Sylhet ১০:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফজরের নামাজের পর যে আমলের ফজিলত বেশি

  • Live

 

ফজরের নামাজের পর যে আমলের ফজিলত বেশি

প্রতীকী ছবি

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজর গুরুত্ব অনেক বেশি। কষ্ঠ করে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করতে হয়। তাই গুরুত্বের পাশাপাশি এর ফজিলতও অনেক। ফজরের নামাজের সওয়াব ও ফজিলত নিয়ে যেমন অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে, তেমনই ফজরের নামাজ আদায়ের পরও ফজিলতপূর্ণ অনেক আমল রয়েছে।

একজন মুমিন বান্দা ফজরের নামাজ আদায়ের পর বিভিন্ন উপায়ে আমল করতে পারেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) ফজরের পর সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত নামাজের পাটিতেই বসে থাকতেন। ফজরের পরে সেসব দোয়া ও জিকির সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা এসেছে, সেগুলো হল-

আয়াতুল কুরসি পাঠ করা

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অন্তরায় থাকবে না।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ২৩৯৫)

আয়াতুল কুরসি:

اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

উচ্চারণ :  আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কায়্যূম, লা তা’খুযুহু সিনাতুওঁ ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল্ আরদি, মান জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজিনহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খলফাহুম, ওয়ালা ইউহিতুনা বিশাইয়িম্ মিন ইলিমহি ইল্লা বিমা শা-আ। ওয়াসিআ কুরসিয়্যুহুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা, ওয়ালা ইয়াঊদুহু হিফজুহুমা, ওয়াহুওয়াল আলিয়্যুল আজিম। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৫)

এ আয়াতটি পড়তে খুব বেশি হলে এক মিনিট সময় লাগতে পারে। অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পাঁচ মিনিট। দৈনিক ২৪ ঘণ্টা সময় থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় ব্যয় করলে এ মহাপুরস্কার লাভ করা সম্ভব।

হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার নিম্নের দোয়া পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৯)

দোয়াটি হলো- رَضِيتُ باللهِ رَبَّاً، وَبِالْإِسْلَامِ دِيناً، وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيَّاً

উচ্চারণ : রাজিতু বিল্লাহি রব্বাওঁ ওয়াবিল ইসলামী দ্বিনাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা।
অর্থ: আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বিন হিসেবে ও মুহাম্মাদ (সা.)-কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।

সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠ করা

আল্লাহর রাসুল (সা.) হাদিসে উল্লেখ করেছেন যে, ‘যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা নিম্নের ইস্তিগফারটি পড়ে এবং ওই দিনে বা রাতে ইন্তেকাল করে, তবে সে জান্নাতি হবে। (বুখারি, হাদিস : ৬৩০৬)

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي، إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, খালাকতানি, ওয়া আনা আব্দুকা, ওয়া আনা আলা আহিদকা ওয়া ওয়া’দিকা মাস্তাতা’তু, আউজু বিকা মিন শাররি মা সানা’তু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগিফরুজ জুনুবা ইল্লা আন্তা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি আপনার গোলাম। আমি আপনার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির ওপর যথাসাধ্য আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আমার ওপর আপনার অনুগ্রহ স্বীকার করছি। আবার আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারবে।

জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া

হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের পর সাতবার নিম্নের দোয়াটি পাঠ করে এবং ওই দিনে বা রাতে তার মৃত্যু হয় তাহলে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৭৯)

اللهم أجرني من النار
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্ নার।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন।

সুরা ইয়াসিন ও সুরা ইখলাস পড়া

হাদিসে সুরা ইয়াসিন পড়ার অনেক ফজিলত বর্ণিত আছে। একবার সুরা ইয়াসিন পড়লে দশবার পুরো কুরআন পড়া পরিমাণ নেকী পাওয়া যাবে। প্রতিদিন সকালে সুরা ইয়াসিন পড়া মুমিনের কাজ। যারা আরবি ভালোভাবে পড়তে পারেন না, তারা অন্তত সুরা ইখলাস পড়তে পারেন। তিনবার সুরা ইখলাস পড়লে একবার পুরো কুরআন পড়া পরিমাণ নেকী পাওয়া যায়।

ইসলাম সবসময়ই হালাল সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছে। বয়স ও সামর্থ্য হলেই শরীয়তের রীতি অনুযায়ী বিয়ে করার কথা একাধিকবার হাদিসে এসেছে একাধিকবার। পবিত্র কুরআনে স্বামী ও স্ত্রীকে একে অপরের পোশাকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে (সূরা আল-বাকারাহ্‌, আয়াত: ১৮৭)। পাশাপাশি প্রয়োজনীভেদে শরীয়তসম্মতভাবে বিচ্ছেদের কথাও বলা হেয়ছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি কিছু বিনিময় দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়, তবে উভয়ের কারও পাপ হবে না’ (সূরা আল-বাকারাহ্‌: ১২৯)

কুতায়বা (রহ.)… আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি তোমাদের কাছে এমন কেউ বিবাহের প্রস্তাব দেয় যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদের পছন্দনীয় হয়, তবে তাকে বিয়ে দিয়ে দাও। যদি এরূপ না করো তবে পৃথিবীতে ফিতনা ও বিরাট বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। (তিরমিজী: ১০৮৪)

প্রত্যেক যুবক-যুবতীর জন্য ক্ষেত্রভেদে বিয়ে করা কখনো ফরজ, আবার কখনও সুন্নত। এক্ষেত্রে পাত্রী দেখা থেকে শুরু করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, সবকিছু নিয়ে সাহাবাদের মাধ্যমে বর্ণিত বিভিন্ন হাদিসে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। আবার পবিত্র কুরআনেও উত্তম ও চক্ষু শীতলকারী স্ত্রী পাওয়ার কৌশল বলে দিয়েছেন মহান রাব্বুল আলামিন নিজেই। উত্তম জীবনসঙ্গী পেতে নিম্নবর্ণিত কুরআনের আয়াতটি  দোয়া হিসেবে পড়া যায়-

رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّ اجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا

উচ্চারণ: রাব্বানা-হাবলানা-মিন আজওয়া-জিনা, ওয়া জুররিইয়া-তিনা, কুররাতা আ’ইউনিউ-ওয়াজআলনা লিলমুত্তাকিয়না ইমামা।

অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শস্বরূপ করো। (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৭৪)

এছাড়াও উত্তম জীবনসঙ্গী পেতে নিম্নোক্ত আয়াতটিও পড়তে পারেন।

ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻟِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﺖَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﻓَﻘِﻴﺮ

উচ্চারণ: রাব্বি ইন্নি লিমা আনঝালতা ইলাইয়্যা মিন খাইরিন ফাকির।

অর্থ: হে আমার রব! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ পাঠাবে, আমি তার মুখাপেক্ষী। (সুরা আল-কাসাস, আয়াত: ২৪)

এছাড়াও বিভিন্ন বর্ণনায় দ্রুত বিয়ে কিংবা উত্তম জীবসঙ্গী পেতে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতের কথাও এসেছে। আবার কোথাও কোথাও সুরা তওবার নিম্নোক্ত আয়াত পড়ার কথা এসেছে-

فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُلْ حَسْبِيَ اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

উচ্চারণ: ফা-ইন তাওয়াল্লাও ফাকুল হাসবিয়্যাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়াহুয়া বাব্বুল আরশিল আজিম।

বর্তমানে যারা জীবনসঙ্গী খুঁজছেন, তারা শ্রেষ্ঠ সঙ্গী পেতে মহান রবের নিকট বেশি বেশি দোয়া করুন। অবশ্যই আল্লাহর পরিকল্পনা অতি উত্তম।

 

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

নিরীহ কারও নামে মামলা হলে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রত্যাহার: আইজিপি

ফজরের নামাজের পর যে আমলের ফজিলত বেশি

প্রকাশের সময় : ০৩:০৩:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪
  • Live

 

ফজরের নামাজের পর যে আমলের ফজিলত বেশি

প্রতীকী ছবি

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজর গুরুত্ব অনেক বেশি। কষ্ঠ করে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করতে হয়। তাই গুরুত্বের পাশাপাশি এর ফজিলতও অনেক। ফজরের নামাজের সওয়াব ও ফজিলত নিয়ে যেমন অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে, তেমনই ফজরের নামাজ আদায়ের পরও ফজিলতপূর্ণ অনেক আমল রয়েছে।

একজন মুমিন বান্দা ফজরের নামাজ আদায়ের পর বিভিন্ন উপায়ে আমল করতে পারেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) ফজরের পর সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত নামাজের পাটিতেই বসে থাকতেন। ফজরের পরে সেসব দোয়া ও জিকির সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা এসেছে, সেগুলো হল-

আয়াতুল কুরসি পাঠ করা

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অন্তরায় থাকবে না।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ২৩৯৫)

আয়াতুল কুরসি:

اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

উচ্চারণ :  আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কায়্যূম, লা তা’খুযুহু সিনাতুওঁ ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল্ আরদি, মান জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজিনহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খলফাহুম, ওয়ালা ইউহিতুনা বিশাইয়িম্ মিন ইলিমহি ইল্লা বিমা শা-আ। ওয়াসিআ কুরসিয়্যুহুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা, ওয়ালা ইয়াঊদুহু হিফজুহুমা, ওয়াহুওয়াল আলিয়্যুল আজিম। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৫)

এ আয়াতটি পড়তে খুব বেশি হলে এক মিনিট সময় লাগতে পারে। অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পাঁচ মিনিট। দৈনিক ২৪ ঘণ্টা সময় থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় ব্যয় করলে এ মহাপুরস্কার লাভ করা সম্ভব।

হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার নিম্নের দোয়া পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৯)

দোয়াটি হলো- رَضِيتُ باللهِ رَبَّاً، وَبِالْإِسْلَامِ دِيناً، وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيَّاً

উচ্চারণ : রাজিতু বিল্লাহি রব্বাওঁ ওয়াবিল ইসলামী দ্বিনাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা।
অর্থ: আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বিন হিসেবে ও মুহাম্মাদ (সা.)-কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।

সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠ করা

আল্লাহর রাসুল (সা.) হাদিসে উল্লেখ করেছেন যে, ‘যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা নিম্নের ইস্তিগফারটি পড়ে এবং ওই দিনে বা রাতে ইন্তেকাল করে, তবে সে জান্নাতি হবে। (বুখারি, হাদিস : ৬৩০৬)

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي، إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, খালাকতানি, ওয়া আনা আব্দুকা, ওয়া আনা আলা আহিদকা ওয়া ওয়া’দিকা মাস্তাতা’তু, আউজু বিকা মিন শাররি মা সানা’তু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগিফরুজ জুনুবা ইল্লা আন্তা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি আপনার গোলাম। আমি আপনার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির ওপর যথাসাধ্য আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আমার ওপর আপনার অনুগ্রহ স্বীকার করছি। আবার আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারবে।

জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া

হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের পর সাতবার নিম্নের দোয়াটি পাঠ করে এবং ওই দিনে বা রাতে তার মৃত্যু হয় তাহলে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৭৯)

اللهم أجرني من النار
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্ নার।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন।

সুরা ইয়াসিন ও সুরা ইখলাস পড়া

হাদিসে সুরা ইয়াসিন পড়ার অনেক ফজিলত বর্ণিত আছে। একবার সুরা ইয়াসিন পড়লে দশবার পুরো কুরআন পড়া পরিমাণ নেকী পাওয়া যাবে। প্রতিদিন সকালে সুরা ইয়াসিন পড়া মুমিনের কাজ। যারা আরবি ভালোভাবে পড়তে পারেন না, তারা অন্তত সুরা ইখলাস পড়তে পারেন। তিনবার সুরা ইখলাস পড়লে একবার পুরো কুরআন পড়া পরিমাণ নেকী পাওয়া যায়।

ইসলাম সবসময়ই হালাল সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছে। বয়স ও সামর্থ্য হলেই শরীয়তের রীতি অনুযায়ী বিয়ে করার কথা একাধিকবার হাদিসে এসেছে একাধিকবার। পবিত্র কুরআনে স্বামী ও স্ত্রীকে একে অপরের পোশাকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে (সূরা আল-বাকারাহ্‌, আয়াত: ১৮৭)। পাশাপাশি প্রয়োজনীভেদে শরীয়তসম্মতভাবে বিচ্ছেদের কথাও বলা হেয়ছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি কিছু বিনিময় দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়, তবে উভয়ের কারও পাপ হবে না’ (সূরা আল-বাকারাহ্‌: ১২৯)

কুতায়বা (রহ.)… আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি তোমাদের কাছে এমন কেউ বিবাহের প্রস্তাব দেয় যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদের পছন্দনীয় হয়, তবে তাকে বিয়ে দিয়ে দাও। যদি এরূপ না করো তবে পৃথিবীতে ফিতনা ও বিরাট বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। (তিরমিজী: ১০৮৪)

প্রত্যেক যুবক-যুবতীর জন্য ক্ষেত্রভেদে বিয়ে করা কখনো ফরজ, আবার কখনও সুন্নত। এক্ষেত্রে পাত্রী দেখা থেকে শুরু করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, সবকিছু নিয়ে সাহাবাদের মাধ্যমে বর্ণিত বিভিন্ন হাদিসে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। আবার পবিত্র কুরআনেও উত্তম ও চক্ষু শীতলকারী স্ত্রী পাওয়ার কৌশল বলে দিয়েছেন মহান রাব্বুল আলামিন নিজেই। উত্তম জীবনসঙ্গী পেতে নিম্নবর্ণিত কুরআনের আয়াতটি  দোয়া হিসেবে পড়া যায়-

رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّ اجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا

উচ্চারণ: রাব্বানা-হাবলানা-মিন আজওয়া-জিনা, ওয়া জুররিইয়া-তিনা, কুররাতা আ’ইউনিউ-ওয়াজআলনা লিলমুত্তাকিয়না ইমামা।

অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শস্বরূপ করো। (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৭৪)

এছাড়াও উত্তম জীবনসঙ্গী পেতে নিম্নোক্ত আয়াতটিও পড়তে পারেন।

ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻟِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﺖَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﻓَﻘِﻴﺮ

উচ্চারণ: রাব্বি ইন্নি লিমা আনঝালতা ইলাইয়্যা মিন খাইরিন ফাকির।

অর্থ: হে আমার রব! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ পাঠাবে, আমি তার মুখাপেক্ষী। (সুরা আল-কাসাস, আয়াত: ২৪)

এছাড়াও বিভিন্ন বর্ণনায় দ্রুত বিয়ে কিংবা উত্তম জীবসঙ্গী পেতে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতের কথাও এসেছে। আবার কোথাও কোথাও সুরা তওবার নিম্নোক্ত আয়াত পড়ার কথা এসেছে-

فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُلْ حَسْبِيَ اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

উচ্চারণ: ফা-ইন তাওয়াল্লাও ফাকুল হাসবিয়্যাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়াহুয়া বাব্বুল আরশিল আজিম।

বর্তমানে যারা জীবনসঙ্গী খুঁজছেন, তারা শ্রেষ্ঠ সঙ্গী পেতে মহান রবের নিকট বেশি বেশি দোয়া করুন। অবশ্যই আল্লাহর পরিকল্পনা অতি উত্তম।