Sylhet ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ঢেলে সাজাবে

পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং নেতাকর্মীদের আবারও সক্রিয় করতে সংগঠনগুলোকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে পহেলা মার্চ ছাত্রদলের নতুন আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি দেওয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, যুবদলও পুনর্গঠন করা হবে। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ না হওয়ায় সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আরও তিন মাস সময় চেয়েছেন। এই সময়ে তারা মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ইউনিট পুনর্গঠন করতে চাইছেন।

তাছাড়া সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না দীর্ঘ ১১ মাস কারাগারে ছিলেন। শ্রমিক দলেরও কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি দেওয়ার চিন্তা করছে। এজন্য খোঁজা হচ্ছে সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব। এছাড়াও অন্যান্য সংগঠনেরও কমিটি পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর আগের মতো ‘জৌলুস’ নেই। সংগঠনগুলো এখন তেমন কর্মী তৈরি করতে পারছে না। কার্যত তারা কর্মী সংকটে পড়েছে। এসব সংগঠনে এখন সক্রিয় কর্মী বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মহিলা দল বাদে বাকি সংগঠনে নারীদের অংশগ্রহণ হাতেগোনা কয়েকজন।

বিশেষ করে বিএনপির ভ্যানগার্ডখ্যাত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের তেমন সংগঠনে টানতে পারছে না। যদিও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহাবস্থান না থাকায় সেভাবে সাংগঠনিক কাজ করতে পারছে না বলে সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য সংগঠনও এখন অনেকটা কর্মী সংকটে ভুগছে।

এমন বাস্তবতায় সংগঠনগুলো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি (আংশিক) দিয়েছে। এবার যুবদল ও শ্রমিক দলও পুনর্গঠনে নজর দিয়েছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপির দুই সহযোগী সংগঠন হলো জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও শ্রমিক দল। আর অঙ্গ সংগঠন হলো জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, মহিলা দল, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস), তাঁতীদল, ওলামা দল ও মৎস্যজীবী দল।

এর মধ্যে কিছুদিন আগে ওলামা দলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এখন কেন্দ্রীয় কমিটিবিহীন চলছে সংগঠনটি। অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দল ছাড়া সব সংগঠনই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে।

জানা যায়, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মধ্যে মূলত যুব, ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সারা দেশে শক্তিশালী ভিত্তি রয়েছে। যদিও ছাত্রদলের ১১৮টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে বেশির ভাগ মেয়াদোত্তীর্ণ। যুবদলেরও ৮২টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিটের মধ্যে অধিকাংশেরই মেয়াদ নেই।

শুধু স্বেচ্ছাসেবক দলের ৮২টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিটের মধ্যে প্রায় অর্ধেক কমিটি দেওয়া হয়েছে। আরও ২০ জেলার কমিটি গঠনের কাজও শেষ পর্যায়ে, ঈদের পরপরই দেওয়া হবে। তবে এ তিন সংগঠনের থানা, পৌর ও উপজেলায় আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও তা মনিটরিংয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো উদ্যোগ নেই। যে কারণে এসব কমিটির নেতারাও তাদের অধীনস্ত ইউনিটের বেশির ভাগ কমিটি করতে পারেনি। এতে সংগঠন দুর্বল হচ্ছে।

অবশ্য যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না যুগান্তরকে বলেন, ‘কর্মী সংকটের তো প্রশ্নই আসে না। বরং কমিটি গঠন করতে গেলে এখনো হিমশিম খেতে হয়। যুবদল এখন আরও শক্তিশালী। বাংলাদেশের এখন প্রকৃত বিরোধী দল বিএনপি। একমাত্র বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপিই মাঠে আছে দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে। আমাদের মনোবল চাঙা আছে, কর্মীর কোনো অভাব নেই।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানী যুগান্তরকে বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক দলেরও কোনো কর্মী সংকট নেই। বরং প্রত্যেক নেতাকর্মী জেল থেকে বের হয়েই বলেন, দরকার হয় আরও দশ বছর জেল খাটব, কিন্তু এই সরকারের কাছে আপস করব না। নেতাকর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছেন। নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের অর্থের প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়েছে, ব্লাকমেইল করেছে; কিন্তু নেতাকর্মীরা তাদের কোনো ষড়যন্ত্রেই পা দেয়নি। নেতাকর্মীদের তাদের দল ও নেতৃত্বের প্রতি শতভাগ আনুগত্য রয়েছে। আমরা আশা করি, আগের চেয়েও সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে। চূড়ান্ত লক্ষ্যে না যাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘একদলীয় শাসনব্যবস্থার কারণে ক্যাম্পাসগুলোয় ছাত্রলীগ ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। সাত জানুয়ারির নির্বাচনের পর আরও কর্তৃত্বপরায়ণ, গণতন্ত্র সংকোচন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সব অধিকার হরণ করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের বাস্তবতায় ছাত্রদলের নারী নেতাকর্মীদের জেল খাটতে হয়েছে। এ ভয়ে ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের কারণে সাধারণভাবে কর্মী বা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যারা ছাত্রদলের ব্যানারে আসতে চায়, তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। আন্দোলনে গেলেও মামলা, হামলার শিকার হতে হয়। এক্ষেত্রে নারী কর্মীরাও রেহাই পাচ্ছেন না। কিন্তু আশার কথা হলো, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী এখনো প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের পতাকা সমুন্নত রেখেছে।’

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জগন্নাথপুর যুব জমিয়তের নবনির্বাচিত কমিটির পরিচিতি শপথ অনুষ্ঠিত

বিএনপি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ঢেলে সাজাবে

প্রকাশের সময় : ০৬:৩৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০২৪

পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং নেতাকর্মীদের আবারও সক্রিয় করতে সংগঠনগুলোকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে পহেলা মার্চ ছাত্রদলের নতুন আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি দেওয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, যুবদলও পুনর্গঠন করা হবে। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ না হওয়ায় সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আরও তিন মাস সময় চেয়েছেন। এই সময়ে তারা মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ইউনিট পুনর্গঠন করতে চাইছেন।

তাছাড়া সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না দীর্ঘ ১১ মাস কারাগারে ছিলেন। শ্রমিক দলেরও কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি দেওয়ার চিন্তা করছে। এজন্য খোঁজা হচ্ছে সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব। এছাড়াও অন্যান্য সংগঠনেরও কমিটি পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর আগের মতো ‘জৌলুস’ নেই। সংগঠনগুলো এখন তেমন কর্মী তৈরি করতে পারছে না। কার্যত তারা কর্মী সংকটে পড়েছে। এসব সংগঠনে এখন সক্রিয় কর্মী বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মহিলা দল বাদে বাকি সংগঠনে নারীদের অংশগ্রহণ হাতেগোনা কয়েকজন।

বিশেষ করে বিএনপির ভ্যানগার্ডখ্যাত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের তেমন সংগঠনে টানতে পারছে না। যদিও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহাবস্থান না থাকায় সেভাবে সাংগঠনিক কাজ করতে পারছে না বলে সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য সংগঠনও এখন অনেকটা কর্মী সংকটে ভুগছে।

এমন বাস্তবতায় সংগঠনগুলো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি (আংশিক) দিয়েছে। এবার যুবদল ও শ্রমিক দলও পুনর্গঠনে নজর দিয়েছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপির দুই সহযোগী সংগঠন হলো জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও শ্রমিক দল। আর অঙ্গ সংগঠন হলো জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, মহিলা দল, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস), তাঁতীদল, ওলামা দল ও মৎস্যজীবী দল।

এর মধ্যে কিছুদিন আগে ওলামা দলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এখন কেন্দ্রীয় কমিটিবিহীন চলছে সংগঠনটি। অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দল ছাড়া সব সংগঠনই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে।

জানা যায়, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মধ্যে মূলত যুব, ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সারা দেশে শক্তিশালী ভিত্তি রয়েছে। যদিও ছাত্রদলের ১১৮টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে বেশির ভাগ মেয়াদোত্তীর্ণ। যুবদলেরও ৮২টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিটের মধ্যে অধিকাংশেরই মেয়াদ নেই।

শুধু স্বেচ্ছাসেবক দলের ৮২টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিটের মধ্যে প্রায় অর্ধেক কমিটি দেওয়া হয়েছে। আরও ২০ জেলার কমিটি গঠনের কাজও শেষ পর্যায়ে, ঈদের পরপরই দেওয়া হবে। তবে এ তিন সংগঠনের থানা, পৌর ও উপজেলায় আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও তা মনিটরিংয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো উদ্যোগ নেই। যে কারণে এসব কমিটির নেতারাও তাদের অধীনস্ত ইউনিটের বেশির ভাগ কমিটি করতে পারেনি। এতে সংগঠন দুর্বল হচ্ছে।

অবশ্য যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না যুগান্তরকে বলেন, ‘কর্মী সংকটের তো প্রশ্নই আসে না। বরং কমিটি গঠন করতে গেলে এখনো হিমশিম খেতে হয়। যুবদল এখন আরও শক্তিশালী। বাংলাদেশের এখন প্রকৃত বিরোধী দল বিএনপি। একমাত্র বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপিই মাঠে আছে দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে। আমাদের মনোবল চাঙা আছে, কর্মীর কোনো অভাব নেই।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানী যুগান্তরকে বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক দলেরও কোনো কর্মী সংকট নেই। বরং প্রত্যেক নেতাকর্মী জেল থেকে বের হয়েই বলেন, দরকার হয় আরও দশ বছর জেল খাটব, কিন্তু এই সরকারের কাছে আপস করব না। নেতাকর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছেন। নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের অর্থের প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়েছে, ব্লাকমেইল করেছে; কিন্তু নেতাকর্মীরা তাদের কোনো ষড়যন্ত্রেই পা দেয়নি। নেতাকর্মীদের তাদের দল ও নেতৃত্বের প্রতি শতভাগ আনুগত্য রয়েছে। আমরা আশা করি, আগের চেয়েও সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে। চূড়ান্ত লক্ষ্যে না যাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘একদলীয় শাসনব্যবস্থার কারণে ক্যাম্পাসগুলোয় ছাত্রলীগ ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। সাত জানুয়ারির নির্বাচনের পর আরও কর্তৃত্বপরায়ণ, গণতন্ত্র সংকোচন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সব অধিকার হরণ করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের বাস্তবতায় ছাত্রদলের নারী নেতাকর্মীদের জেল খাটতে হয়েছে। এ ভয়ে ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের কারণে সাধারণভাবে কর্মী বা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যারা ছাত্রদলের ব্যানারে আসতে চায়, তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। আন্দোলনে গেলেও মামলা, হামলার শিকার হতে হয়। এক্ষেত্রে নারী কর্মীরাও রেহাই পাচ্ছেন না। কিন্তু আশার কথা হলো, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী এখনো প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের পতাকা সমুন্নত রেখেছে।’