Sylhet ০১:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছয় বছরেও শেষ হয়নি শাহ্ আরেফিন ও অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর কাজ

৬৪ কোটির কাজ করে, ৬৫ কোটি টাকা বিল নিয়েও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কচ্ছপের গতিতে করছে তাহিরপুর সীমান্তের শাহ্ আরেফিন ও অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর কাজ। চার দফায় কাজের সময় বাড়িয়েও এই সেতুর কাজ ঠিকাদারকে দিয়ে করাতে পারছে না স্থানীয় এলজিইডি। একারণে হতাশ স্থানীয় বাসিন্দারা।
দরপত্র কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে রাজধানীর তমা কন্সট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় শাহ আরেফিন ও অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজের। ৩০ মাসে এই কাজ শেষ করার নির্দেশনা ছিল কার্যাদেশে। কিন্তু ছয় বছরেও কাজটি শেষ করতে পারে নি এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মেয়াদ শেষ হবার পর প্রথম দফায় নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট আবেদন করে সময় বাড়ায় ১৮২ দিন। দ্বিতীয় দফায় সেতু প্রকল্পের পরিচালক (পিডি)’র নিকট আবেদন করে সময় বাড়ানো হয় ২০২২ সালের ৩১ মে পর্যন্ত। তৃতীয় দফায় একইভাবে বাড়ানো হয় ১০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত। চতুর্থ দফায় আগামী জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ালেও কাজ ওই সময়েও শেষ হবার কোন লক্ষণ নেই।
সোমবার দুপুরে স্থানীয় একজন গণমাধ্যমকর্মী সেতু এলাকায় গিয়ে দেখেছেন দুইজন নির্মাণ কর্মী ওখানে কাজ করছে।
সেতুর পাশে দাঁড়ানো অদ্বৈত জন্মধাম কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অদ্বৈত রায় বললেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তারা কখনো কাজ বন্ধ করে রাখে, কখনোবা দু’ চার জন শ্রমিক লাগিয়ে দেখায় কাজ চলছে। আমরা এই বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সেতু’র পাশে দাঁড়ানো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রাপ্ত সাব কন্ট্রাক্টটার আনোয়ার হোসেন বললেন, আমরা গার্ডার নির্মাণ করছি। ২০ টি গার্ডার ও তিনটি স্পেন নির্মাণের কাজ এখনো বাকী আছে। আমাদের ১১ জন শ্রমিক এখানে শিফটিংয়ে কাজ করছে। সেতুর চার ভাগের একভাগ কাজ বাকী আছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন দাবি করলেন, সেতু’র ৭৪ ভাগ কাজ শেষ। কাজ দ্রুতই চলছে। পানি আসলেও কাজ বন্ধ থাকবে না।
স্থানীয় বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বললেন, যাদুকাটা নদী সীমান্তের বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমিকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। সেতু নির্মিত হলে মেঘালয় পাহাড় ও বারেক টিলার অপরূপ সৌন্দর্য্য ছাড়াও সীমান্ত এলাকার শাহ্ আরেফিন (রহ.) আস্তানা, শিমুল বাগান, ঐতিহাসিক লাউড় রাজ্যের রাজধানী হলহলিয়ার ধ্বংসাবশেষ, শহিদ সিরাজলেক ছাড়াও সীমান্তের তিন শুল্কবন্দর বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলীকে সড়কপথে যুক্ত করবে। সড়কপথে টাঙ্গুয়ার হাওরের কাছাকাছিও পৌঁছা যাবে। পর্যটকদেও সড়ক ভোগান্তি দূর হবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বললেন, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমন টালবাহনা করছে। উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ স্বাধীনতা দিবসের পর আমরা সরেজমিনে সেতু পরিদর্শনে যাব, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অনাগ্রহী হলে, তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নিয়ম অনুয়ায়ী দ্রুত দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগের দাবি জানাব আমরা। তার দাবি সেতুর কাজ ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয় আরেক জনপ্রতিনিধি বললেন, আমরা কথা বললে কর্তৃপক্ষ বিরক্ত হয়। এই সেতুতে কাজের চেয়ে বিল বেশি নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৮ টাকা ব্যয়ে এই সেতুর নির্মাণ চুক্তি হয় রাজধানী ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশনের সঙ্গে। চার দফা সময় বাড়িয়ে এরা কাজ করেছে দাবি করেছে ৭৪ শতাংশ। অথচ তারা বিল নিয়েছে ৭৮ ভাগেরও বেশি। সোমবার পর্যন্ত তারা ৬৪ কোটি ৯৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বিল উত্তোলন করেছে। কাজের চেয়ে এক কোটি টাকারও বেশি বিল উত্তোলন করলেও কাজের গতিতে হতাশ সকলে।
এলজিইডি’র তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী আলিফুল্লাহ খান বললেন, এতো বড় একটি কাজ যে গতিতে হবার কথা সেভাবে হচ্ছে না। তিনি দাবি করলেন, পিলারের কাজ শেষ, স্পেন ১৫ টির মধ্যে ১২ টি হয়েছে, ৭৫ টি গার্ডারের মধ্যে ৬০ টির কাজ শেষ। এই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে দাবি করলেন তিনি।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বললেন, আমরা দ্রুত কাজ আদায়ের চেষ্টা করছি। মাঝখানে কাজ বন্ধ ছিল এবং ২০২২’এর বন্যার সময় দুটি গার্ডার পড়ে যাওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বার বারই তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. রনজিত সরকার বললেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর কাজ শেষ করে দেবার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করবে জানিয়েছেন।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জগন্নাথপুর যুব জমিয়তের নবনির্বাচিত কমিটির পরিচিতি শপথ অনুষ্ঠিত

ছয় বছরেও শেষ হয়নি শাহ্ আরেফিন ও অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর কাজ

প্রকাশের সময় : ০১:৫৬:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

৬৪ কোটির কাজ করে, ৬৫ কোটি টাকা বিল নিয়েও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কচ্ছপের গতিতে করছে তাহিরপুর সীমান্তের শাহ্ আরেফিন ও অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর কাজ। চার দফায় কাজের সময় বাড়িয়েও এই সেতুর কাজ ঠিকাদারকে দিয়ে করাতে পারছে না স্থানীয় এলজিইডি। একারণে হতাশ স্থানীয় বাসিন্দারা।
দরপত্র কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে রাজধানীর তমা কন্সট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় শাহ আরেফিন ও অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজের। ৩০ মাসে এই কাজ শেষ করার নির্দেশনা ছিল কার্যাদেশে। কিন্তু ছয় বছরেও কাজটি শেষ করতে পারে নি এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মেয়াদ শেষ হবার পর প্রথম দফায় নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট আবেদন করে সময় বাড়ায় ১৮২ দিন। দ্বিতীয় দফায় সেতু প্রকল্পের পরিচালক (পিডি)’র নিকট আবেদন করে সময় বাড়ানো হয় ২০২২ সালের ৩১ মে পর্যন্ত। তৃতীয় দফায় একইভাবে বাড়ানো হয় ১০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত। চতুর্থ দফায় আগামী জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ালেও কাজ ওই সময়েও শেষ হবার কোন লক্ষণ নেই।
সোমবার দুপুরে স্থানীয় একজন গণমাধ্যমকর্মী সেতু এলাকায় গিয়ে দেখেছেন দুইজন নির্মাণ কর্মী ওখানে কাজ করছে।
সেতুর পাশে দাঁড়ানো অদ্বৈত জন্মধাম কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অদ্বৈত রায় বললেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তারা কখনো কাজ বন্ধ করে রাখে, কখনোবা দু’ চার জন শ্রমিক লাগিয়ে দেখায় কাজ চলছে। আমরা এই বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সেতু’র পাশে দাঁড়ানো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রাপ্ত সাব কন্ট্রাক্টটার আনোয়ার হোসেন বললেন, আমরা গার্ডার নির্মাণ করছি। ২০ টি গার্ডার ও তিনটি স্পেন নির্মাণের কাজ এখনো বাকী আছে। আমাদের ১১ জন শ্রমিক এখানে শিফটিংয়ে কাজ করছে। সেতুর চার ভাগের একভাগ কাজ বাকী আছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন দাবি করলেন, সেতু’র ৭৪ ভাগ কাজ শেষ। কাজ দ্রুতই চলছে। পানি আসলেও কাজ বন্ধ থাকবে না।
স্থানীয় বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বললেন, যাদুকাটা নদী সীমান্তের বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমিকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। সেতু নির্মিত হলে মেঘালয় পাহাড় ও বারেক টিলার অপরূপ সৌন্দর্য্য ছাড়াও সীমান্ত এলাকার শাহ্ আরেফিন (রহ.) আস্তানা, শিমুল বাগান, ঐতিহাসিক লাউড় রাজ্যের রাজধানী হলহলিয়ার ধ্বংসাবশেষ, শহিদ সিরাজলেক ছাড়াও সীমান্তের তিন শুল্কবন্দর বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলীকে সড়কপথে যুক্ত করবে। সড়কপথে টাঙ্গুয়ার হাওরের কাছাকাছিও পৌঁছা যাবে। পর্যটকদেও সড়ক ভোগান্তি দূর হবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বললেন, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমন টালবাহনা করছে। উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ স্বাধীনতা দিবসের পর আমরা সরেজমিনে সেতু পরিদর্শনে যাব, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অনাগ্রহী হলে, তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নিয়ম অনুয়ায়ী দ্রুত দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগের দাবি জানাব আমরা। তার দাবি সেতুর কাজ ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয় আরেক জনপ্রতিনিধি বললেন, আমরা কথা বললে কর্তৃপক্ষ বিরক্ত হয়। এই সেতুতে কাজের চেয়ে বিল বেশি নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৮ টাকা ব্যয়ে এই সেতুর নির্মাণ চুক্তি হয় রাজধানী ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশনের সঙ্গে। চার দফা সময় বাড়িয়ে এরা কাজ করেছে দাবি করেছে ৭৪ শতাংশ। অথচ তারা বিল নিয়েছে ৭৮ ভাগেরও বেশি। সোমবার পর্যন্ত তারা ৬৪ কোটি ৯৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বিল উত্তোলন করেছে। কাজের চেয়ে এক কোটি টাকারও বেশি বিল উত্তোলন করলেও কাজের গতিতে হতাশ সকলে।
এলজিইডি’র তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী আলিফুল্লাহ খান বললেন, এতো বড় একটি কাজ যে গতিতে হবার কথা সেভাবে হচ্ছে না। তিনি দাবি করলেন, পিলারের কাজ শেষ, স্পেন ১৫ টির মধ্যে ১২ টি হয়েছে, ৭৫ টি গার্ডারের মধ্যে ৬০ টির কাজ শেষ। এই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে দাবি করলেন তিনি।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বললেন, আমরা দ্রুত কাজ আদায়ের চেষ্টা করছি। মাঝখানে কাজ বন্ধ ছিল এবং ২০২২’এর বন্যার সময় দুটি গার্ডার পড়ে যাওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বার বারই তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. রনজিত সরকার বললেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর কাজ শেষ করে দেবার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করবে জানিয়েছেন।