Sylhet ১১:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেলেই হচ্ছে শক্তিশালী আইটি দপ্তর

সরকার রেলে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। গত একযুগে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এছাড়া প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এত উন্নয়নের পরও ট্রেন যাত্রীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ‘টিকিট’ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতাই অর্জন করতে পারেনি রেল। তবে এবার সেই অভাব গোছাতে যাচ্ছে রেল। রেলেই হবে শক্তিশালী আইটি দপ্তর। কয়েক বছরের মধ্যেই টিকিট বিক্রয়ের পুরো কার্যক্রমই নিয়ন্ত্রণ করবে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে রোববার বিকালে রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবির  বলেন, আমাদের এত অর্জন টিকিট কালোবাজারির কারণে ম্লান হতে পারে না। টিকিট বিক্রয়ে বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এদের সদস্যরা গ্রেফতার হয়েছেন। আমরা নিজেরাই টিকিট বিক্রিসহ পুরো রেল ব্যবস্থাকে ডিজিটাল সিস্টেম করব। একটি শক্তিশালী আইটি দপ্তর তৈরি করা হবে। নতুন লোকবল নিয়োগসহ অবকাঠামো তৈরি করতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি, সহজ’র সঙ্গে চুক্তি শেষ হলেই রেল নিজস্ব সক্ষমতায় টিকিট বিক্রিসহ যাবতীয় আইটি বিষয়গুলো নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করবে। তিনি আরও বলেন, রেলের সক্ষমতা রয়েছে টিকিট বিক্রির। আমরা ভারতের সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করছি। ভারতীয় রেল এ সংক্রান্ত একটি প্রেজেন্টেশনও উপস্থাপন করেছে। প্রায় ৪৭ হাজার জনবল নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে এগোচ্ছে। আইটি দপ্তরের জন্য অভিজ্ঞ লোকবল নিয়োগ করা হবে। যে দপ্তর হবে অত্যাধুনিক এবং বিশ্বমানের। রেলে আমূল পরিবর্তন আসছে। নতুন লাইন, ট্রেন উদ্বোধন হচ্ছে। আধুনিক ইঞ্জিন-কোচ যুক্ত হচ্ছে রেলবহরে। প্রতিটি ট্রেনসহ রেলের সব স্থাপনা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। এজন্য মাঠপর্যায়ে কাজও চলছে।

রেলওয়ে অপারেশন দপ্তর সূত্র বলছে, টিকিট বিক্রয়ে সহজ ডটকম ৫ বছরের জন্য চুক্তি করেছে। ইতোমধ্যে ২ বছর অতিক্রম করছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই রেল টিকিট বিক্রয়ের সক্ষমতা অর্জন করবে। অর্থাৎ লোকবল ও অবকাঠামো চূড়ান্ত হবে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি টিকিট কাউন্টারে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে রেল ২৫ পয়সা করে দিচ্ছে সহজ ডটকমকে। কিন্তু অনলাইনে টিকিট বিক্রির জন্য চার্জ (মাশুল) হিসাবে গ্রাহকের কাছ থেকে তারা ২০ টাকা নেয়। দিনে যদি ১ লাখ টিকিট বিক্রি করে, তাহলে গ্রাহকের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা বাড়তি আদায় হয়।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত এক কর্মকর্তা জানান, সবকিছুই রেলের রয়েছে অথচ কোনো এক অদৃশ্য কারণে প্রায় দেড় যুগ ধরে বেসরকারি দুটি সংস্থা হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। কমলাপুর স্টেশনসহ সারা দেশে ১০৪টি স্টেশনে সহজ ডটকম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অফিস কক্ষ থেকে শুরু করে, বিদ্যুৎ সবই রেলের। তাহলে রেল কেন টিকিট বিক্রি করতে পারবে না। তিনি বলেন, বেসরকারি সংস্থা চুক্তি লঙ্ঘন করে টিকিট কালোবাজারি চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এমন অভিযোগে সংশ্লিষ্টরা গ্রেফতার হয়েছে। এমন অপরাধের দায়ে সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এ নিয়ে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা কোনো কথা বলছে না। জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার মো. রেজাউল করিম ও তার সহযোগী মো. এমরানুল আলম সম্রাট র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এজেন্টের লোক টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পুরো রেলকে কলঙ্কিত করেছে।

রেলওয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার সাহাদাত আলী যুগান্তরকে বলেন, রেলে একটি শক্তিশালী আইটি দপ্তরের বিকল্প নেই। আমরা রেলে এত উন্নয়ন করছি, নিশ্চয় আইটি দপ্তরও গড়ে তুলতে পারব। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আমরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছি। রেলে টিকিট বিক্রির কার্যক্রম রেলই পরিচালনা করবে। এজন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এতে রেলের যেমন আয় বাড়বে তেমনি যাত্রীদেরও সাশ্রয় হবে। বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে নতুন করে আর চুক্তি হবে না।

 

 

 

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

রেলেই হচ্ছে শক্তিশালী আইটি দপ্তর

প্রকাশের সময় : ০৮:৫১:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪

সরকার রেলে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। গত একযুগে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এছাড়া প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এত উন্নয়নের পরও ট্রেন যাত্রীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ‘টিকিট’ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতাই অর্জন করতে পারেনি রেল। তবে এবার সেই অভাব গোছাতে যাচ্ছে রেল। রেলেই হবে শক্তিশালী আইটি দপ্তর। কয়েক বছরের মধ্যেই টিকিট বিক্রয়ের পুরো কার্যক্রমই নিয়ন্ত্রণ করবে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে রোববার বিকালে রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবির  বলেন, আমাদের এত অর্জন টিকিট কালোবাজারির কারণে ম্লান হতে পারে না। টিকিট বিক্রয়ে বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এদের সদস্যরা গ্রেফতার হয়েছেন। আমরা নিজেরাই টিকিট বিক্রিসহ পুরো রেল ব্যবস্থাকে ডিজিটাল সিস্টেম করব। একটি শক্তিশালী আইটি দপ্তর তৈরি করা হবে। নতুন লোকবল নিয়োগসহ অবকাঠামো তৈরি করতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি, সহজ’র সঙ্গে চুক্তি শেষ হলেই রেল নিজস্ব সক্ষমতায় টিকিট বিক্রিসহ যাবতীয় আইটি বিষয়গুলো নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করবে। তিনি আরও বলেন, রেলের সক্ষমতা রয়েছে টিকিট বিক্রির। আমরা ভারতের সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করছি। ভারতীয় রেল এ সংক্রান্ত একটি প্রেজেন্টেশনও উপস্থাপন করেছে। প্রায় ৪৭ হাজার জনবল নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে এগোচ্ছে। আইটি দপ্তরের জন্য অভিজ্ঞ লোকবল নিয়োগ করা হবে। যে দপ্তর হবে অত্যাধুনিক এবং বিশ্বমানের। রেলে আমূল পরিবর্তন আসছে। নতুন লাইন, ট্রেন উদ্বোধন হচ্ছে। আধুনিক ইঞ্জিন-কোচ যুক্ত হচ্ছে রেলবহরে। প্রতিটি ট্রেনসহ রেলের সব স্থাপনা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। এজন্য মাঠপর্যায়ে কাজও চলছে।

রেলওয়ে অপারেশন দপ্তর সূত্র বলছে, টিকিট বিক্রয়ে সহজ ডটকম ৫ বছরের জন্য চুক্তি করেছে। ইতোমধ্যে ২ বছর অতিক্রম করছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই রেল টিকিট বিক্রয়ের সক্ষমতা অর্জন করবে। অর্থাৎ লোকবল ও অবকাঠামো চূড়ান্ত হবে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি টিকিট কাউন্টারে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে রেল ২৫ পয়সা করে দিচ্ছে সহজ ডটকমকে। কিন্তু অনলাইনে টিকিট বিক্রির জন্য চার্জ (মাশুল) হিসাবে গ্রাহকের কাছ থেকে তারা ২০ টাকা নেয়। দিনে যদি ১ লাখ টিকিট বিক্রি করে, তাহলে গ্রাহকের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা বাড়তি আদায় হয়।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত এক কর্মকর্তা জানান, সবকিছুই রেলের রয়েছে অথচ কোনো এক অদৃশ্য কারণে প্রায় দেড় যুগ ধরে বেসরকারি দুটি সংস্থা হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। কমলাপুর স্টেশনসহ সারা দেশে ১০৪টি স্টেশনে সহজ ডটকম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অফিস কক্ষ থেকে শুরু করে, বিদ্যুৎ সবই রেলের। তাহলে রেল কেন টিকিট বিক্রি করতে পারবে না। তিনি বলেন, বেসরকারি সংস্থা চুক্তি লঙ্ঘন করে টিকিট কালোবাজারি চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এমন অভিযোগে সংশ্লিষ্টরা গ্রেফতার হয়েছে। এমন অপরাধের দায়ে সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এ নিয়ে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা কোনো কথা বলছে না। জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার মো. রেজাউল করিম ও তার সহযোগী মো. এমরানুল আলম সম্রাট র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এজেন্টের লোক টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পুরো রেলকে কলঙ্কিত করেছে।

রেলওয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার সাহাদাত আলী যুগান্তরকে বলেন, রেলে একটি শক্তিশালী আইটি দপ্তরের বিকল্প নেই। আমরা রেলে এত উন্নয়ন করছি, নিশ্চয় আইটি দপ্তরও গড়ে তুলতে পারব। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আমরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছি। রেলে টিকিট বিক্রির কার্যক্রম রেলই পরিচালনা করবে। এজন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এতে রেলের যেমন আয় বাড়বে তেমনি যাত্রীদেরও সাশ্রয় হবে। বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে নতুন করে আর চুক্তি হবে না।