Sylhet ০৪:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক সম্মানী ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা মাসে ২০ হাজার টাকা করে সম্মানী পান।

সচিবালয়ে আজ মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির’ বৈঠকে সম্মানী বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মানী বৃদ্ধির প্রস্তাব তুলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, যাঁরা দেশের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করেছেন এবং দেশকে স্বাধীন করেছেন, তাঁরা যেন একটু ভালো থাকেন, সে কারণে সম্মানীটা ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করতে চান।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে দুই লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। প্রস্তাব অনুমোদিত হলে তাঁদের জন্য আরও ২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়বে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে। সে ক্ষেত্রে এ খাতে মোট ব্যয় দাঁড়াবে সাত হাজার ২০ কোটি টাকা।

২০২১ সালের জুলাই থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ২০ হাজার টাকা করে সম্মানী পেয়ে আসছেন। তার আগে এ সম্মানী ছিল ১২ হাজার টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী আট হাজার টাকা বাড়ানো হয়। মাসিক সম্মানীর পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের জন্য ৩০ হাজার ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ করছে সরকার।

আজকের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতার পরিমাণ বাড়ছে না। তবে ভাতাভোগীর আওতা এক লাখ করে বাড়তে পারে। বর্তমানে ৫৮ লাখ ১ হাজার বয়স্ক ব্যক্তি ভাতা পান। তাঁদের জন্য চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। আর ২৫ লাখ ৭৫ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতার জন্য বরাদ্দ ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। বয়স্ক ভাতা বর্তমানে ৬০০ টাকা এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের ভাতা ৫৫০ টাকা।

আগামী অর্থবছরে নতুন করে দুই হাজার হিজড়া ও বেদে যুক্ত হতে পারে। বর্তমানে ৬৫ হাজার হিজড়া ও বেদে সম্প্রদায়ের জন্য বাজেটে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ ছাড়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আগামী অর্থবছরেও চলমান থাকবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও জন্মগত হৃদ্‌রোগীদের জন্য আর্থিক সহায়তা কার্যক্রমও চলমান থাকবে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যাপারে বৈঠকে অংশ নেওয়া সবার মতামত সংযুক্ত করে ঈদের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সারসংক্ষেপ পাঠাবেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় যে মতামত দেবে, তা–ই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কর্মসূচি আছে ১১৫টি, আগামী অর্থবছরেও তা–ই থাকবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম খাতে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

সূত্রগুলো জানায়, আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মোট বরাদ্দ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে রাখা হবে। আর বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সবার দাবি পূরণে তিনি সচেষ্ট থাকবেন।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি বর্তমানে যে পরিমাণে চাপে আছে, সরকারকে বুঝেশুনে জনগণের কাছ থেকে পাওয়া করের অর্থ খরচ করা উচিত; বিশেষ করে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপ আগামী অর্থবছরের জন্যও প্রযোজ্য।’

বৈঠকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মণি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী নাজমুল হাসান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব মো. কামরুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব

প্রকাশের সময় : ০২:৪৪:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০২৪

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক সম্মানী ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা মাসে ২০ হাজার টাকা করে সম্মানী পান।

সচিবালয়ে আজ মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির’ বৈঠকে সম্মানী বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মানী বৃদ্ধির প্রস্তাব তুলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, যাঁরা দেশের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করেছেন এবং দেশকে স্বাধীন করেছেন, তাঁরা যেন একটু ভালো থাকেন, সে কারণে সম্মানীটা ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করতে চান।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে দুই লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। প্রস্তাব অনুমোদিত হলে তাঁদের জন্য আরও ২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়বে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে। সে ক্ষেত্রে এ খাতে মোট ব্যয় দাঁড়াবে সাত হাজার ২০ কোটি টাকা।

২০২১ সালের জুলাই থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ২০ হাজার টাকা করে সম্মানী পেয়ে আসছেন। তার আগে এ সম্মানী ছিল ১২ হাজার টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী আট হাজার টাকা বাড়ানো হয়। মাসিক সম্মানীর পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের জন্য ৩০ হাজার ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ করছে সরকার।

আজকের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতার পরিমাণ বাড়ছে না। তবে ভাতাভোগীর আওতা এক লাখ করে বাড়তে পারে। বর্তমানে ৫৮ লাখ ১ হাজার বয়স্ক ব্যক্তি ভাতা পান। তাঁদের জন্য চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। আর ২৫ লাখ ৭৫ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতার জন্য বরাদ্দ ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। বয়স্ক ভাতা বর্তমানে ৬০০ টাকা এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের ভাতা ৫৫০ টাকা।

আগামী অর্থবছরে নতুন করে দুই হাজার হিজড়া ও বেদে যুক্ত হতে পারে। বর্তমানে ৬৫ হাজার হিজড়া ও বেদে সম্প্রদায়ের জন্য বাজেটে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ ছাড়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আগামী অর্থবছরেও চলমান থাকবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও জন্মগত হৃদ্‌রোগীদের জন্য আর্থিক সহায়তা কার্যক্রমও চলমান থাকবে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যাপারে বৈঠকে অংশ নেওয়া সবার মতামত সংযুক্ত করে ঈদের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সারসংক্ষেপ পাঠাবেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় যে মতামত দেবে, তা–ই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কর্মসূচি আছে ১১৫টি, আগামী অর্থবছরেও তা–ই থাকবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম খাতে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

সূত্রগুলো জানায়, আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মোট বরাদ্দ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে রাখা হবে। আর বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সবার দাবি পূরণে তিনি সচেষ্ট থাকবেন।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি বর্তমানে যে পরিমাণে চাপে আছে, সরকারকে বুঝেশুনে জনগণের কাছ থেকে পাওয়া করের অর্থ খরচ করা উচিত; বিশেষ করে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপ আগামী অর্থবছরের জন্যও প্রযোজ্য।’

বৈঠকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মণি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী নাজমুল হাসান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব মো. কামরুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।