Sylhet ০৫:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আনার হত্যার মাষ্টারমাইন্ড শাহীন যা বললেন

 

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পরিকল্পিত ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় এমপি আনারের বাল্যবন্ধু এবং ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীনকে মূলহোতা বলছে ডিবি। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত শাহীন। তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) একটি গণমাধ্যমে মোবাইল ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি জানান।

 

শাহিন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি সেখানে ছিলাম না, আমি ভারতেও ছিলাম না। আমি আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে কারও সাথে কথা না বলতে। মানুষ বাংলাদেশে অনেক কথাই বলেন। তাদের কাছে যদি কোনো প্রমাণ থাকে, তাহলে তাদের দেখাতে বলেন। পুলিশের কাছে যদি কোনো তথ্য-প্রমাণ থাকে তাহলে তারা দেখাক। আমাকে বলা হচ্ছে এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।

‘কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের বি-ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটটি যেটিতে এমপি আনার খুন হয়েছেন সেটি আপনি ভাড়া নিয়েছেন’ এই অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ভাড়া নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে এ ধরনের কাজ করব! আমি এতই স্টুপিড যে এই ধরনের কাজ করলে আমার ফ্ল্যাটে করব?’

‘এমপি আনারকে হত্যা করতে আপনি খুনিদের ৫ কোটি টাকা দিয়েছেন কি না?’ প্রশ্নের জবাবে শাহীন বলেন, ‘আমার পাসপোর্টের রেকর্ড দেখুন… যে আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমাকে বলা হচ্ছে আমি নাকি ৫ কোটি টাকা দিয়েছি। কোথায় পেলাম আমি ৫ কোট টাকা? আমি কীভাবে টাকা দিয়েছি? এখন এসব কথা শোনা ছাড়া আমার আর কী করার আছে। ঘটনা যখন ঘটে, আমি তখন বাংলাদেশে ছিলাম। আমি পেপারে এই ঘটনা দেখেছি।’

 

এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে, দুই থেকে তিন মাস আগে ঢাকার গুলশান ও বসুন্ধরায় এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল কিলিং মিশন পরিকল্পনা পরখ করতে কলকাতায় যান শাহীন, সিয়াম ও জিহাদ।

 

কলকাতা পুলিশের বরাত দিয়ে ডিবি জানায়, চাল ও ডাবুর পণ্য নিয়ে ব্যবসার কাজের কথা বলে ২৫ এপ্রিল ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন আক্তারুজ্জামান। ৩০ এপ্রিল বিকেলে ফ্ল্যাটের চাবি বুঝে নেন তিনি। পরদিন ১ মে ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ করেন শাহীন। ১১ মাস ওই ফ্ল্যাটে থাকার ঘোষণা দিয়ে ভাড়াটিয়া ফর্মে স্বাক্ষরও করেন তিনি। তার সঙ্গে আমানুল্লাহ সাইদ ও শিলাস্তি রহমান থাকবেন বলেও উল্লেখ করা হয় ভাড়াটিয়া তথ্য ফর্মে। এটি ভাড়া নিতে সহযোগিতা করেন বিরেন ভদ্র নামে এক ব্যক্তি। এরপর গত ১০ মে ঢাকায় ফেরেন শাহীন।

 

ডিবি জানায়, কলকাতা পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ, পারিপার্শ্বিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে শাহীনসহ কিলিং মিশনে সাতজনের প্রাথমিক সম্পৃক্ততা পেয়েছে।

 

শুক্রবার (২৪ মে) এমপি আনারের হত্যায় জড়িত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় থাকা একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা খুনের দুইটি মোটিভের কথা জানিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে- চরমপন্থীদের পোষা রাগ, স্বর্ণ চোরাচালানের আধিপত্য নেওয়া।

 

এমপি আনোয়ারুল আজিম ওই অঞ্চলের চরমপন্থীদের বিভিন্ন সময় ক্রসফায়ারসহ নানাভাবে ‘শায়েস্তা’ করিয়েছেন। এমপির ওপর পোষা রাগ ছিল চরমপন্থীদের। আর এমপি আনার হত্যার প্রধান খুনি শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-জনযুদ্ধ) অন্যতম শীর্ষ নেতা। এ ছাড়া কলকাতায় স্বর্ণ চোরাচালানের আধিপত্য ছিল সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের। তাকে সরিয়ে না দিলে স্বর্ণ চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারছিলেন না শাহীন। তাই কলকাতায় স্বর্ণ চোরাচালানের আধিপত্য নিতেই এমপিকে হত্যা করান শাহীন। কলকাতার বড় একটা স্বর্ণ পার্টির সঙ্গে মিটিং করানো হবে এই কথা বলে শিমুল, এমপি আনারকে কলকাতা নিয়ে যান। একজনের কাছে অনেক স্বর্ণের বিস্কুট আছে এ কথা বললেই এমপি আনার সেখানে যেতে রাজি হন। অন্যদিকে, শাহীন এমপি আনারের কাছে ৫০ কোটি টাকা পেতেন। সেই টাকা এমপি আনার দিচ্ছিলেন না।

 

অন্যদিকে, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভায় শাহীনের অবৈধ সাম্রাজ্যের সন্ধান পাওয়া গেছে। হুন্ডি ও স্বর্ণ চোরাচালান করে কোটচাঁদপুরে এ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন তিনি। কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামে চল্লিশ বিঘা জমির ওপর শাহীনের একটি রিসোর্ট আছে। ঠিকাদারি কাজে প্রতিবছর দেশে এসে ৬ মাস অবস্থান করেন তিনি, থাকেন এই রিসোর্টেই। রিসোর্টের ভিতরে সুইমিং পুল, চা বাগান, গরু-ছাগলের ফার্ম, জার্মান শেফার্ড, গলফ কোর্স ও বিভিন্ন ফলের বাগান রয়েছে। আছে কঠোর নিরাপত্তা, সিসি ক্যামরাসহ তারকাঁটা বেষ্টনি। শাহীন দেশে অবস্থানকালে এই রিসোর্টে সুন্দরী নারীদের আনাগোনা দেখা যায়। এ সময় রিসোর্টে ভিআইপি ও ভিভিআইপিরা সময় কাটাতে আসেন। এই রিসোর্টে সাধারণ মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জগন্নাথপুর যুব জমিয়তের নবনির্বাচিত কমিটির পরিচিতি শপথ অনুষ্ঠিত

আনার হত্যার মাষ্টারমাইন্ড শাহীন যা বললেন

প্রকাশের সময় : ১১:৫৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪

 

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পরিকল্পিত ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় এমপি আনারের বাল্যবন্ধু এবং ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীনকে মূলহোতা বলছে ডিবি। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত শাহীন। তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) একটি গণমাধ্যমে মোবাইল ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি জানান।

 

শাহিন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি সেখানে ছিলাম না, আমি ভারতেও ছিলাম না। আমি আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে কারও সাথে কথা না বলতে। মানুষ বাংলাদেশে অনেক কথাই বলেন। তাদের কাছে যদি কোনো প্রমাণ থাকে, তাহলে তাদের দেখাতে বলেন। পুলিশের কাছে যদি কোনো তথ্য-প্রমাণ থাকে তাহলে তারা দেখাক। আমাকে বলা হচ্ছে এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।

‘কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের বি-ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটটি যেটিতে এমপি আনার খুন হয়েছেন সেটি আপনি ভাড়া নিয়েছেন’ এই অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ভাড়া নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে এ ধরনের কাজ করব! আমি এতই স্টুপিড যে এই ধরনের কাজ করলে আমার ফ্ল্যাটে করব?’

‘এমপি আনারকে হত্যা করতে আপনি খুনিদের ৫ কোটি টাকা দিয়েছেন কি না?’ প্রশ্নের জবাবে শাহীন বলেন, ‘আমার পাসপোর্টের রেকর্ড দেখুন… যে আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমাকে বলা হচ্ছে আমি নাকি ৫ কোটি টাকা দিয়েছি। কোথায় পেলাম আমি ৫ কোট টাকা? আমি কীভাবে টাকা দিয়েছি? এখন এসব কথা শোনা ছাড়া আমার আর কী করার আছে। ঘটনা যখন ঘটে, আমি তখন বাংলাদেশে ছিলাম। আমি পেপারে এই ঘটনা দেখেছি।’

 

এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে, দুই থেকে তিন মাস আগে ঢাকার গুলশান ও বসুন্ধরায় এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল কিলিং মিশন পরিকল্পনা পরখ করতে কলকাতায় যান শাহীন, সিয়াম ও জিহাদ।

 

কলকাতা পুলিশের বরাত দিয়ে ডিবি জানায়, চাল ও ডাবুর পণ্য নিয়ে ব্যবসার কাজের কথা বলে ২৫ এপ্রিল ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন আক্তারুজ্জামান। ৩০ এপ্রিল বিকেলে ফ্ল্যাটের চাবি বুঝে নেন তিনি। পরদিন ১ মে ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ করেন শাহীন। ১১ মাস ওই ফ্ল্যাটে থাকার ঘোষণা দিয়ে ভাড়াটিয়া ফর্মে স্বাক্ষরও করেন তিনি। তার সঙ্গে আমানুল্লাহ সাইদ ও শিলাস্তি রহমান থাকবেন বলেও উল্লেখ করা হয় ভাড়াটিয়া তথ্য ফর্মে। এটি ভাড়া নিতে সহযোগিতা করেন বিরেন ভদ্র নামে এক ব্যক্তি। এরপর গত ১০ মে ঢাকায় ফেরেন শাহীন।

 

ডিবি জানায়, কলকাতা পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ, পারিপার্শ্বিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে শাহীনসহ কিলিং মিশনে সাতজনের প্রাথমিক সম্পৃক্ততা পেয়েছে।

 

শুক্রবার (২৪ মে) এমপি আনারের হত্যায় জড়িত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় থাকা একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা খুনের দুইটি মোটিভের কথা জানিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে- চরমপন্থীদের পোষা রাগ, স্বর্ণ চোরাচালানের আধিপত্য নেওয়া।

 

এমপি আনোয়ারুল আজিম ওই অঞ্চলের চরমপন্থীদের বিভিন্ন সময় ক্রসফায়ারসহ নানাভাবে ‘শায়েস্তা’ করিয়েছেন। এমপির ওপর পোষা রাগ ছিল চরমপন্থীদের। আর এমপি আনার হত্যার প্রধান খুনি শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-জনযুদ্ধ) অন্যতম শীর্ষ নেতা। এ ছাড়া কলকাতায় স্বর্ণ চোরাচালানের আধিপত্য ছিল সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের। তাকে সরিয়ে না দিলে স্বর্ণ চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারছিলেন না শাহীন। তাই কলকাতায় স্বর্ণ চোরাচালানের আধিপত্য নিতেই এমপিকে হত্যা করান শাহীন। কলকাতার বড় একটা স্বর্ণ পার্টির সঙ্গে মিটিং করানো হবে এই কথা বলে শিমুল, এমপি আনারকে কলকাতা নিয়ে যান। একজনের কাছে অনেক স্বর্ণের বিস্কুট আছে এ কথা বললেই এমপি আনার সেখানে যেতে রাজি হন। অন্যদিকে, শাহীন এমপি আনারের কাছে ৫০ কোটি টাকা পেতেন। সেই টাকা এমপি আনার দিচ্ছিলেন না।

 

অন্যদিকে, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভায় শাহীনের অবৈধ সাম্রাজ্যের সন্ধান পাওয়া গেছে। হুন্ডি ও স্বর্ণ চোরাচালান করে কোটচাঁদপুরে এ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন তিনি। কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামে চল্লিশ বিঘা জমির ওপর শাহীনের একটি রিসোর্ট আছে। ঠিকাদারি কাজে প্রতিবছর দেশে এসে ৬ মাস অবস্থান করেন তিনি, থাকেন এই রিসোর্টেই। রিসোর্টের ভিতরে সুইমিং পুল, চা বাগান, গরু-ছাগলের ফার্ম, জার্মান শেফার্ড, গলফ কোর্স ও বিভিন্ন ফলের বাগান রয়েছে। আছে কঠোর নিরাপত্তা, সিসি ক্যামরাসহ তারকাঁটা বেষ্টনি। শাহীন দেশে অবস্থানকালে এই রিসোর্টে সুন্দরী নারীদের আনাগোনা দেখা যায়। এ সময় রিসোর্টে ভিআইপি ও ভিভিআইপিরা সময় কাটাতে আসেন। এই রিসোর্টে সাধারণ মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।