বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসময়ে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে দেখার হাওরের একাংশের বোরো ধান। বৃষ্টির পানি বের হবার পথ না পেয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে কৃষকের সামনেই ডুবছে সোনালী ফসল। ইতোমধ্যে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে কয়েক একর কাঁচা ধান। ধানের ছড়ার সাথে ছুঁই ছুঁই করছে কয়েকশত একর ধান। দু’একদিনের ভেতর পানি বের করা না গেলে অন্তত দুইশ একর জমির ধান একেবারে পানিতে নিমজ্জিত হবে বলে দাবি স্থানীয় কৃষকদের। ফসল তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা।
জেলার ৯৫টি হাওরের অন্যতম বৃহৎ হাওর দেখার হাওর। এই হাওরে সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষাধিক কৃষককের ২৪ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এই হাওরে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে এবং ধানের ফলনও ভাল হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের দরিয়াবাজ, কলাউড়া, ইছাগড়ি, হুরমত নগর, রউয়ারপাড়, গুয়ারছড়া, হরিপুরসহ ৭টি গ্রামের কয়েক শত কৃষকের কাঁচা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ধান পুরোপুরি কাঁচা থাকায় সেগুলো কাটতেও পারছেন না কৃষকরা। শেষ চেষ্টার অংশ হিসেবে এবং গবাদিপশুর ঘাসের জন্য পানিতে ডুবে কাঁচা ধানই কাটছেন কিছু কৃষক। জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে কৃষকরা দুষছেন শান্তিগঞ্জের মহাসিং নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত ফসলরক্ষা বাঁধকে। হাওরের বৃষ্টির পানি নদীতে নামার পথে বাঁধ দেয়ায় প্রত্যেক বছর এই হাওরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ফসলহানির কথা জানান তারা।
দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে তাদের ফসল রক্ষার দাবি কৃষকদের। একই সাথে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে মহাসিং নদীর বাঁধে স্লইজ গেইট নির্মাণ করার দাবিও জানান তারা।
আব্দুল্লাহপুর গ্রামের ননী গোপাল দাস বলেন, আমার ৬ কিয়ার জমি পানির তলে। বড় কষ্ট করে ঋণ এনে জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। আমার বাচ্চা কাচ্চা পরিবার এই ধানের উপর নির্ভরশীল। ধান হারিয়ে আমি সাগরে ভেসে গেছি। কিভাবে ঋণ শোধ করবো আর কিভাবে বাঁচব জানি না।
দরিয়াবাদের নুর আহমেদ বলেন, দেখার হাওরে এই অংশ তিনশ হাল জমি আছে। আর দশ পনের দিন পর কেটে ঘরে তোলার অপেক্ষায় আমরা। এমন সময় বৃষ্টি ও বিলের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে আমাদের ধান। আমরা চেয়ে চেয়ে দেখতেছি। কত অফিসে গেছি তারা কিছু অংশ বলে বসে থাকে। মহাসিং নদীতে হাওরের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেয়ায় আমাদের জীবন ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দ্রুত পানি নামার ব্যবস্থা না করলে সকল কৃষক নিঃস্ব হয়ে যাবে।
কলাউরা গ্রামের জুয়েল আহমেদ বলেন, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা হলে আমাদের বাঁচার উপায় নেই। যদি পানি বের করার ব্যবস্থা না করা হয় আমরা ডিসি অফিস ঘেরাও, মানববন্ধন সহ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।
সাবেক ইউপি সদস্য রেদওয়ান আলী রায়হান বলেন, আমরা এক ফসলের উপর নির্ভরশীল। এই ফসল দিয়ে সারা বছর জীবন চলে। আমাদের ফসল চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে কাঁচা ধান কাটছেন শুধু মনকে সান্তনা দেয়ার জন্য। বাস্তবে শুধু গরুর ঘাস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। যেভাবে হউক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে আমাদের রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হোক।
এদিকে ফসল তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে হাওর পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক, জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সহ সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ—পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, প্রতি বছর বৃষ্টিতে এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গত বছর শান্তিগঞ্জের মাধ্যমে কিছুটা পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে কৃষকরা ফসল তুলতে পেরেছিল। আমরা চেষ্টা করব পানি নিষ্কাশনের যাতে কৃষকরা ফসল তোলতে পারে। কৃষক যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে জানাব। ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারি সহযোগিতা পাবেন।
জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বললেন, দেখার হাওরের জলাবদ্ধ এলাকার গ্রামবাসী ও কৃষকদের দাবি পানি নিষ্কাশন করা হলে ফসল রক্ষা যাবে। কৃষকদের প্রস্তাব অনুযায়ী পানি নিষ্কাশনের জায়গাটি পরিদর্শন করব। পরিদর্শন করে সমাধানের যোগ্য হলে সবোর্চ চেষ্টা করব পানি নিষ্কাশনের। যেন কৃষকের ফসলের ক্ষতি না হয়।