বিশেষ প্রতিনিধি::
দিরাই-শাল্লায় প্রথম ধাপে হচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। আগামী আট মে এই উপজেলায় ভোট গ্রহণ। মনোনয়ন জমা দেবার শেষ দিন সোমবার পর্যন্ত দিরাইয়ে পাঁচ ও শাল্লায় চার প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে দিরাইয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল চার জন এবং শাল্লায় আওয়ামী লীগ ঘরানার তিন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। অন্যদিকে, দুই উপজেলায়ই বিএনপির দুই দায়িত্বশীল নেতা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। বিএনপি ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে না গেলেও দলের পদধারীরা একক প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে থাকায় সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন তারা।
প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেন গ্রপ্তের নির্বাচনী এলাকা অপেক্ষাকৃত রাজনীতি সচেতন হিসেবেই পরিচিত।
দিরাই উপজেলায় ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ৫২৫ জন ভোটার। এরমধ্যে পুরুষ ৯৭ হাজার ৬৮৭ জন এবং নারী ৯৫ হাজার ৮৩৮ জন। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৭৪টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ভোটকক্ষ রয়েছে ৪১৮টি। এরমধ্যে স্থায়ী ৪০১ এবং অস্থায়ী ১৭টি।
শাল্লা উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ৯১ হাজার ৩৬৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৪৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং নারী ৪৫ হাজার ৪১২ জন। উপজেলার ৪ ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৩৭টি। ভোটকক্ষ ২১৩টি। এরমধ্যে স্থায়ী ১৯৬টি এবং অস্থায়ী ১৭ টি।
দিরাই উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান মনোনয়ন জমা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আজাদুল ইসলাম রতন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায়, মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. রীপা সিনহা এবং উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গোলাফ মিয়া।
গোলাফ মিয়া মনোনয়ন জমা দেবার সময় প্রস্তাবক ও সমর্থনকারী হিসেবে বিএনপির দুই নেতার নাম দিয়েছেন, এরা হলেন সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রতন কুমার দাস ও আব্দুল আউয়াল।
প্রদীপ রায়ের প্রস্তাবক ও সমর্থনকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন ও দিরাই পৌর এলাকার নয়া বাঘবাড়ি’র বাসিন্দা ফুল মিয়া।
রঞ্জন রায়ের প্রস্তাবক ও সমর্থক দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ মিয়া এবং আওয়ামী লীগ নেতা নগেন্দ্র কুমার দাস।
রীপা সিনহা’র প্রস্তাবক ও সমর্থক দিরাই উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুর আলম চৌধুরী ও গনতন্ত্রী পার্টির নেতা অব. অধ্যক্ষ মিহির রঞ্জন দাস।
আজাদুল ইসলামের রতনের প্রস্তাবক ও সমর্থক যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম জুয়েল ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শামীম আহমদ।
গোলাফ মিয়া বললেন, দলের কর্মীদের দাঁড়ানোর জায়গা নেই। তারা মনে করছে আমি নির্বাচিত হলে ছোট হলেও দলের একটি দাঁড়ানোর জায়গা হবে। এলাকার সাবেক এমপি নাছির উদ্দিন চৌধুরী কেন্দ্রীয় নেতা। নির্বাচনে দল অংশ না নেওয়ায় তিনি নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন না। তবে নাছির চৌধুরী’র দোয়া রয়েছে তার পক্ষে জানালেন তিনি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় বললেন, সামান্য কয়েকটি ভোটে বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হেরেছি আমি। এবার তৃণমূলের কর্মীরা আমার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। ভোটাররাও মনে করেন, এমপি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একই ধারার হলে উন্নয়ন করতে সুবিধা হয়। এজন্য গেল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ে এবার আমার অবস্থা ভালো।
অ্যাড. আজাদুল ইসলাম রতন বললেন, আমি দুর্নীতিমুক্ত, মামলা—মোকদ্দমা হয়রানি মুক্ত দিরাই গড়ার লক্ষ্যে নির্বাচন করতে এসেছি। আওয়ামী লীগের কেবল নয়, অন্য মতাদর্শের ভোটাররাও আমাকে সাহস দিচ্ছেন। রঞ্জন রায় এবং রীপা সিনহাও একই ধরণের মন্তব্য করলেন।
দিরাইয়ের একজন গণমাধ্যম কর্মী জানালেন, একই মতাদের্শের প্রার্থী চার জন, এরা সকলেই আওয়ামী লীগের নেতা। আওয়ামী ঘরানার ভোটে বিভক্তি ঘটবে। অন্যদিকে, বিএনপির একক প্রার্থী। ভোটাররা নানা হিসাব—নিকাশ কষছেন।
শাল্লা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অবনী মোহন দাস, আওয়ামী লীগ নেতা, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. দীপু রঞ্জন দাস এবং আওয়ামী লীগ নেতা এস এম শামীম, উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গনেন্দ্র চন্দ্র সরকার।
মনোনয়ন প্রদানের সময় অবনী মোহন দাসের প্রস্তাবক ও সমর্থক ছিলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থক অমৃত চক্রবর্তী ও করুণা সিন্ধু দাস।
দীপু রঞ্জন দাসের প্রস্তাবক ও সমর্থক আওয়ামী লীগের কর্মী লিপ্টন চন্দ্র দাস ও বিধু ভূষণ দাস।
এসএম শামীমের প্রস্তাবক এবং সমর্থকও স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ কর্মী বলে জানিয়েছেন এলাকার লোকজন।
অন্যদিকে, গনেন্দ্র চন্দ্র সরকারের প্রস্তাবক ও সমর্থক যুবদল ও বিএনপি কর্মী আবু সালেহ ও জুনেদ আহমদ।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি গণেন্দ্র চন্দ্র সরকার বললেন, কেবল প্রস্তাবক সমর্থক নয়। আমার দলের শতভাগ নেতা কর্মী আমার পক্ষে ভোটের মাঠে আছে। অন্যদলের দায়িত্বশীলরাও আমাকে সহযোগিতা করছেন।
প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অবনী মোহন দাস বললেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সকল কর্মীই আমার ঘোড়া মার্কার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। সামাজিক ব্যক্তিত্ব, সালিস ব্যক্তিত্বসহ অন্য দলের অনেকের সহযোগিতাও পাব। দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হলেও আমার কোন সমস্যা হবে না।
আওয়ামী লীগ নেতা দীপু রঞ্জন দাস বললেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন চৌধুরীসহ দলের বেশিরভাগ নেতা আমার পক্ষে। দলের তৃণমূলের কর্মীরাও আমার পক্ষেই থাকবে।
নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করে চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম শামীম বললেন, দলের (আওয়ামী লীগের) পরিচয়ে নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছি। দলীয় কর্মী ও ভোটারের সমর্থনের পাশাপাশি অন্যদের সমর্থন নিয়ে এগুতে চাই।
এই উপজেলার আওয়ামী লীগের সমর্থক একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বললেন, শাল্লা উপজেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের অবনী মোহন দাস এবার জনপ্রিয় প্রার্থী। তবে দলে বিভেদ এবং বিএনপির একক প্রার্থী থাকায় লড়াই হবে বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গেই।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখ্ত পলিন বললেন, দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেকই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবেন প্রার্থীরা। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে দলের যোগ্য প্রার্থীরা অবশ্যই নির্বাচিত হয়ে আসবেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন বললেন, জাতীয়তাবাদী দল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে যারা প্রার্থী হচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দিরাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মিঠুন মল্লিক ও শাল্লা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহ্ মো. এনামুল কবির জানালেন, সোমবার বিকাল চার টা পর্যন্ত দিরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচ, ভাইস চেয়ারম্যান চার এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিন এবং শাল্লায় চেয়ারম্যান পদে চার, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নয় এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। রাত ১২ টা পর্যন্ত অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল করা যাবে বলে জানান এই দুই কর্মকর্তা।
প্রথম ধাপের নির্বাচনের মনোনয়ন যাচাই—বাছাই ১৭ এপ্রিল, ২২ এপ্রিল প্রার্থীতা প্রত্যাহার, ২৩ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দ এবং আট মে ভোট গ্রহণ।
সুত্র-সুনামগঞ্জের খবর