিত যাত্রী এম এ মান্নান বড় ভাগ্যবান এক জীবনের অধিকারী। আজ থেকে ৫৩ বছর আগে ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখ বুধবার। আমেরিকান সাহায্য সংস্থা কেয়ারের তৎকালীন ঢাকা অফিসে চাকরী করতেন এম এ মান্নান। অফিসের কাজে দেশের নানা জায়গায় যেতে হত তাকে। সেদিন তাঁর কুষ্টিয়া যাওয়ার কথা। পিআইএ তখন দেশের নানা জায়গায় সীমিত আকারে হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু করেছে। ঢাকা থেকে দুপুরে ফরিদপুর হয়ে তাঁর কুষ্টিয়া যাওয়ার কথা। হেলিকপ্টারে ছিলেন যাত্রী মোট ২৪ জন। ফরিদপুরের কাছাকাছি যেয়ে হঠাৎ হেলিকপ্টারটি সেদিন বিধ্বস্ত হয়। আগুন ধরে ধানক্ষেতে বিধ্বস্ত কপ্টার থেকে প্রাণপণ চেষ্টায় বেরিয়ে আসেন এম এ মান্নান। ধান খেতে থাকা কৃষকেরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। বাকি ২৩ জন ঘটনাস্থলেও মারা গেলেও একমাত্র তিনি সেদিন বেঁচে ছিলেন। দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ভাগ্যবান সেই মানুষটি পরে আমলা থেকে রাজনীতিতে নাম লেখান। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তাঁর ভিশনারি নেতৃত্বের জন্য সুনামগঞ্জের মানুষ তাকে ভালোবেসে শ্রদ্ধায় স্মরণে রাখবে। যদিও অভিযোগ আছে তাঁর উন্নয়ন-রাজধানী পুরো জেলা জুড়ে নয় যতোটা ছিল নিজ এলাকা শান্তিগঞ্জ-কেন্দ্রিক।

তাঁর সঙ্গে আমার সর্বশেষ দেখা হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি গবেষণা কাজের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে। আলোচনাকালে স্বাধীনতার পর পিছিয়ে পড়া একটি জনপদের জন্য কাজ করায় ধন্যবাদ জানালে বেশ আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন। জেলার এমপিদের সঙ্গে দূরত্ব, মনোমালিন্য ও ভুল বোঝাবুঝি নিয়েও গণমাধ্যমকে অনুরোধ করে অফ দ্য রেকর্ড বেশ কিছু কথাও বলেন। বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না, সব ভালো মানুষের পাশেই কিছু দুর্বৃত্ত থাকে। বিশেষ করে আমাদের সমাজে কেউ ভালো কোনো পদ ও পজিশনে গেলে তাঁকে ঘিরে কখনো তাঁর অজান্তেই একটা দুর্বৃত্ত চক্র গড়ে ওঠে। যারা তাঁকে ব্যবহার করে, বিক্রি করে। সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে ভূমিদস্যু একটি সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে বড্ড বিপাকে পড়েন এম এ মান্নান। রাজনীতির দুর্বৃত্তদের সঙ্গও তাঁকে সমালোচিত করে। বিতর্কিত হন জেলার রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুদার আঞ্চলিক রাজনীতির কাদায় পা ফেলেও।

অনেক অথর্ব বাকসর্বস্ব মন্ত্রীর চেয়ে সফলভাবে মন্ত্রণালয় চালালেও এম এ মান্নানের গত মন্ত্রীসভায় ঠাঁই হয়নি। কেন হয়নি? দুর্বৃত্তদের সমাবেশে ভালো মানুষেরা চিরকালই অসহায়। ব্যক্তিজীবনে একজন সৎ আমলা ও সাদামাটা, সজ্জন রাজনীতিবিদ এম এ মান্নান প্রথম কোনো ব্যক্তি ৫ আগস্টের পর যার মুক্তির জন্য নিজ নির্বাচনী এলাকায় (ব্যতিক্রম গোপালগঞ্জ বাদে) ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ করছে। যেখানে নোয়াখালীর একরামুল করিম চৌধুরীরা নিজ বাড়িতে হ্যালিপ্যাড করেছেন, ভূমিমন্ত্রী জাবেদ কয়েক শ বাড়ির মালিক হয়েছেন, বদিরা সীমাহীন সম্পদের মালিক বনেছেন– সেখানে একজন মান্নান গ্রামে তাঁর পৈত্রিকভিটাটুকু পর্যন্ত এলাকার মানুষের শিক্ষা-সামাজিক উন্নয়নে ট্রাস্ট করে দান করে “হিজল” নামে টিনের চালের একটি বাংলো বাড়িতে থাকতেন। এলাকার মানুষকে ভালোবাসার ফলও পেয়েছেন। সর্বশেষ নির্বাচনে জমিয়তে উলামা থেকে তৃণমূল বিএনপিতে হিজরত করা মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরীকে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে হারান এম এ মান্নান। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৫। জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া তাঁর প্রতিদ্বন্দী মাওলানা পান সোনালী আঁশ প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৫টি। গত পনেরো বছরে বেপরোয়া দুর্বৃত্তদের কবলে পড়া জনগণের আন্দোলন সংগ্রামে জন্ম নেওয়া আওয়ামী লীগ গণবিমুখী রাজনীতিবিদদের সাংগঠনিক ও আর্থিক দুর্বৃত্তায়নে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর আবার তাঁর পরিচ্ছন্ন, গণমুখী চরিত্র নিয়ে, আদর্শিক ধারার রাজনীতির চর্চা করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপব্যবহার করে নয়, সত্যিকার অর্থে ধারণ করে, সাম্য ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে হয়ত ঘুরে দাঁড়াবে একদিন। একজন এম এ মান্নান সেখানে পাঠ হবেন আশা করি।

লেখক-কবি, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট