মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত দিলখুশা চা-বাগান আকষ্মিক বন্ধ ঘোষণা করে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক বাগান ছেড়ে চলে গেছেন। এ দিকে বাগান বন্ধের ঘোষণার খবর পেয়ে শ্রমিকেরা শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।
বাগানের শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, দিলখুশা চা-বাগান ‘হামদর্দ টি কোম্পানি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ইজারা নিয়ে পরিচালনা করছে। বাগানে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ৬০০ নারী-পুরুষ শ্রমিক রয়েছেন। ১৩ এপ্রিল রাতে বিপুল বুনারজি নামের বাগানের এক শ্রমিক সহকারী ব্যবস্থাপক শিপলু তালুকদারের বাংলোতে গিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলার চেষ্টা চালান। এ সময় তাঁকে আটক করে জুড়ী থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পরে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিটমাটের জন্য শ্রমিকেরা তাঁকে ছাড়িয়ে আনেন। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে বিপুল শ্রমিকদের জানান, বাগানের প্রধান করণিক বলাই বসাকের সঙ্গে সহকারী ব্যবস্থাপক শিপলু তালুকদারের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর জের ধরে বলাই তাঁকে ব্যবহার করেন। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) শ্রমিকেরা ব্যবস্থাপক সাঈদুজ্জামানের কার্যালয়ে গিয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে দুই-এক দিনের মধ্যে বিষয়টি মীমাংসার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেন। এ সময় ব্যবস্থাপক ২৬ এপ্রিল বৈঠক হবে বলে জানান। একপর্যায়ে সময় পেছানোয় শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরে তাঁরা ফিরে যান। শুক্রবার বাগানে সাপ্তাহিক ছুটি। সকালের দিকে শ্রমিকেরা বাগান বন্ধ ঘোষণার খবর পান। পরে ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে গিয়ে দেয়ালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ দেখিয়ে বাগান বন্ধের নোটিশ সাঁটানো দেখেন। ব্যবস্থাপক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বাংলোয় পাননি। তাঁরা বৃহস্পতিবার গভীর রাতে চলে গেছেন জানতে পারেন। বলাই বসাকও বাগান ছেড়ে চলে যান। এ খবরে ২০০-৩০০ শ্রমিক ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে তাঁদের সঙ্গে অন্য শ্রমিকেরাও যোগ দেন।
খবর পেয়ে দুপুরের দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং, জুড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবীর ও গোয়ালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল কাইয়ুম বাগানে যান। উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধানে বাগানের ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ব্যবস্থাপক মো. সাঈদুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখা দেয়। তাই, কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে বাগান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে নোটিশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে বাগান খোলার সিদ্ধান্ত হবে।