সংশোধিত নতুন নির্বাচন বিধিমালা এবং নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের তফশিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় কমিশন সভায় তফশিল চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। ওই সভার পর দেড় শতাধিক উপজেলার তফশিল ঘোষণা হবে। এসব উপজেলায় আগামী ৪ মে ভোটগ্রহণ হবে। এদিকে উপজেলা নির্বাচনসংশ্লিষ্ট দুটি সংশোধিত বিধিমালার প্রজ্ঞাপন বুধবার জারি হয়েছে। তফশিল ঘোষিত উপজেলাগুলোতে এ বিধিমালা কার্যকর হবে। নতুন বিধি অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে প্রার্থীরা রঙিন পোস্টার ব্যবহার করতে পারবে। প্রতীক বরাদ্দের আগেই জনসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাতে পারবেন। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এবার চার ধাপে ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। আগামী ৪, ১১, ১৮ ও ২৫ মে ভোটগ্রহণ হবে। কিছু উপজেলা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবং বাকি উপজেলাগুলোতে কাগজের ব্যালটে ভোট হবে। কোন উপজেলায় ইভিএম ও কোনটিতে কাগজের ব্যালটে ভোট নেওয়া হবে তা কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হবে।
আজকের কমিশন সভায় প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফশিল চূড়ান্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। বুধবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, চারটি ধাপে উপজেলা নির্বাচন করার ঘোষণা আগেই দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
বৃহস্পতিবার কমিশনের সভা রয়েছে। আশা করি ওই সভায় প্রথম ধাপের উপজেলার তফশিল ঘোষণা হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা এবং নির্বাচন বিধিমালায় কিছু সংশোধনী এসেছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-চেয়ারম্যান পদে জামানত ১ লাখ টাকা এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হতে ভোটারদের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে।
এতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া সহজ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক প্রার্থীর ভোটার স্বাক্ষরসূচক সমর্থনের গরমিলে প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের ২৫০ জনের স্বাক্ষর নেওয়া কঠিন কাজ। এতে যে কাকে ভোট দেবে তা আগেই প্রকাশ হয়ে যায়। ভোটাররা স্বাক্ষর দিতে চায় না বলে অনেকেই জাল স্বাক্ষর জমা দেয়। এসব বিষয় চিন্তা করে কমিশন মনে করেছে স্বাক্ষর সংগ্রহ কঠিন কাজ। তাই এ বিধি সংশোধন করেছে।
দুই বিধিমালা সংশোধন : ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা’ এবং ‘উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা’ সংশোধন করে গতকাল গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। নতুন বিধি অনুযায়ী, উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ভোটার সমর্থন সূচক স্বাক্ষর জমা দিতে হবে না। মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে অনলাইনে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এক লাখ টাকা এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৫ হাজার টাকা জামানত নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের বিধিমালায় নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের একভাগের কম পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হতো। সংশোধিত বিধিমালায় ১৫ শতাংশ ভোট না পেলে ওই প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
নতুন বিধিতে চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যয় বাবদ অনধিক ২৫ লাখ টাকা এবং ‘মহিলা সদস্য’ পদে অনধিক ১ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
আচরণ বিধিমালায় প্রার্থীরা জনসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাতে পারবেন। প্রতীক বরাদ্দের পর অন্যান্য প্রচার চালাবেন। আগে ভোটগ্রহণের তিন সপ্তাহের আগে প্রচার চালাতে পারতেন না। এছাড়া প্রার্থীরা সাদা-কালোর পাশাপাশি রঙিন পোস্টার ও ব্যানার করতে পারবেন। এছাড়া নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত ও পুনরায় ভোটের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে ইসির ক্ষমতা স্পষ্ট করা হয়েছে।
নির্বাচনে রঙিন পোস্টার ব্যবহার প্রসঙ্গে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, অনেকেই অভিযোগ করছেন, প্রেসে সাদা-কালো পোস্টার ছাপানো কষ্টকর ও ব্যয়বহুল। বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রঙিন পোস্টার ছাপার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।