Sylhet ০৩:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চক্র দমনে কঠোর হতে হবে

সম্পাদকীয় কালেরকন্ঠ

কয়েক বছর আগে মিয়ানমার থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংকট সেই শুরু থেকেই। দিনে দিনে সেই সংকট আরো জটিল হয়ে উঠেছে। অতীতে আমরা দেখেছি, রোহিঙ্গারা তাদের ক্যাম্প ছেড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে মিশে যাওয়া এবং পাসপোর্ট সংগ্রহের অপচেষ্টা চালানোর খবর অতীতে এসেছে গণমাধ্যমে।

মিয়ানমারের সংঘাতময় ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে টেকনাফের পাহাড়কেন্দ্রিক অপহরণের ঘটনা বেড়েছে। টেকনাফের পাহাড়ে থাকা রোহিঙ্গা সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অপহরণে জড়িত। গত এক বছরে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় অপহরণের ঘটনা ব্যাপক বেড়েছে। ১১৭ জনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে।
এক সপ্তাহে ১৭ জন স্থানীয় নিরীহ ব্যক্তি অপহৃত হওয়ার পর মুক্তিপণের বিনিময়ে ফিরে এসেছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কিছু লোক ও স্থানীয় দুর্বৃত্তরা এসব অপহরণে জড়িত। অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ ও র‌্যাব তৎপর থাকলেও এখনো নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। 

অভিযোগ রয়েছে, টেকনাফের পাহাড়ে থাকা রোহিঙ্গা সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সঙ্গে অপহরণে স্থানীয় লোকজন জড়িয়ে পড়েছে।

সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে গ্রামের লোকজন। পাহাড়ের নিচে জমিতে ক্ষেতখামার করে তারা জীবিকা চালিয়ে আসছে। বন্য পশুপাখি থেকে ফসল রক্ষায় রাতে ক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে তারা অপহৃত হচ্ছে। 

এমনিতেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক মানুষের ভার বহন করতে গিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। কক্সবাজার অঞ্চলের স্থানীয় মানুষের জীবন রীতিমতো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য ক্রমেই এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন অপরাধীচক্র রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে নানা ধরনের অপরাধ নেটওয়ার্ক তৈরিতে তৎপর রয়েছে, এমন অভিযোগও শোনা গেছে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ক্রমে অপরাধের আখড়া হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু গ্রুপ রয়েছে। রয়েছে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান সিন্ডিকেট। কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ঘিরে চোরাচালান ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ক্রমেই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের যে অনুপ্রবেশ এবং দীর্ঘ সময় অবস্থানের ফলে যে প্রভাব পড়ছে বা পড়বে, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিরাপত্তাঝুঁকি। স্থানীয়ভাবে তো বটেই, জাতীয়ভাবেও ঝুঁকি রয়েছে। তাই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেকোনো মূল্যে রোহিঙ্গাদের অপহরণচক্র দমনে ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনগণের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারকে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে-তারেক জিয়া

চক্র দমনে কঠোর হতে হবে

প্রকাশের সময় : ০২:৪১:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪
সম্পাদকীয় কালেরকন্ঠ

কয়েক বছর আগে মিয়ানমার থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংকট সেই শুরু থেকেই। দিনে দিনে সেই সংকট আরো জটিল হয়ে উঠেছে। অতীতে আমরা দেখেছি, রোহিঙ্গারা তাদের ক্যাম্প ছেড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে মিশে যাওয়া এবং পাসপোর্ট সংগ্রহের অপচেষ্টা চালানোর খবর অতীতে এসেছে গণমাধ্যমে।

মিয়ানমারের সংঘাতময় ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে টেকনাফের পাহাড়কেন্দ্রিক অপহরণের ঘটনা বেড়েছে। টেকনাফের পাহাড়ে থাকা রোহিঙ্গা সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অপহরণে জড়িত। গত এক বছরে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় অপহরণের ঘটনা ব্যাপক বেড়েছে। ১১৭ জনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে।
এক সপ্তাহে ১৭ জন স্থানীয় নিরীহ ব্যক্তি অপহৃত হওয়ার পর মুক্তিপণের বিনিময়ে ফিরে এসেছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কিছু লোক ও স্থানীয় দুর্বৃত্তরা এসব অপহরণে জড়িত। অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ ও র‌্যাব তৎপর থাকলেও এখনো নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। 

অভিযোগ রয়েছে, টেকনাফের পাহাড়ে থাকা রোহিঙ্গা সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সঙ্গে অপহরণে স্থানীয় লোকজন জড়িয়ে পড়েছে।

সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে গ্রামের লোকজন। পাহাড়ের নিচে জমিতে ক্ষেতখামার করে তারা জীবিকা চালিয়ে আসছে। বন্য পশুপাখি থেকে ফসল রক্ষায় রাতে ক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে তারা অপহৃত হচ্ছে। 

এমনিতেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক মানুষের ভার বহন করতে গিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। কক্সবাজার অঞ্চলের স্থানীয় মানুষের জীবন রীতিমতো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য ক্রমেই এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন অপরাধীচক্র রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে নানা ধরনের অপরাধ নেটওয়ার্ক তৈরিতে তৎপর রয়েছে, এমন অভিযোগও শোনা গেছে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ক্রমে অপরাধের আখড়া হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু গ্রুপ রয়েছে। রয়েছে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান সিন্ডিকেট। কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ঘিরে চোরাচালান ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ক্রমেই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের যে অনুপ্রবেশ এবং দীর্ঘ সময় অবস্থানের ফলে যে প্রভাব পড়ছে বা পড়বে, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিরাপত্তাঝুঁকি। স্থানীয়ভাবে তো বটেই, জাতীয়ভাবেও ঝুঁকি রয়েছে। তাই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেকোনো মূল্যে রোহিঙ্গাদের অপহরণচক্র দমনে ব্যবস্থা নিতে হবে।