গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেন এ চার্জশিট আমলে নেন। একই সঙ্গে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ-৪ নম্বর আদালতে বদলির আদেশ দেন। আগামী ২ মে মামলার পরবর্তী সময় দিন ধার্য করেন আদালত।
শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমার ওপর অনেক বালা-মুসিবত, আমার সহকর্মীদের ওপর বালা-মুসিবত এবং দেশের ওপর বালা-মুসিবত। আইনের শাসন বলে যে জিনিস সেটা আমরা পাচ্ছি না কোথাও। এই বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা যেন দোয়া করি।
তিনি বলেন, সামনে ঈদ আসছে। ঈদ খুশির দিন। আমরা যেন এই ঈদ উদযাপন করতে পারি। সামনে পহেলা বৈশাখ আরো খুশির দিন। সব খুশি একত্রে আসছে। এর মধ্যে বালা-মুসিবত থেকে উদ্ধার পাবো সেটা যেন সবাই মিলে চিন্তা করি। একভাবে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, দেশের মধ্যে বালা-মুসিবতের জন্য সমষ্টিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কাজেই এগুলো অতিক্রম করতে না পারলে আমাদের কোনো মুক্তি নেই, রেহাই নেই।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের নিজের মনে কাজ করে যাই। এগুলো হলো বৈজ্ঞানিক তথ্য নিয়ে কাজ করার নির্ভর। কতগুলো অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করি, কতগুলো স্বপ্ন নিয়ে কাজ করি। দেশের মানুষ বিশেষ করে এটাতে এগিয়ে এসেছে। দেশ-বিদেশের মানুষ এটাতে বিশ্বাস করেছে। তারা উৎসাহিত হয়ে সারা দুনিয়ার মধ্যে সামাজিক ব্যবসা বলছি। এটা আমাদের মনে হয়েছে মানুষের জন্য মঙ্গল হবে। মানুষের মঙ্গলের জন্য আমরা এটা করছি। তিনি আরো বলেন, আমরা এদেশের অংশীদার, আমরা সবাই মিলেই দেশ। আমার অনুরোধ, মাহে রমজানের মাসে নিজেদের দিকে তাকিয়ে, নিজ নিজ
ভূমিকা পালন করি। আমরা যেটা করতে চাচ্ছিলাম, সেটা করতে পাচ্ছি কিনা? না করতে পারলে কীভাবে আমরা প্রতিবাদ জানাব, কীভাবে কথাগুলো শোনাতে পারব।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আসামিরা গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ আত্মসাৎ করে নানাজনের মধ্যে বণ্টন করেছেন। কোম্পানির ক্ষতি সাধন করেছেন। আদালত মামলাটির চার্জশিট গ্রহণ করেছেন। এদিকে, গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালক শাহজাহান অসুস্থ থাকায় আদালতে উপস্থিত না হয়ে সময়ের আবেদন করেন। আদালত সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার। মামলার বাকি আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, পরিচালক আশরাফুল হাসান, পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, এস. এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান এবং সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২২ সালের ৯ মে আসামি ড. ইউনূস ও নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে ১০৮তম বোর্ডসভায় ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখায় একটা ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের একদিন আগেই ৮ মে খোলা হয় ব্যাংক হিসাবটি। এই হিসাব দেখানো আছে সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টে, যা বাস্তবে অসম্ভব। এ রকম ভুয়া সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের শর্ত অনুযায়ী ও বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকম বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকটিতে ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করে। কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের আগেই তাদের প্রাপ্য অর্থ না জানিয়ে আসামিরা আত্মসাৎ করেন। তাই ২০২২ সালের ৩০ মে দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন।