তাহসীন হত্যা মামলার প্রধান আসামী মান্নাকে গ্রেফতার করেছে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্বস্তি নেমে আসে।
গোপন সংবাদের ভিওিতে শুক্রবার (১৫ মার্চ) নবীগঞ্জে তাকে গ্রেফতার করা হয়। কলেজ ছাত্র সৈয়দ রাইসুল হক তাহসিন (১৮) হত্যার ঘটনার ৫ দিনের মাথায় ১১ জনের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে আরও ৪-৫ জনকে।
রোববার (৩ মার্চ) রাতে নিহত সৈয়দ রাইসুল হক তাহসিনের মা মুড়াউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী-শিক্ষিকা মাহফুজা সুলতানা বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামীরা হলো- নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডের হেবলু মিয়ার ছেলে মান্না মিয়া (২০), আলাউর মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া (২১), আনমনু গ্রামের রুমন মিয়ার ছেলে রিহাত মিয়া (২১), রাজাবাদ গ্রামের কুদরত আলীর ছেলে শাফি মিয়া (২০), গন্ধ্যা গ্রামের লেবু মিয়ার ছেলে রিমন মিয়া (২২), নিজ চৌকি গ্রামের হাকিম মিয়ার ছেলে জাকির মিয়া (২০), মাইজগাঁও গ্রামের আব্দুল গনির ছেলে লাদেন মিয়া (২০), দত্তগ্রামের আব্দুল হাফিজের ছেলে সাজু মিয়া (২৫), গন্ধ্যা গ্রামের মৃত শহীদ মিয়ার ছেলে সাজ্জাত মিয়া (২৪), মিল্লিক গ্রামের মন্নান মিয়ার ছেলে রাতুল মিয়া (২৩), বানিয়াচং উপজেলার কালাইনজুরা গ্রামের মৃত আরজদ উল্লাহর ছেলে মওদুদ আহমেদ (৪০)। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়- সৈয়দ রাইসুল হক তাহসিন (১৮) নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের এইচ.এস.সি ২য় বর্ষে শিক্ষার্থী। সাক্ষী নিহাল আহমেদ মাহি তাহসিনের খালাতো ভাই ও সহপাঠি।
আসামীদের কয়েকজন নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র। অন্যরা লেখাপড়া করে না। তবে আসামীদের সহপাঠি হিসাবে তারা এক সাথে চলাফেরা করে। আসামী মান্নাসহ অন্যরা তাহসিনকে তাদের সাথে চলাফেরা করার জন্য বলে। কিন্তু আসামীদের চালচলন, কথাবার্তা ও আচরণ উশৃংখল প্রকৃতির দেখে তাহসিন তাদেরকে এড়িয়ে চলে।
এজন্য আসামীরা তাহসিনের উপর ক্ষিপ্ত হয়। তাহসিন গত ২৭ ফেব্রুয়ারী সকালে বাসা থেকে বের হয়ে এইচ.এস.সি নির্বাচনী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কলেজে যায়। নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালীন আসামীদের মধ্যে কয়েকজন তাহসিনের পরীক্ষার খাতা দেখানোর জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু তাহসিন তার পরীক্ষা ভাল করার জন্য তাদের কথায় খাতা দেখায়নি। পরীক্ষার পর কলেজের সামনে মাঠে মান্না, জুয়েল, রিহাত ও রাতুল পরীক্ষার হলে খাতা না দেখানোর কারণে তাহসিনকে অপমান করে।
একপর্যায়ে তারা তাহসিনের মুখে ও শরীরে থুথু নিক্ষেপ করে। তাহসিন প্রতিবাদ করলে মান্নাসহ অন্যদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে কলেজের সিনিয়র ছাত্রদের হস্তক্ষেপে তাহসিন কলেজ ত্যাগ করে বাসায় চলে আসে। বিকেলে তাহসিন মাহিকে নিয়ে চা খাওয়ার জন্য নবীগঞ্জ শহরে রাজা কমপ্লেক্স নামক মার্কেটের পিছনে একটি চায়ের দোকানে চা খেতে যায়। চা খাওয়া অবস্থায় আসামী মান্নাসহ অন্যরা তাহসিনকে লক্ষ্য করে গালি-গালাজ করে। পরে তাহসিনকে মারপিট করার জন্য উদ্যেত হয় তারা।
এ সময় স্থানীয় লোকজন তাদেরকে সরিয়ে দেয়। পরে তাহসিন মাহিকে নিয়ে নবীগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃক আয়োজিত বই মেলা দেখার জন্য পৌরসভা প্রাঙ্গণে যায়। রাত ৯টায় বইমেলা থেকে ফেরার পথিমধ্যে তাহসিন ও মাহি ওসমানী রোডস্থ চৌদ্দ হাজারী মার্কেটের সামনের পৌছামাত্রই মান্নাসহ অন্যসকল আসামীরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র-শস্ত্র, দা, লাঠি, লোহার রড, পাইপ, চাকু ছুরিসহকারে তাহসিন ও মাহির উপর হামলা করে।
এ সময় তাহসিনকে সারা শরীরে আঘাত করে পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ সময় তাহসিনকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে মাহিকেও বেধরকভাবে মারধোর করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাহসিন ও মাহিকে উদ্ধার করে প্রথমে নবীগঞ্জ ও পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাহসিন মারা যায়।
পরে বুধবার সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ জেকে উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযার নামাজ শেষে তাহসিনের গ্রামের বাড়িতের দাফন সম্পন্ন হয়। এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী বলেন-তাহসীন হত্যার প্রধান আসামী মান্নাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অপর আসামিদের ও গ্রেফতার করা হবে।তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রধান করা হবে।আপনারা পুলিশের উপর ভরসা রাখুন।দেখুন পুলিশ কি করতে পারে।
তাহসিনের মা বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে, আমরা মামলা রুজু করে গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখছি, আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।