Sylhet ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহাভূমিকম্প’, আসছে,লাখো মানুষের মৃত্যুর শঙ্কা

  • ভিশন ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০২:৪০:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫
  • ২২

 

ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে এখনো উদ্ধার হচ্ছে লাশের পর লাশ। শুক্রবারের ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে গেছে সে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা। এর মধ্যেই এবার ‘মহাভূমিকম্প’ এবং সুনামির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’ জাপান। আর এই মহাভূমিকম্পে তিন লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কার কথাও জানাচ্ছে দেশটি।

বুধবার (২ এপ্রিল) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, তীব্র ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করে সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাপান সরকার।

সেই রিপোর্টে সরকারের আশঙ্কা, ‘মহাভূমিকম্প’ এবং তার ফলে সৃষ্ট সুনামির কারণে জাপানে তিন লক্ষাধিক মানুষ মারা যেতে পারেন। আর্থিক ক্ষতি হতে পারে দুই লাখ কোটি ডলারের, যা সে দেশের মোট জিডিপির অর্ধেক!

বিজ্ঞানীদের অনুমান, ‘মহাভূমিকম্প’ হলে কম্পনের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৮ থেকে ৯ হতে পারে।

২০২৪ সালে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল দক্ষিণ জাপানে। সেই ভূকম্পনের পরেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। জাপান সরকার রিপোর্টে উল্লেখ করে, সম্ভাব্য ‘মহাভূমিকম্প’র কারণে ১২.৩ লাখ মানুষ, অর্থাৎ সে দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেইমতোই নাকি তৈরি হচ্ছে ‘যুদ্ধের’ পরিকল্পনা।

রিপোর্টে বলা হয়, ‘মহাভূমিকম্প’ হলে কম্পনের সম্ভাব্য উৎস হবে ‘নানকাই ট্রফ’ নামে সমুদ্রের তলদেশের একটি এলাকা। ‘নানকাই ট্রফ’ হলো শিজুওকা থেকে কিউশু পর্যন্ত ৮০০ কিলোমিটার বিস্তৃত সমুদ্রতলের চ্যুতি। ২০২৪ সালের অগস্টে সমুদ্র-তলদেশের ওই এলাকা নিয়ে প্রথমবার সতর্কতা জারি করেছিল জাপান।

২০১১ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প, সুনামি এবং ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর থেকেই ‘মহাভূমিকম্প’ আসতে পারে কি না তা নিয়ে আগাম সতর্কতা জারি করার নিয়ম চালু হয়েছে জাপানে। কিন্তু ‘মহাভূমিকম্প’ হওয়া নিয়ে এত নিশ্চিত কীভাবে হচ্ছে জাপান? কেনই বা তাড়াহুড়ো করে রিপোর্ট প্রকাশ করল টোকিয়ো?

টোকিয়োর যুদ্ধতৎপরতা দেখানোর কারণ, অস্থির টেকটোনিক পাতের কার্যকলাপ। বিজ্ঞানীরা জানায়, ফিলিপিন্সের সমুদ্রপ্লেট ইউরেশিয়ান প্লেটের নীচে নেমে এসেছে এবং ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করার শক্তি সঞ্চয় করেছে। জাপান সরকারের অনুমান, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে নানকাই খাদে ৮-৯ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা ৭০-৮০ শতাংশ।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, এখন ‘মহাভূমিকম্প’ হলে ৩০-৩৪ মিটার উচ্চতার ঢেউ শিজুওকা, কোচি এবং ওয়াকায়ামার মতো উপকূলীয় এলাকাগুলোকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

‘নানকাই ট্রফ’ কেন এত বিপজ্জনক? বিশেষজ্ঞেরা জানায়, নানকাই খাদে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ‘টেকটোনিক স্ট্রেন’ (পৃথিবীর ভূগর্ভস্থ প্লেটগুলির বিকৃতি, যা টেকটোনিক চাপের কারণে ঘটে) জমেছে, যা ধারাবাহিকভাবে বড় বড় ভূমিকম্পের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

তোহোকু এবং কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় সতর্ক করা হয়, ‘নানকাই ট্রফ’-এ ৭-এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে এক সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০০-৩৬০০ গুণ ভূমিকম্প তৈরি হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই আতঙ্ক এবং উদ্বেগ দেখা দিতে শুরু করেছে জাপানের নাগরিকদের মনে। আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরাও।

টোকিয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূকম্পবিদ নাওশি হিরাতা সতর্ক করে বলেন, প্রস্তুতির সময় এখনই। যখন মাটি কাঁপতে শুরু করবে তখন নয়।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sylhet Vision

মহাভূমিকম্প’, আসছে,লাখো মানুষের মৃত্যুর শঙ্কা

প্রকাশের সময় : ০২:৪০:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫

 

ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে এখনো উদ্ধার হচ্ছে লাশের পর লাশ। শুক্রবারের ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে গেছে সে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা। এর মধ্যেই এবার ‘মহাভূমিকম্প’ এবং সুনামির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’ জাপান। আর এই মহাভূমিকম্পে তিন লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কার কথাও জানাচ্ছে দেশটি।

বুধবার (২ এপ্রিল) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, তীব্র ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করে সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাপান সরকার।

সেই রিপোর্টে সরকারের আশঙ্কা, ‘মহাভূমিকম্প’ এবং তার ফলে সৃষ্ট সুনামির কারণে জাপানে তিন লক্ষাধিক মানুষ মারা যেতে পারেন। আর্থিক ক্ষতি হতে পারে দুই লাখ কোটি ডলারের, যা সে দেশের মোট জিডিপির অর্ধেক!

বিজ্ঞানীদের অনুমান, ‘মহাভূমিকম্প’ হলে কম্পনের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৮ থেকে ৯ হতে পারে।

২০২৪ সালে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল দক্ষিণ জাপানে। সেই ভূকম্পনের পরেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। জাপান সরকার রিপোর্টে উল্লেখ করে, সম্ভাব্য ‘মহাভূমিকম্প’র কারণে ১২.৩ লাখ মানুষ, অর্থাৎ সে দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেইমতোই নাকি তৈরি হচ্ছে ‘যুদ্ধের’ পরিকল্পনা।

রিপোর্টে বলা হয়, ‘মহাভূমিকম্প’ হলে কম্পনের সম্ভাব্য উৎস হবে ‘নানকাই ট্রফ’ নামে সমুদ্রের তলদেশের একটি এলাকা। ‘নানকাই ট্রফ’ হলো শিজুওকা থেকে কিউশু পর্যন্ত ৮০০ কিলোমিটার বিস্তৃত সমুদ্রতলের চ্যুতি। ২০২৪ সালের অগস্টে সমুদ্র-তলদেশের ওই এলাকা নিয়ে প্রথমবার সতর্কতা জারি করেছিল জাপান।

২০১১ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প, সুনামি এবং ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর থেকেই ‘মহাভূমিকম্প’ আসতে পারে কি না তা নিয়ে আগাম সতর্কতা জারি করার নিয়ম চালু হয়েছে জাপানে। কিন্তু ‘মহাভূমিকম্প’ হওয়া নিয়ে এত নিশ্চিত কীভাবে হচ্ছে জাপান? কেনই বা তাড়াহুড়ো করে রিপোর্ট প্রকাশ করল টোকিয়ো?

টোকিয়োর যুদ্ধতৎপরতা দেখানোর কারণ, অস্থির টেকটোনিক পাতের কার্যকলাপ। বিজ্ঞানীরা জানায়, ফিলিপিন্সের সমুদ্রপ্লেট ইউরেশিয়ান প্লেটের নীচে নেমে এসেছে এবং ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করার শক্তি সঞ্চয় করেছে। জাপান সরকারের অনুমান, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে নানকাই খাদে ৮-৯ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা ৭০-৮০ শতাংশ।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, এখন ‘মহাভূমিকম্প’ হলে ৩০-৩৪ মিটার উচ্চতার ঢেউ শিজুওকা, কোচি এবং ওয়াকায়ামার মতো উপকূলীয় এলাকাগুলোকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

‘নানকাই ট্রফ’ কেন এত বিপজ্জনক? বিশেষজ্ঞেরা জানায়, নানকাই খাদে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ‘টেকটোনিক স্ট্রেন’ (পৃথিবীর ভূগর্ভস্থ প্লেটগুলির বিকৃতি, যা টেকটোনিক চাপের কারণে ঘটে) জমেছে, যা ধারাবাহিকভাবে বড় বড় ভূমিকম্পের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

তোহোকু এবং কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় সতর্ক করা হয়, ‘নানকাই ট্রফ’-এ ৭-এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে এক সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০০-৩৬০০ গুণ ভূমিকম্প তৈরি হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই আতঙ্ক এবং উদ্বেগ দেখা দিতে শুরু করেছে জাপানের নাগরিকদের মনে। আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরাও।

টোকিয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূকম্পবিদ নাওশি হিরাতা সতর্ক করে বলেন, প্রস্তুতির সময় এখনই। যখন মাটি কাঁপতে শুরু করবে তখন নয়।