Sylhet ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরমে চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে

টানা কয়েক দিনের তাপপ্রবাহে পুড়ছে পুরো দেশ। ঘরে-বাইরে অসহনীয় গরম, অতিষ্ঠ জনজীবন। তাপপ্রবাহ থেকে একটু স্বস্তি পেতে নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তরা ছুটছে ফ্যানের দোকানে। তাতে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ।
সাধারণ ফ্যানের সঙ্গে চার্জার ফ্যান কেনার হিড়িক পড়েছে। বাড়তি চাহিদার সুযোগে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আমাদানীকৃত বড় সাইজের বিভিন্ন চার্জার ফ্যানে নতুন করে দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। গত এক বছরের ব্যবধানে সাধারণ ফ্যানের দামও ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে।
তবে কিছু ব্র্যান্ড তাদের ফ্যানের দাম বাড়ায়নি। 

বাড়তি চাহিদার সুযোগে দাম বাড়িয়ে বিক্রির অভিযোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিক্রেতাদের জরিমানা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।  বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে খুচরায় দাম কিছুটা বেড়েছে।
তবে রাজধানীতে লোডশেডিং শুরু হলে চার্জার ফ্যানের চাহিদা ও দাম দুটিই আরো বাড়বে।  রাজধানীর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান ও শোরুম ঘুরে দেখা গেছে, ‘বাজারে দেশি-বিদেশি নানা ব্র্যান্ডের প্রতিটি চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে বাজারে চায়না কম্পানির বিভিন্ন ধরনের ছোট সাইজের হাতে বা ব্যাগে নিয়ে চলা যায়, এমন চার্জার ফ্যানও পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো সর্বনিম্ন ২৫০ থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে সিলিং ফ্যান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে ছয় হাজার ৫০০ টাকায়।
নিম্ন-মধ্যবিত্তদের মধ্যে অনেকেই রুম শীতল রাখতে এয়ারকুলার কিনছে। সাইজভেদে বাজারে ১০ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকায় এয়ারকুলার বিক্রি হচ্ছে। 

রাজধানীর উত্তর বাড্ডার রিজডেল মার্কেটের খান ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী মো. বশির খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার দেশি ব্র্যান্ডের ফ্যান ও চায়না ফ্যান সমান তালেই বিক্রি হচ্ছে। রাজাধানীতে বিদ্যুতের কোনো সমস্যা না থাকায় চার্জার ফ্যানের তুলনায় সিলিং ও টেবিল ফ্যান বেশি বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে ট্যাবিল ফ্যান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকায়। ভালো মানের চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৮০০ থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। সিলিং ফ্যান সাইজ ও মানভেদে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৯০০ থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। গত বছরের তুলনায় সব ধরনের ফ্যানের দাম এবার কিছুটা বাড়তি।’ রাজধানীর পল্টন এলাকায় একটি ইলেকট্রনিক পণ্যের শোরুমের বিক্রয়কর্মী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাধারণত প্রতিবছর গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই থেকে তিন মাস ফ্যান বিক্রি হয়। এ বছর যেহেতু রাজধানীতে কোনো লোডশেডিং নেই, তাই রিচার্জেবল ফ্যানের চাহিদা গতবছরের তুলনায় অনেকটাই কম। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রিচার্জেবল ফ্যান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকায়। এখন প্রচুর সিলিং ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে।’বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুহুল আমীন বলেন, ‘এখন তো ঢাকায় লোডশেডিং নেই। গরমের কারণে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানো অন্যায়। ভোক্তা অধিদপ্তর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে। এতে আমাদের আপত্তি নেই।’রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায় ওয়ালটন শোরুমের ম্যানেজার মোস্তফা কামাল সোহাগ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ বছর সাধারণ ফ্যানের মধ্যে স্ট্যান্ড ফ্যানের চাহিদা বেশি। তিন হাজার টাকা থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত স্ট্যান্ড ফ্যান বিক্রি হচ্ছে। চার্জার ফ্যান ও সিলিং ফ্যানের বিক্রি বেড়েছে। সিলিং ফ্যান তিন হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। চার্জার ফ্যান দুই হাজার ৪০০ থেকে ছয় হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে এসির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে এয়ারকুলারের চাহিদা কমে গেছে।’

ফ্যানের বাজারে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশীয় প্রতিষ্ঠান আরএফএল গ্রুপ। ভিশন ও ক্লিক নামে তাদের ফ্যানের দুটি ব্র্যান্ড রয়েছে। প্রচলিত ফ্যানের পাশাপাশি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বিএলডিসি প্রযুক্তির ফ্যানও বিক্রি করছে তারা। জানতে চাইলে কম্পানিটির জনসংযোগ বিভাগের প্রধান তৌহিদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি বাইরেও ভিশন ও ক্লিক ব্র্যান্ডের সব ধরনের ফ্যানের চাহিদা অনেক বেড়েছে। চলতি বছর নতুন করে দাম বাড়ানো হয়নি, আগের দামেই বাজারে ফ্যান বিক্রি হচ্ছে।’

ফ্যান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, দেশে সিলিং ফ্যানের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া কয়েক বছর ধরে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় রিচার্জেবল টেবিল এবং ওয়াল ফ্যানের বিক্রিও বেড়েছে। এ ছাড়া টেবিল, স্ট্যান্ড, এগজস্ট, মেগাসহ প্রায় সব ধরনের ফ্যান দেশেই তৈরি হচ্ছে। প্রতিবছর ফ্যানের ব্যবসা বাড়ছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে। যদিও দুই বছর ধরে অর্থনৈতিক সংকটে অনেক কম্পানির ফ্যান বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম হয়েছে। তবে বাংলাদেশের ফ্যানের বাজার সম্ভাবনাময়।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

নিরীহ কারও নামে মামলা হলে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রত্যাহার: আইজিপি

গরমে চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে

প্রকাশের সময় : ০৮:৩৯:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
টানা কয়েক দিনের তাপপ্রবাহে পুড়ছে পুরো দেশ। ঘরে-বাইরে অসহনীয় গরম, অতিষ্ঠ জনজীবন। তাপপ্রবাহ থেকে একটু স্বস্তি পেতে নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তরা ছুটছে ফ্যানের দোকানে। তাতে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ।
সাধারণ ফ্যানের সঙ্গে চার্জার ফ্যান কেনার হিড়িক পড়েছে। বাড়তি চাহিদার সুযোগে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আমাদানীকৃত বড় সাইজের বিভিন্ন চার্জার ফ্যানে নতুন করে দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। গত এক বছরের ব্যবধানে সাধারণ ফ্যানের দামও ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে।
তবে কিছু ব্র্যান্ড তাদের ফ্যানের দাম বাড়ায়নি। 

বাড়তি চাহিদার সুযোগে দাম বাড়িয়ে বিক্রির অভিযোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিক্রেতাদের জরিমানা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।  বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে খুচরায় দাম কিছুটা বেড়েছে।
তবে রাজধানীতে লোডশেডিং শুরু হলে চার্জার ফ্যানের চাহিদা ও দাম দুটিই আরো বাড়বে।  রাজধানীর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান ও শোরুম ঘুরে দেখা গেছে, ‘বাজারে দেশি-বিদেশি নানা ব্র্যান্ডের প্রতিটি চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে বাজারে চায়না কম্পানির বিভিন্ন ধরনের ছোট সাইজের হাতে বা ব্যাগে নিয়ে চলা যায়, এমন চার্জার ফ্যানও পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো সর্বনিম্ন ২৫০ থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে সিলিং ফ্যান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে ছয় হাজার ৫০০ টাকায়।
নিম্ন-মধ্যবিত্তদের মধ্যে অনেকেই রুম শীতল রাখতে এয়ারকুলার কিনছে। সাইজভেদে বাজারে ১০ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকায় এয়ারকুলার বিক্রি হচ্ছে। 

রাজধানীর উত্তর বাড্ডার রিজডেল মার্কেটের খান ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী মো. বশির খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার দেশি ব্র্যান্ডের ফ্যান ও চায়না ফ্যান সমান তালেই বিক্রি হচ্ছে। রাজাধানীতে বিদ্যুতের কোনো সমস্যা না থাকায় চার্জার ফ্যানের তুলনায় সিলিং ও টেবিল ফ্যান বেশি বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে ট্যাবিল ফ্যান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকায়। ভালো মানের চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৮০০ থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। সিলিং ফ্যান সাইজ ও মানভেদে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৯০০ থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। গত বছরের তুলনায় সব ধরনের ফ্যানের দাম এবার কিছুটা বাড়তি।’ রাজধানীর পল্টন এলাকায় একটি ইলেকট্রনিক পণ্যের শোরুমের বিক্রয়কর্মী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাধারণত প্রতিবছর গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই থেকে তিন মাস ফ্যান বিক্রি হয়। এ বছর যেহেতু রাজধানীতে কোনো লোডশেডিং নেই, তাই রিচার্জেবল ফ্যানের চাহিদা গতবছরের তুলনায় অনেকটাই কম। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রিচার্জেবল ফ্যান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকায়। এখন প্রচুর সিলিং ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে।’বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুহুল আমীন বলেন, ‘এখন তো ঢাকায় লোডশেডিং নেই। গরমের কারণে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানো অন্যায়। ভোক্তা অধিদপ্তর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে। এতে আমাদের আপত্তি নেই।’রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায় ওয়ালটন শোরুমের ম্যানেজার মোস্তফা কামাল সোহাগ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ বছর সাধারণ ফ্যানের মধ্যে স্ট্যান্ড ফ্যানের চাহিদা বেশি। তিন হাজার টাকা থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত স্ট্যান্ড ফ্যান বিক্রি হচ্ছে। চার্জার ফ্যান ও সিলিং ফ্যানের বিক্রি বেড়েছে। সিলিং ফ্যান তিন হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। চার্জার ফ্যান দুই হাজার ৪০০ থেকে ছয় হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে এসির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে এয়ারকুলারের চাহিদা কমে গেছে।’

ফ্যানের বাজারে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশীয় প্রতিষ্ঠান আরএফএল গ্রুপ। ভিশন ও ক্লিক নামে তাদের ফ্যানের দুটি ব্র্যান্ড রয়েছে। প্রচলিত ফ্যানের পাশাপাশি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বিএলডিসি প্রযুক্তির ফ্যানও বিক্রি করছে তারা। জানতে চাইলে কম্পানিটির জনসংযোগ বিভাগের প্রধান তৌহিদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি বাইরেও ভিশন ও ক্লিক ব্র্যান্ডের সব ধরনের ফ্যানের চাহিদা অনেক বেড়েছে। চলতি বছর নতুন করে দাম বাড়ানো হয়নি, আগের দামেই বাজারে ফ্যান বিক্রি হচ্ছে।’

ফ্যান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, দেশে সিলিং ফ্যানের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া কয়েক বছর ধরে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় রিচার্জেবল টেবিল এবং ওয়াল ফ্যানের বিক্রিও বেড়েছে। এ ছাড়া টেবিল, স্ট্যান্ড, এগজস্ট, মেগাসহ প্রায় সব ধরনের ফ্যান দেশেই তৈরি হচ্ছে। প্রতিবছর ফ্যানের ব্যবসা বাড়ছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে। যদিও দুই বছর ধরে অর্থনৈতিক সংকটে অনেক কম্পানির ফ্যান বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম হয়েছে। তবে বাংলাদেশের ফ্যানের বাজার সম্ভাবনাময়।