পবিত্র রমজান মাসের শুরুতেই শান্তিগঞ্জ উপজেলার ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খেজুরের দাম। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে রমজান মাসে চাহিদা সম্পন্ন এ পণ্যের। যে খেজুর সপ্তাহ সময় আগে বিক্রি হতো ৮০ টাকা সেই খোলা খেজুরের বর্তমান বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছে ২শ’ টাকায়। শুধু খেজুরই নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম তিন-চার দিনের তুলনায় পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে দশ, পনেরো কিংবা বিশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আবার কোনোটি বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস জনসাধারণের। ক্রেতাদের দাবি যেভাবেই হোক, পবিত্র এই রমজান মাসে অন্তত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা হয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘শুধু শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাজারগুলোতেই নয়, দাম বেড়েছে সারা দেশের বাজারে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হবে সরকারকেই।’
এদিকে, বাজারের পরিস্থিতি দেখতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধারাবাহিক কার্যক্রম শুরু করেছে শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে পহেলা রমজান মঙ্গলবার সকালে ও দুপুরে উপজেলার শান্তিগঞ্জ ও পাগলা বাজারে পৃথক অভিযান পরিচালনা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা। এসময় শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজি মুক্তাদির হোসেনসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে কোনো দোকানিকে জরিমানা করা না হলেও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও দ্রব্য মূল্যের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার বিকালে শান্তিগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জ ও পাগলা বাজারের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম বেশ কয়েকটিতে বাড়লেও কমেছে পেঁয়াজ ও সয়াবিন তেলের দাম। দেশি পেঁয়াজ দু’তিন দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১শ’ থেকে ১শ’১০ টাকায়। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৯০-৯৫ টাকা। সয়াবিন তেল লিটার প্রতি কমেছে ৫ টাকা। আগুন লেগেছে কাঁচাবাজারে। দু’দিন আগের তুলনায় লেবু প্রতিটিতে দাম বেড়েছে গড়ে ৩-৫ টাকা। ফুলকপির দামও বেড়েছে। কাঁচামরিচ আগে বিক্রি হতো ৬০ টাকা। রমজান মাস শুরু হতে না হতেই এক সপ্তাহের তুলনায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়। টমেটোতে কেজি প্রতি বেড়েছে ২০ টাকা। ৩০ টাকার টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। আলুর দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০টাকা। বাঁধাকপি ও বেগুনের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। শাক-সবজির বাজারের অবস্থা আরও গরম। প্রতিটি শাক-সবজিতে দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। শসা ও খিরাতে কেজি প্রতি প্রায় ২৫ টাকা দাম বেড়েছে। দাম বেড়েছে ছোলারও। তিন-চারদিন আগের ৯২ টাকার ছোলা এখন বিক্রি হচ্ছে ১শ’ ১০ টাকায়। মসুর ডালে দাম বেড়েছে ২০ টাকা। প্যাকেটজাত লিকুইড দুধে লিটার প্রতি দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা, কলায় প্রতি বিশটিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এলাচি ও জিরার দ্বিগুণ দাম বেড়েছে। বাড়তি দাম চিনিরও। বাজারের এমন ঊর্ধ্বগতিতে স্বস্তিতে নেই নিম্ন আয়ের মানুষেরা। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেন ক্রেতারা।
আশরাফ আহমদ ও মুহিবুর রহমান নামের দুই ক্রেতা বলেন, লেবু কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। মাঝারি সাইজের একহালি লেবুর দাম ৮০ টাকা। ৫০ টাকার গরম মসলা দোকানদাররা দিতে চান না। চিনি, ছোলার দাম তো আরও বেশি। খেজুর কিনতে সাহস করতে পারছি না। একপোয়া খেজুর দিতে চান না দোকানদাররা। সবজির চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম বেড়েছে এসব জিনিসেরও। আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরা কিভাবে চলবে? সরকারের উচিত প্রশাসনের মাধ্যমে বাজারে বাজারে অভিযান চালিয়ে এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা বলেন, আজ আমরা উপজেলার শান্তিগঞ্জ ও পাগলা বাজারে অভিযান চালিয়েছি। কাউকে জরিমানা না করলেও সবাইকে সতর্ক করেছি। বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দোকানদারকে নির্দেশ দিয়েছি। কেউ যদি চলমান দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করেন সাথে সাথে যেন আমাকে জানানো হয়। আমরা ব্যবস্থা নেব। পুরো রমজানেই আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সুনামগঞ্জ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আল আমিন বলেন, আমি বর্তমানে ছাতকে অভিযানে আছি। এর আগে সুনামগঞ্জ সদরে অভিযান করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। তবে, পণ্যের দামে খুব একটা তারতম্য পাচ্ছি না। দোকানদাররা বেশি দামে কিনছেন তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবু আমরা অভিযান অব্যাহত রাখব।