Sylhet ০৮:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাহিরপুরে জাদুকাটা নদীতে নিহত শ্রমিকের ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তনদী জাদুকাটায় পরিবেশধ্বংসী সেইভ মেশিনে বালি পাথর চুরির ঘটনা ধামাচাঁপা দিতে গিয়ে নদীতে ডুবে নিহত এক শ্রমিকের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই গোপনে দাফনের অনুমতি দিলেন ফ্যাসিষ্ট সরকারের সুবিধাভোগী বিতর্কিত ওসি দেলোয়ার হোসেন।
দেলোয়ার হোসেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসাবে কর্মরত আছেন।
নিহত শ্রমিকের নাম হাবিবুর রহমান। তিনি বিশ্বম্ভরপুরের বসন্তপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।
বৃহস্পতিবার সরজমিনে থাকা একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার দিবাগত রাতে প্রতি দিবারাতের ন্যায় নির্মাণষাধীন জাদুকাটা সেতুর দক্ষিণে অর্ধ শতাধিক পরিবেশধ্বংসী ইঞ্জিন চালিত (যান্ত্রিক) সেইভ মেশিনে খনিজ বালি পাথর চুরিতে নামেন কয়েক শতাধিক শ্রমিক।
বৃহস্পতিবার ভোররাতে অন্য সবার সাথে থাকা সেইভ মেশিনে বালি পাথর উক্তোলনকারি শ্রমিক বিশ্বম্ভরপুরের বসন্তপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান জাদুকাটার পানিতে ডুবে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের কয়েক ঘন্টা পর জাদুকাটায় ভেসে উঠে হাবিবুর রহমানের মরদেহ।
এদিকে পরিবেশ ধ্বংসী সেইভ মেশিনে জাদুকাটায় থাকা রাষ্ট্রীয় সম্পদ কয়েককোটি টাকার খনিজ বালি পাথর চুরির ঘটনা ধামাচাপা দিতে গিয়ে থানার ওসি ও বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রর আইসি নিহত শ্রমিককে মনগড়াভাবে শ্বাসকষ্টের রোগী হিসাবে মৃত্যু হয়েছে বলে গোপনে লাশ দাফনে মৌখিক অনুমতি প্রদান করেন।
এরপর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী, লাশ মর্গে না পাঠিয়ে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটর অনুমতি ছাড়াই ওসি নিহতের মরদেহ বাড়ি নিয়ে গিয়ে দাফনের অনুমতি প্রদান করলে নিহতের পরিবার লাশ বাড়ি নিয়ে গিয়ে গোপনে দাফন কাজ সম্পন্ন করেন।
বৃহস্পতিবার তাহিরপুরের জাদুকাটা নদীর তীরবর্তী গড়কাটি গ্রাম সহ একাধিক গ্রামের মানুষজন সেইভ মেশিনে অবৈধ ভাবে খনিজ বালি পাথর উক্তোলন করতে গিয়ে নদীতে নিখোঁজ হয়ে ডুবে গিয়ে ওই শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলে এমন তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধায় তাহিরপুর থানার বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রর ইনচার্জ এসআই আবুল কালাম চৌধুরী বললেন, ওই শ্রমিক শ্বাসকষ্টের রোগী ছিল তাই ওসি স্যার লাশ বাড়ি নিয়ে গিয়ে দাফনের জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছেন।
তাহিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের বললেন,ওই শ্রমিক অসুস্থ্য ছিল তাই নিহত হবার পর কেউ অভিযোগ না করায় আমি মৌখিকভাবে লাশ দাফনের অনুমতি দিয়েছি।
অভিযোগ উঠেছে সীমান্তনদী জাদুকাটার খনিজ বালি পাথর খেকো সিন্ডিক্যান্ডের সাথে গোপন সমঝোতায় তাহিরপুর থানায় যোগদানের পর থেকেই সেইভ মেশিনে , নদীর পাড় কেটে খনিজ বালি পাথর চুরিকান্ডে প্রতিঘনফুট বালি পাথরের বিপরীতে ২টা হারে একাধিক সোর্সের মাধ্যমে ঘুস আদায় করাতেন ওসি দেলোয়ার। দৈনিক ভাগ পেতেন বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রর দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারগণ। এ কারনেই নিহত শ্রমিকের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী না করা, ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে নিহত শ্রমিকের লাশ প্রেরণ না করেই ওসি নিজ ক্ষমতাবলে নিহত শ্রমিকের লাশ দাফনে মৌখিকভাবে অনুমতি প্রদান করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল সুত্র জানান, যে কোন ধরণের অপমৃত্যু বা দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যুই হোকে সেক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিনা ময়নাতদন্তে নিহতের লাশ দাফন করতে হলে জেলা প্রশাসক (জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটে)’র বরাবর নিহতের পরিবারের উপযুক্ত উওরাধিকারী কারো প্রতি কোন রকম অভিযোগ না থাকলেও লিখিত আবেদন করবেন।
এরপর জেলা প্রশাসক (জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট) লিখিত আবেদনপত্র তদন্ত/যাচাই করে অনুমতি দিলেই কেবল অপমৃত্যুর বা দূর্ঘটনাজনিত কারনে মৃত্যুবরণকারীর লাশ দাফন করা যায়। ওই ধরণের মৃত্যুবরণকারীর লাশ দাফনের জন্য মৌখিকভাবে কিংবা লিখিতভাবে ওসি’র অনুমতি/সম্মতি প্রদানের কোন রকম এখতিয়ার নেই।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sylhet Vision

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশ পুলিশের লোগো থেকে বাদ পড়েছে নৌকা

তাহিরপুরে জাদুকাটা নদীতে নিহত শ্রমিকের ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন

প্রকাশের সময় : ০২:৪১:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তনদী জাদুকাটায় পরিবেশধ্বংসী সেইভ মেশিনে বালি পাথর চুরির ঘটনা ধামাচাঁপা দিতে গিয়ে নদীতে ডুবে নিহত এক শ্রমিকের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই গোপনে দাফনের অনুমতি দিলেন ফ্যাসিষ্ট সরকারের সুবিধাভোগী বিতর্কিত ওসি দেলোয়ার হোসেন।
দেলোয়ার হোসেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসাবে কর্মরত আছেন।
নিহত শ্রমিকের নাম হাবিবুর রহমান। তিনি বিশ্বম্ভরপুরের বসন্তপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।
বৃহস্পতিবার সরজমিনে থাকা একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার দিবাগত রাতে প্রতি দিবারাতের ন্যায় নির্মাণষাধীন জাদুকাটা সেতুর দক্ষিণে অর্ধ শতাধিক পরিবেশধ্বংসী ইঞ্জিন চালিত (যান্ত্রিক) সেইভ মেশিনে খনিজ বালি পাথর চুরিতে নামেন কয়েক শতাধিক শ্রমিক।
বৃহস্পতিবার ভোররাতে অন্য সবার সাথে থাকা সেইভ মেশিনে বালি পাথর উক্তোলনকারি শ্রমিক বিশ্বম্ভরপুরের বসন্তপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান জাদুকাটার পানিতে ডুবে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের কয়েক ঘন্টা পর জাদুকাটায় ভেসে উঠে হাবিবুর রহমানের মরদেহ।
এদিকে পরিবেশ ধ্বংসী সেইভ মেশিনে জাদুকাটায় থাকা রাষ্ট্রীয় সম্পদ কয়েককোটি টাকার খনিজ বালি পাথর চুরির ঘটনা ধামাচাপা দিতে গিয়ে থানার ওসি ও বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রর আইসি নিহত শ্রমিককে মনগড়াভাবে শ্বাসকষ্টের রোগী হিসাবে মৃত্যু হয়েছে বলে গোপনে লাশ দাফনে মৌখিক অনুমতি প্রদান করেন।
এরপর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী, লাশ মর্গে না পাঠিয়ে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটর অনুমতি ছাড়াই ওসি নিহতের মরদেহ বাড়ি নিয়ে গিয়ে দাফনের অনুমতি প্রদান করলে নিহতের পরিবার লাশ বাড়ি নিয়ে গিয়ে গোপনে দাফন কাজ সম্পন্ন করেন।
বৃহস্পতিবার তাহিরপুরের জাদুকাটা নদীর তীরবর্তী গড়কাটি গ্রাম সহ একাধিক গ্রামের মানুষজন সেইভ মেশিনে অবৈধ ভাবে খনিজ বালি পাথর উক্তোলন করতে গিয়ে নদীতে নিখোঁজ হয়ে ডুবে গিয়ে ওই শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলে এমন তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধায় তাহিরপুর থানার বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রর ইনচার্জ এসআই আবুল কালাম চৌধুরী বললেন, ওই শ্রমিক শ্বাসকষ্টের রোগী ছিল তাই ওসি স্যার লাশ বাড়ি নিয়ে গিয়ে দাফনের জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছেন।
তাহিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের বললেন,ওই শ্রমিক অসুস্থ্য ছিল তাই নিহত হবার পর কেউ অভিযোগ না করায় আমি মৌখিকভাবে লাশ দাফনের অনুমতি দিয়েছি।
অভিযোগ উঠেছে সীমান্তনদী জাদুকাটার খনিজ বালি পাথর খেকো সিন্ডিক্যান্ডের সাথে গোপন সমঝোতায় তাহিরপুর থানায় যোগদানের পর থেকেই সেইভ মেশিনে , নদীর পাড় কেটে খনিজ বালি পাথর চুরিকান্ডে প্রতিঘনফুট বালি পাথরের বিপরীতে ২টা হারে একাধিক সোর্সের মাধ্যমে ঘুস আদায় করাতেন ওসি দেলোয়ার। দৈনিক ভাগ পেতেন বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রর দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারগণ। এ কারনেই নিহত শ্রমিকের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী না করা, ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে নিহত শ্রমিকের লাশ প্রেরণ না করেই ওসি নিজ ক্ষমতাবলে নিহত শ্রমিকের লাশ দাফনে মৌখিকভাবে অনুমতি প্রদান করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল সুত্র জানান, যে কোন ধরণের অপমৃত্যু বা দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যুই হোকে সেক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিনা ময়নাতদন্তে নিহতের লাশ দাফন করতে হলে জেলা প্রশাসক (জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটে)’র বরাবর নিহতের পরিবারের উপযুক্ত উওরাধিকারী কারো প্রতি কোন রকম অভিযোগ না থাকলেও লিখিত আবেদন করবেন।
এরপর জেলা প্রশাসক (জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট) লিখিত আবেদনপত্র তদন্ত/যাচাই করে অনুমতি দিলেই কেবল অপমৃত্যুর বা দূর্ঘটনাজনিত কারনে মৃত্যুবরণকারীর লাশ দাফন করা যায়। ওই ধরণের মৃত্যুবরণকারীর লাশ দাফনের জন্য মৌখিকভাবে কিংবা লিখিতভাবে ওসি’র অনুমতি/সম্মতি প্রদানের কোন রকম এখতিয়ার নেই।