“চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন, সরকার করে যাচ্ছে এবং করবে। চিকিৎসা শেষে তাদের অন্তত আয় রুজির ব্যবস্থা যাতে হয় সেটাও আমরা করব,” বলেন
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগে বিএনপি-জামায়াত সারা দেশে সহিংসতা আর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে অভিযোগ করে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আন্দোলনের মধ্যে আহতদের খোঁজখবর নিতে শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করে তিনি বলেছেন, “যেটা আমি কখনো চাইনি, কখনোই চাইনি এভাবে মানুষ আপনজন হারাবে, এইভাবে মৃত্যুর মিছিল হবে, এটা কখনো চাইনি। আজকে বাংলাদেশে (তারা) সেটাই করল।
“দেশবাসীর কাছে এইটুকু বলব, যে বা যারা অপরাধী, তাদের খুঁজে বের করে দিতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বর্বরতার বিরুদ্ধে, এ ধরনের জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে। এদেশের মানুষের জীবন নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে।”
কোটা আন্দোলনের মধ্যে আহতদের খোঁজ নিতে বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে যান সরকারপ্রধান। চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন।
আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অত্যন্ত বেদনাদায়ক অবস্থা, আজকে এতগুলো মানুষ আহত-নিহত। এতগুলো মানুষ, আমি তো আমার সব হারিয়েছি, বাবা-মা ভাই সব হারিয়েছি, আমি তো জানি মানুষের হারানোর বেদনা কী? আমার চেয়ে বোধ হয় আর কেউ বেশি জানে না।”
হাই কোর্টের রায়ে পর জুলাইয়ের শুরু থেকে কোটা বাতিলের আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে আরও অনেক স্থানে। পরে আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন কর্মসূচি ঘিরে এক পর্যায়ে তা সহিংসতায় গড়ায়।
আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাতের মধ্যে এক সপ্তাহে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে দেশজুড়ে কারফিউ শুরু হয়। এখন দিনের বেশিরভাগ সময় কারিফিউ শিথিল থাকলেও বিকাল থেকে সান্ধ্য আইন চলছে।
কোটা আন্দোলনের সুযোগে বিএনপি-জামায়াত ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, “এই জামায়াত-শিবির, বিএনপি, ছাত্র দল তারাই এই সুযোগটা নিয়ে, কোটা আন্দোলনের সুযোগটা নিয়ে সারা দেশব্যাপী এই ধ্বংসাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ববোধ নেই, দেশের প্রতি কোনো মায়া-মমতা নেই, দেশের প্রতি কোনো দায়িত্ববোধ নেই। আর মানুষকে এরা মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না।
“আমার প্রশ্ন, এতে অর্জনটা কী হল। কতগুলো মানুষের জীবন চলে গেল। কতগুলো পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হল।”
‘চিকিৎসা শেষে রুজির ব্যবস্থাও করব’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেমে আহতদের চিকিৎসার প্রয়োজনে সরকার ‘সব করবে’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন, সরকার করে যাচ্ছে এবং করবে। চিকিৎসা শেষে তাদের অন্তত আয় রুজির ব্যবস্থা যাতে হয় সেটাও আমরা করব।
“আমি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি। এখানে দলমত নির্বিশেষে সকলের জন্য আমি কাজ করি। আমি যা করি সব মানুষের জন্য করি। কে আমাকে সমর্থন করে, কে করে না, আমি সেটা চিন্তা করি না। কারণ আমি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে তাদের সেবা করতে। সেভাবেই আমি সেবা করি।
“আমি চাচ্ছিলাম দেশে শান্তি থাকবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে, দেশের মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে। আমি সব দিকে ব্যবস্থা করেছি। কত বার আমাকে মারার চেষ্টা করেছে। তারপরও আমি সব কিছু ভুলে…দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ যেন ভালো থাকে। কিন্তু সেই খানে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং তারপর মানুষগুলোর ওপর হামলা করা। মানুষের সেবা করার প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা। এর চেয়ে কষ্টের আর কিচ্ছু হয় না।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই যে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। আর হাসপাতালে আক্রমণ, কোভিড হাসপাতাল ছিল সেটা পুড়িয়ে দিয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, চিকিৎসা যেখানে মানুষের সেবা সেখানে আঘাত হানা, এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর কিছু হয় না।
“আমরা তো সব দাবি মেনেই নিয়েছি। তারপর আবার কেন, সেটাই আমার প্রশ্ন। এটা কি জঙ্গিবাদকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা এসময় উপস্থিত ছিলেন।