নবীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে কুশিয়ারা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ডাইক ভেঙে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। ডাইক উপছে পানি আসছে ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। কুশিয়ারা ডাইক মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জামারগাঁও ও পাহাড়পুরের নিকট জিও ব্যাগ ফেলে মেরামত করছে । এখন কুশিয়ারা নদরি পানি ডাইকের ৩০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী , উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফু ও ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল জাহান চৌধুরী বন্যা কবলিত এলাকা কুশিয়ারা ডাইক পরিদর্শন করেছেন।
সরেজমিনে নবীগঞ্জ উপজেলার দীগলবাক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কুশিয়ারা ডাইক উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পানিতে তলিয়ে গেছে আহমদপুর, দুর্গাপুর, কুমার কাদা, পাহাড়পুর গ্রাম। লোকজন বালিভর্তি বস্তা ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন। পানি যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নবীগঞ্জ পৌরসভার একটি অংশসহ উপজেলার প্রায় ১৩টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্রবেশ করেছে। তবে বেশি প্লাবিত হয়েছে দীঘলবাঁক, ইনাতগঞ্জ, আউশকান্দি,পূর্ব ভাকৈর , পশ্চিম ভাকৈর, করগাঁও, কালিয়াভাঙ্গা, দেবপাড়া ও কুর্শি ইউনিয়ন। এতে লক্ষাধিক লোক বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় উপজেলায় ১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র চালু হয়েছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে লোকালয়ে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনো উপজেলার কোথাও কোথাও ডাইক উপচে লোকালয়ে পানি আসছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভারত সীমান্তবর্তী ভারতের বরাক নদ থেকে প্রবল বেগে পানি এসে ত্রিপুরা রাজ্য হয়ে পানি কুশিয়ারা নদীতে ঢুকছে। এতে উপজেলার অনেক এলাকার কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামীণ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি পেলে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বন্যা কবলিত এলাকার মাছের ঘের, ফিসারি ও পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। গরু-ছাগলসহ গৃহপালিত পশু পাখির খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অনেকের ঘর কোমর পানিতে ডুবে গেছে। বিশুদ্ধ পানিরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাশ অনুপ জানান, বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে এসে আশ্রয় নেওয়ার জন্য আহবান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত চাল মজুদ রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে জেলা প্রশাসককে চাহিদা জানানো হয়েছে। ১৪টি সরকারী বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, বৃষ্টির পাশাপাশি ভারত থেকে আসা পানির জন্য খোয়াই, কুশিয়ারা ও কালনী-কুশিয়ারাসহ হাওরে পানি বাড়ছে। নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার ৩০ সে: মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা ডাইক মেরামতের জন্য সরকারী ভাবে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। কালনী, কুশিয়ারা নদী ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি আরো জানান, গতকাল মঙ্গলবার জেলায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নদীর বাঁধ রক্ষায় চার হাজার জিও ব্যাগ ও ১২ হাজার সিনথেটিক ব্যাগ মজুদ করা হয়েছে।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক জিলুফা সুলতানা জানান, সম্ভাব্য বন্যা মোকাবেলায় ১৭১ টন চাল, এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ও ৭৮ বান্ডিল টিন মজুদ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৪২০ মেট্রিক টন চাল ৯টি উপজেলায় প্রেরণ করা হয়েছে মজুদ রাখার জন্য। জেলায় এ পর্যন্ত ৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানো হবে।